ঘড়িতে ভোর ৬টা। শীতের হাল্কা রোদে অনেকেই প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছেন। হঠাৎই তাঁদের চোখে পড়ল রিভলভার হাতে নিয়ে দৌড়চ্ছে তিন যুবক। তাদের পিছনে রিভলভার উঁচিয়ে ধাববান জনা কয়েক পুলিশকর্মী। মিনাখাঁর মালঞ্চ সেতুতে সাত সক্কালে এমন দৃশ্যে ভ্রমণকারীরা ভেবেছিলেন, কোনও সিনেমা বা টিভি সিরিয়ালের শুটিং হচ্ছে।
কিন্তু ঘোর ভাঙল খানিক পরেই। তা হলে তো আরও লোকজন, ক্যামেরা নিয়ে ছোটাছুটি করার কথা। সে সব তো নেই! সম্বিত ফিরতেই তাঁরা দেখলেন দৌড়তে দৌড়তে হঠাৎই তিন যুবকের একজন রিভলভার নদীতে ফেলে দিল। তার পরে আরও কিছুটা দৌড়বার পরে থমকে দাঁড়িয়ে পাল্টা পুলিশের দিকে রিভলভার উঁচিয়ে ধরল। তাদের একজন পুলিশকে লক্ষ্য করে বলে উঠল, ‘আর এগোলে কিন্তু সত্যিই গুলি চালিয়ে দেব। বোমাও ছুড়ব। তখন কিন্তু আমাদের দোষ দিতে পারবেন না’। এ বার আর বুঝতে বাকি রইল না, ওই তিন বীরপুঙ্গব কারা। সকালে এমন চোর-পুলিশের লড়াই দেখে অনেকেই তখন ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছেন। তবে শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। দুষ্কৃতীদের হুমকিতে ভয় না পেয়ে মিনাখাঁ খানার পুলিশ শেষ পর্যন্ত তিনজনকেই পাকড়াও করে। দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে। একটি রিভলভার ও একটি চোরাই মোটর সাইকেল। |
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার ভোরে হঠাৎই মিনাখাঁ থানায় খবর আসে খড়িবাড়ির বাসিন্দা দাগী দুষ্কৃতী আসগর আলি বাছাড় গরু ও মাছ ব্যবসায়ীদের আটকে লুঠপাট চালানোর ছক কষেছে। দুটো মোটর সাইকেল নিয়ে ৬ জন দুষ্কৃতীর ওই দলটি চৈতল সেতুর কাছে ঘাঁটি গেড়েছে। খবর পেয়েই মিনাখা থানার ওসি তুষারকান্তি বিশ্বাস দু’টি মোটর সাইকেল ও জিপে বাহিনী নিয়ে রওনা হন। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন। টের পেয়ে দুষ্কৃতীরা অন্যত্র সরে গিয়েছে। এর পর পুলিশের দলটি দু’ভাগে ভাগে ভাগ হয়ে একদল চৈতলের দিকে এবং আর একটি দল সেতুর অপরপ্রান্ত মালঞ্চের দিকে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎই দু’টি মোটর সাইকেলে করে ৬ জনকে মালঞ্চের দিকে যেতে দেখে তাদের ধাওয়া করে পুলিশের দলটি। সেই সঙ্গে সেতুর অপরপ্রান্তে থাকা পুলিশের আর একটি দলকেও সজাগ করে দেওয়া হয়।
একটু পরেই দুষ্কৃতীরা বুঝতে পারে তারা ফাঁদে পড়েছে। সুযোগ বুঝে একটি মোটর সাইকেলে তিন দুষ্কৃতী পালাতে সক্ষম হলেও বাকি তিনজন পালাতে গিয়ে সেতুর উপরেই মোটর সাইকেল নিয়ে উল্টে পড়ে। রাস্তায় ছিটকে পড়ে তিনজনেরই হাত-পা ছড়ে যায়। ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে যায় পুলিশ। উপায়ান্তর না দেখে তিন দুষ্কৃতী পুলিশকেই পাল্টা হুমকি দেয়। তাদের একজন বলে, ‘আর এগোলে কিন্তু সত্যিই গুলি চালিয়ে দেব। বোমাও ছুড়ব। তখন কিন্তু আমাদের দোষ দিতে পারবেন না’। সেই সঙ্গে আগের বাইকে চলে যাওয়া অন্যদের ডাকতে থাকে। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে তারা আর ফেরেনি। সাত সকালে সেতুর উপরে এমন দৃশ্যে পথচলতি মানুষজন ভয় পেয়ে যান। ইতিমধ্যে পুলিশ অফিসার মানস মুখোপাধ্যায় দুষ্কৃতীদের দিকে রিভলবার তাক করে গুলি করার হুমকি দেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশের হাতে ধরা দেয় দলের পাণ্ডা আসগর-সহ জাকিরউদ্দিন ও নুরউদ্দিন মোল্লা। সাত সকালে চোর-পুলিশের লড়াইয়ে জিত হয় পুলিশেরই।
পুলিশ জানিয়েছে, জাকিরউদ্দিন ও নুরউদ্দিনের বাড়ি ধুতুরদহে। ধৃতদের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি, দেগঙ্গা, হাড়োয়া, মিনাখাঁ-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় একাধিক চুরি-ডাকাতি, তোলাবাজি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। |