শুনতে হবে রাজ্যের কথাই, অধীর-জেলায় বার্তা মমতার
প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অধীর চৌধুরীর জেলায় সেই নির্দেশের আড়ালে রাজনৈতিক সতর্ক বার্তা দেখছে প্রশাসনেরই একাংশ।
কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?
মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন কারও কথা শুনে কাজ করবে না। কেবল রাজ্য সরকারের কথা শুনে কাজ করবে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কী বলতে চাইছি। মনে হয়, ইশারাই কাফি!”
কৃষ্ণনগরে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইশারা মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সাংসদ তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর উদ্দেশে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকের ধারণা। কারণ, জেলা প্রশাসনের একটা বড় অংশ অধীরের কথা শুনে কাজ করে বলে অতীতে বহু বার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতারা। তাঁদের ধারণা, মূলত সেই কারণেই লোকসভা থেকে শুরু করে পুরসভা কোনও ভোটেই অধীরের গড়ে দাঁত ফোটানো যায়নি। আরও একটি লোকসভা ভোটের মুখে মুর্শিদাবাদে এসে মুখ্যমন্ত্রীর ইশারাকে তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন প্রশাসনের ওই কর্তারা। বিশেষ করে রেজিনগরের যে তকিপুর গ্রামে হাই মাদ্রাসার মাঠে ম্যারাপ বেঁধে এ দিন বৈঠক করেছেন মমতা, সেটি যখন অধীরের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।
প্রশাসনের আর একটি অংশ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের অন্য মানে করতে নারাজ। তাঁদের মতে, জেলা প্রশাসনকে রাজ্য সরকারের কথা শুনে কাজ করতে হবে, এটাই নিয়ম। তার থেকে বিচ্যুতি যাতে না ঘটে, সাধারণ ভাবে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক কোনও মন্তব্য করেননি।
অধীর অবশ্য মমতা মন্তব্যকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখেছেন। দিল্লি থেকে তাঁর পাল্টা মন্তব্য, “মনে রাখতে হবে, জেলাকে যদি রাজ্য শাসন করে, তা হলে রাজ্যকে শাসন করে দেশ! আর এটাও মনে রাখবেন, এটা শুধু ইশারা নয়, ইশারা সে ভি কুছ জাদা...!”
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন ঘিরে নবান্নের তৎপরতা শুরু হয়েছে কিছু দিন ধরেই। সম্প্রতি জেলার সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) তুষার মজুমদারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি তরফে এর কোনও কারণ দেখানো না-হলেও তুষারবাবু নিজে অভিযোগ করেন, তাঁর সঙ্গে অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা আছে বলেই তাঁকে সরানো হয়েছে। এর পর বহরমপুর আদালতের তিন জন সহকারি প্যানেল প্রসিকিউটরকেও (এপিপি) অপসারণ করা হয়েছে। সরাসরি ওই প্রসঙ্গ না টানলেও তকিপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভোট এলেই মুর্শিদাবাদ জেলায় গণ্ডগোল হয়। আর কোথাও হয় না! ঠিক মতো মামলা করার জন্য এপিপি, পিপি ভাল হতে হবে। ভাল এপিপি, পিপি-র তালিকা তাঁর কাছে পাঠাতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা। কৃষ্ণনগরে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পুলিশকেও হুঁশিয়ারি দিতে ছাড়েননি। জেলার পুলিশ-কর্তাদের উদ্দেশে তাঁর সাফ কথা, মানুষ হয়রান হয়, পুলিশ টাকা তোলে ইত্যাদি যে সব অভিযোগ তাঁকে শুনতে হচ্ছে, তার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়! মুর্শিদাবাদে পাচার রোখা ও সীমান্তে নজরদাারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রেজিনগরে যাওয়ার আগে এ দিন নদিয়া জেলার পলাশির পানিঘাটা থেকে দুই জেলার বেশ কিছু প্রকল্পের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেতাদের একাংশের বক্তব্য, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ মিলে প্রায় ৫০০ প্রকল্পের সূচনা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। সেই আসরেও নাম না-করে অধীরদের প্রতি কটাক্ষ ছিল। রেজিনগরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুর্শিদাবাদের জেলা সভাধিপতি থেকে শুরু করে কংগ্রেসের কোনও জনপ্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন অধীর। অতীতে অন্যান্য জেলায় একই অভিযোগে সরব হয়েছিল বামেরাও। এ প্রসঙ্গে এ দিন পলাশিতে বিরোধীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “কিছু লোক আছে, যারা পিছনে বসে কুৎসা করে! চক্রান্তের ফসল বোনে!” আর বামেদের প্রতি তাঁর প্রশ্ন, “৩৪ বছর তো সময় পেয়েছিলেন! কেন বাংলাকে গড়েননি? কেন কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মতো প্রকল্প চালু করেননি?” বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করার কথা বলে পলাশিতেও মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটের আগে তাঁর সরকারের উন্নয়নমূলক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাই এখন লক্ষ্য। এমনকী, সভায় এসে অসুস্থ হয়ে-পড়া ছাত্রী ববিতা খাতুনকে প্রয়োজনে তাঁর গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন সরকারি কর্তাদের।
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন কারও কথা শুনে কাজ করবে না। কেবল
রাজ্য সরকারের কথা শুনে কাজ করবে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন,
কী বলতে চাইছি। মনে হয়, ইশারাই কাফি!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জেলাকে যদি রাজ্য শাসন করে, তা হলে রাজ্যকে শাসন
করে দেশ। এটা শুধু ইশারা নয়, ইশারা সে ভি কুছ জাদা...।”

অধীর চৌধুরী
পরে প্রশাসনিক বৈঠকে নানা বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মার মুখে পড়তে হয়েছে মন্ত্রী বা প্রশাসনিক কর্তাদের। চাইলেই যে ব্লক স্তরের হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়া সহজ নয়, জেলার তৃণমূল বিধায়ক তথা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুব্রত সাহাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে মিড-ডে মিল রান্নার জন্য সহায়িকা নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকা কেন জেলায় পৌঁছয়নি, জানতে চেয়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের কাছে। তিন দিনের মধ্যে নির্দেশিকা জেলায় পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। ব্লকে ব্লকে ১০০ দিনের কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি দেখে ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ওই নিয়ে বিশেষ শিবির করতে বলেছেন। যে সংস্থা গ্রামে বিদ্যুদয়নের কাজ না করে চলে গিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছেন। জমি থাকা সত্ত্বেও কিষাণ মান্ডি, মডেল স্কুল এবং আইটিআই-এর কাজ না হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। আর প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “৭ জানুয়ারি রাজ্যের ৩৫ হাজার গ্রামে একটি করে রাস্তা তৈরি করা হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি...
পুলিশ রাস্তায় টাকা তোলে বলে মানুষ আমাকে অভিযোগ করেছেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় পুলিশ যেন সে সব ভুলে পাচার রোখার চেষ্টা করে।
(জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরকে)

সারা দেশ খুঁজে আড়াই হাজার চিকিৎসক জুটছে না। আইএএস, আইপিএস মিলবে কিন্তু চিকিৎসক মিলবে না। চাওয়াটা সহজ। বলতে তো ট্যাক্স লাগে না!
(হাসপাতালের জন্য ডাক্তার চাওয়ায় মন্ত্রী সুব্রত সাহাকে)

যে নির্মাণ সংস্থা বিদ্যুদয়নের কাজ না করে চলে গিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা দায়ের করুন।
(গ্রামে বিদ্যুদয়ন না হওয়ায় প্রশাসনিক কর্তাদের)

আইসিডিএস সেন্টার, স্কুলে মিড-ডে মিলের খাবারের মান দেখতে যান না কেন? যেতে হবে আপনাদের।
(বিডিও-দের)

টাকা খরচ করতে না পারলে অন্য জেলাকে দিয়ে দিন।
(সংখ্যালঘু দফতর টাকা খরচ করতে না পারায়)

জানুয়ারির মধ্যে কন্যাশ্রী লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই হবে।
(জেলা-কর্তাদের)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.