কোনও রকম অনুমতির তোয়াক্কা না করে রেল প্রতিমন্ত্রীর মহালন্দি হোম-দর্শনের পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক। বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগকেই হাতিয়ার করে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সরকার থেকে শাসকদলের শীর্ষ নেতারা।
এ দিন সকালেই কান্দির ওই হোমে হাজির হয়ে সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “মানছি ওই হোমে বেশ কিছু খামতি রয়েছে। সুপার নেই, নেই চিকিৎসক, অ্যাম্বুল্যান্স। তা বলে এখানে এসে কেউ তাণ্ডব করে যাবেন!” তাণ্ডব বলছেন কেন?
সাবিত্রীদেবীর অভিযোগ, সোমবার ওই হোম পরিদর্শনের নামে সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে অধীর যা করেছেন তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই। তাঁর প্রশ্ন, “বাম-আমলেও তো হোমের অবস্থা ভাল ছিল না। তখন তো অধীরবাবুর চোখ পড়েনি!” সাবিত্রীদেবীর দাবি, স্থানীয় সাংসদ হিসেবে ওই হোমে যেতেই পারেন রেলপ্রতিমন্ত্রী। কিন্তু সকালে যে সময়ে অধীরবাবু ওই হোমে গিয়েছিলেন সেটা আবাসিকদের স্নান করার সময়। তখন ওঁদের অনেকের গায়েই পোশাক ছিল না। মন্ত্রী বলেন, “সেই বোধ কি ওঁদের আছে? আসলে সরকারকে হেয় করতেই অধীরবাবু অসময়ে হোমে হাজির হয়েছিলেন।”
শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও বলেন, “যে কেউই যে কোনও বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু তার তো একটা সারবত্তা থাকবে। আমার প্রশ্ন ওই হোমে তো মহিলারাও ছিলেন। অধীর কেন সেখানে অত লোক নিয়ে ঢুকবেন?”
দিল্লি থেকে অধীর অবশ্য জানান, ওই হোমের অব্যবস্থার অভিযোগ বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁর কাছে আসছিল। তিনি বলেন, “আমার কাছে খবর ছিল ওই হোমে গত ছ’মাসে ২৬ জন আবাসিক মারা গিয়েছেন। সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে এক জন সাংসদের কর্তব্যবোধ থেকেই আমি ওই হোমে গিয়েছিলাম।” তাঁর দাবি, জোর করে প্রবেশেরও প্রশ্ন নেই। হোমের যে আধিকারিক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনিই তাঁকে সাদরে ভিতরে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি। অধীর বলেন, “আমি হোমের আসল চেহারাটা তুলে ধরে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিষয়টি সংবাদমাধ্যম তুলে ধরায় মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। তাঁর ‘সোনার বাংলা’র আসল চেহারাটি বেরিয়ে আসায় রেগে গিয়েছেন তিনি!”
রেল প্রতিমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যের স্বৈরতন্ত্রের বাতাবরণ নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
তবে, অধীরবাবুর হোম-দর্শনের পরে জেলা প্রশাসন যে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন সূত্রেই তা জানা গিয়েছে। সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করে ইতিমধ্যেই সেখানে আরও একটি নতুন আবাসন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বসানো হচ্ছে নতুন পাম্প। নিয়োগ করা হচ্ছে সব সময়ের চিকিৎসক ও মনোবিদ।
তবে ওই হোমে যাওয়ার জন্য অধীরের বিরুদ্ধে ৪৪৭, ৫০৪, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ওই সব অভিযোগই জামিনযোগ্য।
|