না-ই বা থাকুন নিকুম্ভ স্যর, বাস্তবের ঈশানদের চলার পথ যেন হয় আর পাঁচ জন সাধারণ পড়ুয়ার মতোই মসৃণ। স্কুল স্তরে তো বটেই, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ‘ডিসলেক্সিয়া’ আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করতে চায় রাজ্য সরকার। পাঠ্যক্রমের বোঝা কিছুটা কমিয়ে, পরীক্ষায় বাড়তি সময় দিয়ে বা আসন সংরক্ষিত রেখে এদের আর পাঁচ জন সাধারণ পড়ুয়ার সম মানের করে তুলতেই এই ভাবনা। ডিসলেক্সিয়া নিয়ে একটি আলোচনাসভার উদ্বোধন করে মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই সমস্যা নিয়ে কাজ করে, এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তিন দিনের ওই আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের নতুন কিছু শিখতে সমস্যা হয়। এরা সাধারণত অক্ষরগুলিকে উল্টো দেখে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাটা ঠিকঠাক ধরা পড়ে না। পড়লেও অনেকটা দেরিতে। কারণ, বিষয়টি নিয়ে এখনও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়ে গিয়েছে। ‘তারে জমিন পর’ ছবিটি দেখার আগে অনেকে এই সমস্যাটার কথা আলাদা ভাবে জানতেন না বলেও বিশেষজ্ঞেরা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পূর্বাঞ্চলে ডিসলেক্সিয়া নিয়ে সচেতনতার অভাব অনেক বেশি। টাকার অঙ্কে ‘তারে জমিন পর’-এর সাফল্য বিচার করলেই তা বোঝা যায়।” এর পরেই তিনি এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া নিয়ে সরকারের ভাবনাচিন্তার কথা জানান। সেই সঙ্গেই মন্ত্রী বলেন, “সরকার একা এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবে না। এ জন্য গোটা সমাজের সহযোগিতা ও সচেতনতা দরকার।”
আলিপুরের একটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ওই আলোচনাসভায় মূলত বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কাউন্সেলর এবং ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।
তেমনই এক অভিভাবক বিন্দু দানি। তাঁর বছর ১৮-র মেয়ে ডিসলেক্সিয়ার শিকার। বিন্দুদেবী বলেন, “ও এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে কী করতে চায়, সেটাই জানে না। আমি মেয়েকে বলেছি, ও যা করতে চায়, আমি ওর পাশে আছি। কিন্তু কী করবে, সেটা তো স্থির করতে হবে!” তিনি জানান, মেয়ে ভীষণ বদমেজাজি, একগুঁয়ে। বিন্দুদেবীর কথায়, “অনেকেই ওকে বোকা, নির্বোধ বলে বকাবকি করেন। এটা ওর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সবাই তো আর সমস্যাটা বোঝেন না।” আর এক অভিভাবক মানসী কামানির কথায়, “মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ওর সমস্যাটা ধরা পড়ে। আমি এটা প্রথমে মানতেই পারিনি যে আমার একমাত্র সন্তানের শেখার কোনও সমস্যা আছে। এখন ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।”
মন্ত্রী এ দিন জানান, আইসিএসই, সিবিএসই বোর্ড এই ধরনের ছাত্রছাত্রীদের বাড়তি সুবিধা দেয়। এদের পড়ার বোঝা কিছুটা কম থাকে, পরীক্ষাতেও মেলে বাড়তি নম্বর। কিন্তু রাজ্যের বোর্ডগুলি এ সব নিয়ে এত দিন মাথা ঘামায়নি। অনুষ্ঠানের পরে ব্রাত্যবাবু জানান, আলোচনাসভার উদ্যোক্তা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই ছেলেমেয়েদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে কিছু প্রস্তাব দেবে তাঁদের কাছে। তা পেলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে আলোচনা করে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গেও আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। যে সব ছেলেমেয়ের শারীরিক সমস্যা আছে বা যারা ডিসলেক্সিয়ার শিকার, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তাদের পরীক্ষায় বাড়তি সময় দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি দিব্যা জালানের মেয়ে ঈশিতা ডিসলেক্সিয়ার শিকার। মেয়ের সমস্যা নিয়ে লড়াই করতে করতেই এই সংস্থা গড়ার কথা মাথায় আসে তাঁর। বলেন, “রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা হবে, এই ছেলেমেয়েদের জন্য তাঁরা ঠিক কী করতে চান। তার পরে সকলের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাব তৈরি করে জমা দেওয়া হবে সরকারের কাছে।” |