বিনোদন অভাব অনেক, কদর থাকলেও
খোঁড়াচ্ছে ডুয়ার্সের সিনেমা-শিল্প

ট্রেনে এক রাত। বিমানে মাত্র পৌনে এক ঘণ্টা। কলকাতার ঘরের কাছেই ডুয়ার্সে চলে এলে মিলবে পাহাড়, অরণ্য, ঝর্না, পাহাড়ি নদী থেকে চা বাগান, বন্যপ্রাণ এবং সুন্দর আবহাওয়া। বাংলা ফিল্ম জগতের কাছে তাই ডুয়ার্সের কদর কম নয়। কিন্তু সমস্যা একটাই। পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা কার্যত নেই।
অবস্থা ঠিক কী রকম, তার উদাহরণ একটি ঘটনা থেকেই চমৎকার বোঝা যায়। ডুয়ার্সে একটি ট্যুর অপারেটর সংস্থার কর্তা দীপজ্যোতি চক্রবর্তী উত্তরবঙ্গে শ্যুটিং করতে আসা প্রযোজক, পরিচালকদের সাহায্য করেন। তিনি জানালেন, একটি বাংলা সিরিয়ালের শ্যুটিং হয়েছিল ডুয়ার্সের লাটাগুড়িতে। তাতে একটি ঝড়ের দৃশ্য ছিল। সেটে সেই হাওয়ার ঝড় তোলার জন্য কলকাতা থেকে ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয়েছিল সুবিশাল একটি দাঁড়ানো পাখা। দৃশ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পরও ট্রাক-সহ ফ্যানটি ১০ দিন পড়েছিল লাটাগুড়ির রিসর্ট চত্বরে। দীপজ্যোতিবাবু বলেন, “ওই একটি পাখা আনার জন্য মোট খরচ পড়েছিল ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।”
টলিউডের প্রযোজক, পরিচালকদের বক্তব্য, এই পরিকাঠামোটুকু উত্তরবঙ্গেই মিললে ডুয়ার্স আরও আকর্ষণীয় হত। সেক্ষেত্রে অর্থ ও পরিশ্রমের দু’য়েরই সাশ্রয় হত। তবে সম্প্রতি জেনারেটর, ক্রেন বা লাইটের মতো যন্ত্রপাতি শিলিগুড়িতে ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া যা পাওয়া যাচ্ছে, তা নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোনও একটি স্টুডিও-র মতো কিছু থাকলে সেখান থেকে সকলেই সাহায্য পেতেন। সোসাইটি ফর নর্থ বেঙ্গল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সম্পাদক এবং এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সূর্যকমল বণিক বলেন, “অনেকে আমার কাছে খোঁজখবর নেন। আমার কাছে যে ক্যামেরা আছে, প্রয়োজনে অনেকেই তা ভাড়া করে নিয়ে যান। কিন্তু পরিকাঠামো বলতে যা বোঝায়, তা নেই।”
লাটাগুড়িতে শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত অভিনেত্রী স্বস্তিকা। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি সিনেমার শ্যুটিংয়ের জন্য ডুয়ার্সে কাটালেন টানা কয়েকদিন। তাঁর কথায়, “আমি তো প্রায় উত্তরবঙ্গের নিত্যযাত্রী হয়ে গিয়েছি। বছরে অনেকবার করে আসতে হয়। কিন্তু সব সময়েই দেখি, কলাকুশলী থেকে সাধারণ কর্মীরা সকলেই কলকাতা থেকে আসেন।” ওই ছবির পরিচালক শঙ্কর দেবনাথ বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় যাবতীয় সরঞ্জাম ভাড়া করে এখানে নিয়ে আসতে হয়েছে। তার একটা বিপুল খরচ তো রয়েইছে। তা ছাড়া, সময়টাও একটা সমস্যা। ছোটখাটো একটা পরিকাঠামো থাকলে সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচত।” জলপাইগুড়ির বাসিন্দা পরিচালক রাজা পাল বলেন, “কলকাতা থেকে কলাকুশলী নিয়ে এলে যে দিন কাজ নেই, সেদিনের ব্যয়ও বহন করতে হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা হলে সেই সুবিধাটা থাকত। আমি অনেক সময়ে বন্ধুবান্ধবদের শিখিয়ে পড়িয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছি।” অল ইন্ডিয়া ফিল্ম এমপ্লয়িজ কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা ঘটক বলেন, “যেখানে শ্যুটিং হয়, সেখানে ৩০ শতাংশ স্থানীয় টেকনিসিয়ানদের নেওয়া উচিত। তবে উত্তরবঙ্গে দক্ষ ও অভিজ্ঞ টেকনিসিয়ানদের অভাব রয়েছে।” তাঁর আশ্বাস, “উত্তরবঙ্গে ধারাবাহিকভাবে শ্যুটিং হলে আমরা এখানেও আলাদা সংগঠন তৈরির কথা চিন্তা করব।”
তবে এখানে ধারাবাহিকভাবে শ্যুটিং হলে স্বাভাবিকভাবেই পরিকাঠামো গড়ে উঠবে বলে মনে করেন জলপাইগুড়ি সিনে সোসাইটির সম্পাদক উদয়ন সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “বাংলা ছবি এখন অনেকক্ষেত্রেই বিদেশে শ্যুটিং হয়। ডুয়ার্সের অরণ্য-পাহাড়ের সুযোগ টলিউডের সামান্য কয়েকজন প্রযোজক-পরিচালকই নেন। যদি এখানে টলিউডের কাজ আরও বেশি হত, তা হলে বাজারের নিয়মেই এখানে একটা পরিকাঠামো গড়ে উঠতে পারত। প্রশিক্ষিত কলাকুশলীও থাকতেন।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, “ব্যাপারটা অনেকটা টাকা আগে না ব্যাঙ্ক আগের মতো। চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিটি জিনিস একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত। উত্তরবঙ্গে এ কাজ শিখতে আগ্রহী ছেলেমেয়ের অভাব নেই। শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ির মতো শহরে কোনও প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে কাজের সুবিধা হত।” তিনি বলেন, “ঠিক পরিকাঠামো তৈরি হলে ছবির বাজেটও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাবে।”
তবু কলকাতার নাগালের মধ্যে বলে পাহাড়, অরণ্যঘেরা ডুয়ার্সের কদর যথেষ্ট। টলিউডের কলাকুশলীরা জানান, উত্তরবঙ্গ যাওয়ার খরচ কম, এটা একটা বড় সুবিধা। কলকাতায় মেগাসিরিয়াল করতে করতেও যে কারণে কেউ ডুয়ার্সে অন্য শ্যুটিংয়ের জন্য সময় বার করে নিতে পারেন। অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “পর্যাপ্ত উড়ান থাকলে ভাল হয়, বিশেষ করে রাতের উড়ান।”
কিন্তু সরকারি তরফে শিলিগুড়ির লাগোয়া এলাকায় ফিল্ম সিটি হওয়ার কথা ছিল, তার কী হল? শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “বিষয়টি রাজ্য তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ দেখছে।”
অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়ে দেন, “ডুয়ার্সে কাজ করার সময়ে পরিবেশপ্রেমী হয়েই কাজ করা উচিত। এখানকার পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়।” তাঁর কথায়, “শ্যুটিংই হোক বা বেড়ানো, আমার বরাবরের পছন্দ ডুয়ার্সই। সেখানে শ্যুটিংয়ের পরিকাঠামো তৈরি হলে ভালই হবে। তবে তা যেন পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়।”

উত্তরপাড়ায় নাট্যমেলা
দুঃস্থ ও অসুস্থ নাট্যকর্মীদের সাহায্যার্থে শনিবার থেকে শুরু হল চতুর্দশ সমতট নাট্যমেলা। এ দিন মেলার উদ্বোধন করেন অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। ছিলেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। উত্তরপাড়া গণভবনে নাট্যমেলা চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ছবি: কৌশিক নাগ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.