ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজে টোকাটুকি রুখতে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ক্লাস করানোর ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিলেন রাজ্য বিধানসভার শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জীবন মুখোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে পড়ুয়াদেরও টোকাটুকি না করার পরামর্শ দেন তিনি। বৃহস্পতিবার জীবনবাবুর নেতৃত্বে শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ওই কলেজে পরিদর্শনে যান। কমিটির সদস্যরা কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায় ও বাকি শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরে পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেন কমিটির সদস্যরা।
জীবনবাবু বলেন, “অধ্যক্ষা-সহ শিক্ষক শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা আলাদা করে কলেজের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সমস্যার সমাধানে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষায় টোকাটুকি রুখতে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ক্লাস করানোর ব্যাপারে আরও যত্নবান হতে বলেছি। পড়ুয়াদেরও টোকাটুকি না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
গত ২৭ অগস্ট তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য গৌতম পালের স্ত্রী কলেজের প্রথম বর্ষের সমাজবিদ্যা পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে নকল করছিলেন বলে অভিযোগ। সেইসময় নকল আটকাতে গিয়ে গৌতমবাবু ও তাঁর অনুগামীদের হাতে অধ্যক্ষা স্বপ্নাদেবী-সহ বাংলার শিক্ষক সুদেবকুমার রায়, রসায়নের শিক্ষিকা সেঁজুতি দে ও শিক্ষাকর্মী জাফর সাদেক প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। উল্টোদিকে, স্বপ্নাদেবী, সুদেববাবু, সেঁজুতিদেবী ও জাফরবাবুর বিরুদ্ধেও ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করার পাল্টা অভিযোগ ওঠে।
গত ২৮ নভেম্বর গৌতমবাবুকে কলেজের পরিচালন সমিতির মনোনয়ন দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ৯ ডিসেম্বর এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্কর বিধানসভায় গৌতমবাবুর মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুললে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু স্বপ্নাদেবীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এর পরে গৌতমবাবুর মনোনয়ন বাতিল করে প্রশাসক বসিয়ে স্বপ্নাদেবীর বিরুদ্ধে তদন্ত করার কথাও ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী। ঘটনাচক্রে তরুণবাবু এদিন কমিটির সদস্য হিসেবে কলেজ পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, “আমি কারও সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করব না। তবে প্রশাসক বসিয়ে দীর্ঘদিন কোনও কলেজ চলতে পারে না। তাই যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে দ্রুত কলেজের পরিচালন সমিতি গঠন করার জন্য রাজ্য সরকারকে কমিটির তরফে পৃথক প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।”
এদিন বৈঠকে অধ্যক্ষা স্বপ্নাদেবী স্থায়ী শিক্ষকের অভাব, ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরির যন্ত্রাংশ ও গ্রন্থাগারে বইয়ের অভাবের কথা সদস্যদের জানান। কমিটির অন্যতম দুই সদস্য আবু হাসান মন্ডল ও প্রমথনাথ রায় কড়া সুরে স্বপ্নাদেবীকে বলেন, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য সরকারের কাছে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কলেজের উন্নয়নের ব্যাপারে আপনার প্রস্তাব পাঠানো উচিত ছিল। যাইহোক, প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠান।” পরে স্বপ্নাদেবী বলেন, “গত দুবছরে রাজ্য সরকারের কাছে কলেজের উন্নয়ন সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব পাঠিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”
এ দিন কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা বৈঠকে কমিটির সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেন, সারাবছর প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সেইকারণে তাঁরা ঠিকমত ক্লাস করানোর সময় পান না। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন পরীক্ষার সময়ে চোখের সামনে নকল হতে দেখেও নিগ্রহ হওয়ার আতঙ্কে তাঁরা তা আটকানোর সাহস পাচ্ছেন না। |