টেস্টে তাঁর কেরিয়ার ব্যাটিং গড় ৭০। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে সাড়ে দশ। দ্রাবিড়োত্তর ভারতীয় ক্রিকেটের ‘নতুন দেওয়াল’-এর ব্যাট থেকে শুক্রবারের পর সেই অস্বস্তিও ধুয়েমুছে সাফ। চেতেশ্বর পূজারা চলতি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আপাতত বড়সড় সেঞ্চুরির কক্ষপথে।
আর বিরাট কোহলি? ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে সচিনোত্তর যুগের শুরু হয়েছে ওয়ান্ডারার্সেই। আর সেখানেই কিনা কোহলি এমন এক বিরাট রেকর্ডের থেকে মাত্র ২৩ রান দূরে, যে নজির সচিন তেন্ডুলকরের ২৪ বছরের টেস্ট জীবনেও নেই। এমনকী ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ৮১ বছরের সুপ্রাচীন ইতিহাসেই নেই। আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় টেস্টে চার নম্বরে নেমে এক ম্যাচের দু’ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেননি। চলতি জো’বার্গ টেস্টে কোহলি প্রথম ইনিংসে ১১৯ এর পর দ্বিতীয় ইনিংসে আপাতত ৭৭ ব্যাটিং।
দু’জনের ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই (১৯১) পার্টনারশিপ দেখে শুক্রবারের ওয়ান্ডারার্স মোহিত! রবি শাস্ত্রী থেকে প্যাট সিমকক্স, অরুণ লাল থেকে রবিন জ্যাকম্যান সমবেত ভাবে বলছেন, একেবারে পারফেক্ট জুটি। ইশান্ত শর্মা আবার বলে দিচ্ছেন, কোহলিরা এত রান তুলছেন বলেই তাঁরা ভাল বোলিং করতে পারছেন। বলছেন, “ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতে আমরা খারাপ বল করিনি। কিন্তু হাতে তো তখন রানই ছিল না।” |
কমেন্ট্রি বক্সের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের আবার মনে হচ্ছে, কোহলি-পূজারা একে অন্যের পরিপূরক। দু’জনের ব্যাটিং স্টাইলে যতটা অমিল, টেস্ট ব্যাটিং-দর্শনে ততটাই মিল। কমেন্ট্রি বক্সে মাইক মুখে শাস্ত্রী বলেছেন, “ভারতের তরুণ ব্যাটিং লাইন আপের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পূজারা আর কোহলি একটা ইনিংসেই এনে দিল। এখানে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে।” সচিনোত্তর যুগে ভারতের তরুণ ব্যাটিং লাইন আপকে সম্মান দেখানোর সময়ও এসে গিয়েছে বলে মনে করেন ভারতের প্রাক্তন তারকা অলরাউন্ডার।
অরুণ লাল আবার দাবি তুলে দিচ্ছেন, ভারতের ওয়ান ডে দলেও পূজারাকে সুযোগ দেওয়া হোক। “পূজারা প্রায় পারফেক্ট ব্যাটসম্যান। ওর ব্যাটিংয়ে সব কিছু আছে। এ রকম এক জন ব্যাটসম্যান কেন শুধু টেস্টেই খেলবে? হাসিম আমলাকে গোড়ার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা শুধু টেস্টে খেলাত। কিন্তু যখন থেকে আমলা ওয়ান ডে দলে ঢুকেছে, সেখানেও ভাল রকম সফল। পূজারা এত কম বয়সেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটে ট্রিপল সেঞ্চুরি, ছ’টা ডাবল সেঞ্চুরি করে বসে আছে। ষোলোটা টেস্টে ছ’টা সেঞ্চুরি হয়ে গেল। রানের জাহাজ। সে ওয়ান ডে-তে সফল হবে না বিশ্বাস করি না। হয়তো ওর হাঁটুর চোটের জন্য ওয়ান ডে-র ফিল্ডিংয়ের মানে পূজারা একটু স্লো। তাও ওর সুপার্ব ব্যাটিংকে ওয়ান ডে-তে কাজে লাগানোই উচিত।”
কোহলিকে নিয়ে আবার উচ্ছ্বসিত সিমকক্স বলে দিচ্ছেন, “দ্বিতীয় ইনিংসে ওকে আরও আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। শটের টাইমিং আরও নিখুঁত। সৌন্দর্য আরও বেশি।” |
চোকার্স ফ্রাইডে
ওয়ান্ডারার্সেই বেহাল দক্ষিণ আফ্রিকা |
|
|
বিধ্বস্ত বোলার কালিস। |
সতীর্থদের কাঁধে মাঠ ছাড়ছেন আহত মর্কেল। |
|
|
বল হাতে নেমে পড়লেন উইকেটকিপার ডে’ভিলিয়ার্স। |
অগত্যা কিপার আমলা। |
|
মর্নি মর্কেলের ফিল্ডিংয়ের সময় পা মচকে শুধু এই টেস্টে নয়, গোটা সিরিজেই অনিশ্চিত হয়ে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরের কাছে যতটা খারাপ, ততটাই স্বস্তির ভারতীয় ড্রেসিংরুমের কাছে। প্রথম ইনিংসে সেরা দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র দু’ওভার করে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় পূজারা-কোহলির যতই সুবিধে হোক, বিশেষজ্ঞরা পুরোপুরি মানতে নারাজ। প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান টেস্ট বোলার সিমকক্স বলে দিলেন, “মর্কেল থাকলে আরও ভাল হত ঠিক। কিন্তু স্টেইন আর ফিলান্ডার তো এখন টেস্টে বিশ্বের এক আর দু’নম্বর বোলার। তারা সারা দিনে ৩৯ ওভার পেস বোলিং করে একটার বেশি উইকেট তুলতে পারল না কেন? স্টেইনকে এ দিন নিষ্প্রভ দেখাল। বোঝা গেল, অন্য প্রান্তে মর্কেল না থাকলে স্টেইনের বিধ্বংসী চেহারা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়।” |