নদিয়ার ধানতলা কাণ্ডে অন্যতম বিচারক ছিলেন তিনি। সেই বিচার পর্ব চলার সময়েই তাঁর বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন রানাঘাটের গাংনাপুর এলাকার এক মহিলা। দীর্ঘ ন’বছর পরে সেই মামলায় সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। শনিবার, সেই মামলায় রানাঘাট এসিজেএম আদালতে এসে ‘আত্মসমর্পণ’ করলেন অভিযুক্ত বিচারক শ্যামল সেনগুপ্ত। প্রসঙ্গত গত নভেম্বর মাসে অবসর নিয়েছেন তিনি।
কলকাতা হাইকোর্ট থেকে দিন কয়েক আগেই অবশ্য এ ব্যাপারে আগাম জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন ওই বিচারক। এ দিন নিম্ন আদালতও সেই রায় বহাল রাখল। তাঁর আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, নিম্ন আদালতে এ দিন বেলবন্ড জমা দিতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ওই বিচারক। তিনি বলেন, “আইনি পরিভাষায় একেই আত্মসমর্পণ বলা হয়। তবে রানাঘাট আদালতও তাঁর আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে রানাঘাট ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে ধানতলায় গণধর্ষণের বিচার চলছিল। বিচারক ছিলেন শ্যামলবাবু। সেই সময়ে স্থানীয় গাংনাপুর এলাকার এক মাঝবয়সী মহিলা রানাঘাট থানায় অভিযোগ করেন, ওই বিচারক বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণ করেছেন তাঁকে। অভিযোগ পেয়েই ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মহিলাকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। কিন্তু রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল গিয়েও পরীক্ষা করাতে হঠাৎ আপত্তি জানান অভিযোগকারিনী। মহিলার পোশাক ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। রানাঘাট থানার পুলিশও শুরু করে তদন্ত। তবে গত ন’বছরে সেই মামলার চার্জশিট অবশ্য তৈরি করতে পারেনি পুলিশ। কেন?
নদিয়ার বর্তমান পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্রের ব্যাখ্যা, “আইনের নানান দিক খতিয়ে দেখে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। তাই সামান্য দেরি হয়েছে পুলিশের। তবে চার্জশিটে ওই বিচারককেই ধর্ষণে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”
শ্যামলবাবুর আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁর যুক্তি, “যে মামলায় চার্জশিট দাখিল করতেই ন’বছর লেগে যায় পুলিশের সে মামলায় অভিযোগ কতটা গুরুত্ব দেওয়ার যোগ্য তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়।” তাঁর দাবি, ঘটনাটি ‘সম্পূর্ণ সাজানো’। দিলীপবাবুর দাবি, “মহিলা স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। স্বামীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের জন্য এ ব্যাপারে আইনি সহায়তা চাইতে তিনি শ্যামলবাবুর কাছে যান। কিন্তু তেমন সাহায্য বা পরামর্শ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েই ওই কাজ করেছেন ওই মহিলা।”
মহিলার আইনজীবী করুণাকেতন সরকার অবশ্য দাবি করেছেন, “আশা করছি দেরিতে হলেও ওই মহিলা এ বার সুবিচার পাবেন।” |