গত তিন দিনে তিনজন ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনায় গোটা মহকুমায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গত বুধবার বিকেলে বসিরহাট থানার ঝিনকা গ্রামে দুশ্কৃতীরা গুলি করে, কুপিয়ে খুন করে মাছ ব্যবসায়ী ভুবন দেবনাথকে। তার একদিন পর, শুক্রবার বসিরহাট স্টেশনের কাছে মাতৃসদনের পাশে একটি পুকুরের ধারে গুলিবিদ্ধ ও ক্ষতিবিক্ষত দুই ব্যবসায়ীর দেহ পড়ে থাকতে দেখে বাসিন্দা পুলিশের খবর দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ইটভাটা কলোনির বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী প্রিয়ব্রত হালদার ওরফে তুতুন (৩৫) এবং দণ্ডিরহাটের কাহারপাড়ার কাপড়ের ব্যবসায়ী সমীর বিশ্বাস ওরফে মন্ত্রীর (৩০) দেহ তাঁদের পরিবারের লোকেরা শনাক্ত করেছে। দেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই তিনিটি খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, টাকাপয়সা সংক্রান্ত এবং ব্যবসায়িক প্রতিহিংসা এই তিনটি খুনের কারণ। তবে অন্য কোনও কারণেও খুন হয়েছে কি না সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। তবে পর পর ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে ব্যবসায়ী মহলে। উঠেছে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার ভোরে এলাকার একটি পুকুরে পানিফল তুলতে গিয়ে একজন ওই দেহদু’টি পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ঝোপের মধ্যে একজনরে দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁর দু’টো হাতই পিছমোড়া করে খয়েরি রঙের চাদর দিয়ে বাঁধা। পরনে চেক সোয়েটার, ফুলপ্যান্ট, দুই পায়ে মোজা ও এক পায়ে জুতো। মাথায় গুলি চিহ্ন এবং গলির নলি কাটা। মৃতদেহে পাশে কিছু পোড়ানোর চিহ্ন। সেখানে থেকে হাত ১০-১২ দূরেই একটা ফাঁকা জায়গায় পড়ে জ্যাকেট, এক জোড়া জুতো এবং এক জোড়া হাতের গ্লাভস ও একপাটি জুতো। একটু দূরে পড়ে আছে আর একটি দেহ। মাথার পিছনে গুলির চিহ্ন। পরনে হাফহাতা গেঞ্জি, সাদা ফুল প্যান্ট। একটি হাতে বালা ও তিনটি আঙুলে আংটি।
তুতুনের দাদা দেবব্রত পুলিশকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ প্রতিবেশী একজন তুতুনকে ডেকে বলে তার জন্য মোড়ের মাথায় একজন অপেক্ষা করছে। তখন সেখানে মোটর সাইকেল নিয়ে হাজির ছিলেন মন্ত্রী। তাঁরই মোটর সাইকেলে করে তুতুনকে টাকি রোড ধরে ময়লাখোলার দিকে যেতে দেখেন অনেকে। আগে মন্ত্রী মাঝেমধ্যেই তুতুনের সঙ্গে দেখা করতে এলেও ইদানিং আসতেন না। রাত ১০টার পরেও ভাই না ফেরায় তাঁকে ফোন করেন দেবব্রত। কিন্তু দেখেন মোবাইল বন্ধ। ভোরে মন্ত্রীর বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন মন্ত্রীও সে রাতে বাড়ি ফেরেননি। দণ্ডিরহাট বাজারে কাপড়ের দোকান রয়েছে মন্ত্রীর। পুলিীশের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ইদানীং তিনি প্রোমোটারিতে নেমেছিলেন। পুলিশের ধারণা, দুষ্কৃতীরা প্রথমে মন্ত্রীকে দিয়ে তুতুনকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। এর পর আগুন জ্বালিয়ে মদ খাওয়ার পরে ঠান্ডা মাথায় মন্ত্রীকে গুলি করে খুন করে। তা দেখে তুতুন পালাতে গেলে তাঁকেও গুলি করা হয়। ঘটনাস্থল দেখে পুলিশের অনুমান দুষ্কৃতী দলটিতে ১০-১২জন ছিল। কোনও জমি কেনা বেচার ব্যাপারে মন্ত্রী ও তুতুন জড়িয়ে পড়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ভুবন দেবনাথের খুনের সঙ্গে এই জোড়া খুনের যোগ আছে কি না তাও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। |