|
|
|
|
পাশে থাকুন, জাগরী বাস্কের গ্রামে আর্জি সভাধিপতির
কিংশুক গুপ্ত • বেলপাহাড়ি |
আমলাশোল ঘুরে গিয়েছেন এক সপ্তাহও হয়নি। বৃহস্পতিবার ফের বেলপাহাড়িতে এলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের উত্তরা সিংহা। সঙ্গে জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষরা। আর ছিল এক লরি বোঝাই জামাকাপড়-শাল-সোয়েটার-কম্বল।
এত ঘন ঘন বেলপাহাড়ি সফর কেন? সরাসরি জবাব দেননি উত্তরাদেবী। তবে প্রাক্তন মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কের গ্রাম বগডোবায় দাঁড়িয়ে এ দিন করজোড়ে জেলা সভাধিপতি গ্রামবাসীদের বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আপনাদের কাছে এসেছি। আপনাদের সব রকম উন্নয়ন পরিষেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কয়েক দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের জন্য আরও অনেক পরিষেবা নিয়ে আসবেন। আপনারা সাহস নিয়ে থাকুন। বহিরাগতেরা ভয় দেখাতে এলে ভয় পাবেন না। আপনাদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। আপনারও মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকুন।” |
|
বৃহস্পতিবার বগডোবা গ্রামে প্রাক্তন মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কের মা গুরুবারি বাস্কের
সঙ্গে কথা বলছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি। |
‘বাইরের লোক’ বলতে কাদের কথা বলছেন? উত্তরাদেবীর দাবি, “সিপিএম এবং তাদের কিছু বন্ধুবান্ধব ওই এলাকায় গোলমাল পাকানোর ছক কষছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে।” জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি অবশ্য বলেন, “বাসিন্দারা বিভিন্ন পরিষেবা যথাযথ পাচ্ছেন কি-না তা সরেজমিনে দেখতে এসেছি। বাসিন্দাদের মুখ থেকে তাদের চাহিদার কথা জেনে নিচ্ছি। এতে পরবর্তী উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়।” তবে জেলা প্রশাসন এবং গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, পুরনো ঘাঁটি বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায় ফের সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা। বগডোবা, ওড়লি, জবলা, জুজারধারার মতো ঝাড়খণ্ড-পুরুলিয়া সীমানা ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে ফের তাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় মাওবাদীরা যাতে নতুন করে জনসমর্থন জোগাড় করতে না পারে, সে জন্যই স্থানীয়দের কাছে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
পক্ষান্তরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বক্তব্য, “আমাদের নামে কুৎসা করে লাভ নেই। সবাই জানে, বেলপাহাড়ির ওই এলাকায় উন্নয়নই বা কতটা হয়েছে, ওখানে কারাই বা ফের আসছে।” একদা অনাহারের গ্রাম বেলপাহাড়ির আমলাশোলকে ‘মডেল গ্রাম’ হিসেবে গড়ে তুলতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। জানুয়ারির গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বেলপাহাড়িতে আসবেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। ওই সময় আমলাশোল বা আশেপাশের গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেন বলেও জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বগডোবা গ্রামে পৌঁছন সভাধিপতি। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি, নির্মল ঘোষেরা। গ্রামবাসীদের নতুন পোশাক, শাল-সোয়েটার, কম্বল দেন তাঁরা। কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। গত শনিবার উত্তরাদেবী গিয়েছিলেন আমলাশোল। সে দিনও পোশাক, কম্বল, শাল, সোয়েটার বিলি হয়। |
জবলা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলের রান্না খুঁটিয়ে
দেখছেন সভাধিপতি ও জেলাশাসক। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
এ দিন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কের বাড়িতে যান জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জাগরীর মাটির বাড়ির উঠোনে টিউবওয়েল বসেছে। পুলিশের উদ্যোগে মাসখানেক আগে জাগরীর মা গুরুবারিদেবীর ছানি কাটানো হয়েছে। চোখে এখনও কালো চশমা। উত্তরাদেবীর পরিচয় জেনে তাঁর হাত ধরে গুরুবারিদেবী বললেন, “পুলিশ বলেছিল মেয়ে স্যারেন্ডার করলে আমাদের পাকা দালানবাড়ি হবে। কিন্তু পাকা বাড়ি তো হল না। আমার বার্ধক্য ভাতাও চালু হয়নি।” গুরুবারিদেবীকে আশ্বস্ত করে সভাধিপতি একটু সময় চেয়ে নেন। বৃদ্ধা একগাল হেসে বলেন, “এই গ্রামে পুলিশ নিয়মিত আসে। কিন্তু এই প্রথমবার গ্রামে প্রশাসনের বাবুরা এলেন।” মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। তাই বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝোর পিচরাস্তা মেরামতির কাজ চলছে জোরকদমে। তবে আমলাশোল থেকে বগডোবা যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তাটি দুর্গম। বগডোবায় বিদ্যুৎও আসেনি। গ্রামবাসীরা রাস্তা সংস্কার, পুকুর ও স্বাস্থ্য-পরিষেবা উন্নতির দাবি জানান।
দুপুর একটা নাগাদ উত্তরাদেবীরা পৌঁছন জবলা গ্রামে। সেখানেও পোশাক ও বিভিন্ন জিনিস বিতরণ করা হয়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরার নেতৃত্বে অসুস্থ গ্রামবাসীদের চিকিৎসা করা হয়। জবলা গ্রামেও উত্তরাদেবী বলেন, “মাত্র কয়েকমাস হল পঞ্চায়ত ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের একটু সময় দিন। আমরা সব পরিষেবা দেব। আপনারা মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকুন।” |
|
|
|
|
|