সম্পাদকীয় ১...
অন্যায়
ন্দিরা জয়সিংহ ভারতের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল। পদটি গুরুত্বপূর্ণ। যাঁহারা গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত, তাঁহাদের নিকট সেই পদের একটি প্রাথমিক দাবি থাকে। দায়িত্ববোধের দাবি। তাঁহারা আপন আচরণে একশো শতাংশ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়া চলিবেন, ইহা কেবল প্রত্যাশিত নহে, অত্যাবশ্যক। তাঁহাদের হাতে ক্ষমতা আছে বলিয়াই দায়িত্ব সমধিক। সেই ক্ষমতা যখন রাষ্ট্রীয় পরিসরের, তখন তাহাতে একটি নূতন মাত্রা যুক্ত হয়। সরকারি পদে আসীন ব্যক্তি যে ক্ষমতা বা গুরুত্ব ভোগ করেন, তাহা প্রকৃতপক্ষে জনসাধারণের ক্ষমতা। তাঁহারা সেই ক্ষমতার অছিমাত্র। সুতরাং তাহার ব্যবহারে অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি। কিন্তু আবার ‘জনসাধারণ’ নামক বিমূর্ত ধারণা যে ক্ষমতার উত্‌স, তাহাকে আপন ক্ষমতা বলিয়া ভুল করিবার সম্ভাবনাও বেশি। ব্যক্তিগত জীবনের মতোই সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় পরিসরেও সংযমের প্রয়োজন এবং অসংযমের আশঙ্কা অনেক সময়েই সমানুপাতিক। সরকারি উচ্চপদে আসীন ব্যক্তি প্রায়শই অসংযমের বশীভূত হইয়া পড়েন। ইন্দিরা জয়সিংহও হইয়াছেন। পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের কর্ণধার এবং সুপ্রিম কোর্টের ভূতপূর্ব বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যৌনলাঞ্ছনার অভিযোগ সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ্যে আনিয়া তিনি যে অসংযমের পরিচয় দিয়াছেন, তাহা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
সুপ্রিম কোর্টের একটি কমিটির নিকট অভিযোগকারিণী যে হলফনামা দিয়াছিলেন, তাহা তদন্ত প্রক্রিয়ার অঙ্গ। সেই প্রক্রিয়া সমস্ত নিয়ম ও রীতি মানিয়া সম্পন্ন হইবে, ইহাই বিধেয়। কোনও যুক্তিতেই এই হলফনামার একটি বর্ণও এখন জনসমক্ষে আসা উচিত নয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের নথি বিভিন্ন সময়ে ফাঁস হইয়া থাকে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারি আইন-আধিকারিক নিজে তাহা ‘ফাঁস’ করিতেছেন! তাঁহার যুক্তি, অভিযোগকারিণীর সম্মতিক্রমেই তিনি এই নথি প্রকাশ্যে আনিয়াছেন। দুইটি কারণে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এক, যতক্ষণ তদন্ত এবং বিচারের পর্ব সম্পন্ন না হয়, ততক্ষণ আইনের চোখে অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি, উভয়েই সমান, সুতরাং এক জনের ‘সম্মতি’ কোনও ভাবেই যথেষ্ট নয়। দুই, নীতির বিচারে সম্মতির প্রশ্নটিই গৌণ। দুই তরফের সম্মতি থাকিলেও এই নথি প্রকাশযোগ্য নয়, কারণ তাহা যথার্থ তদন্ত ও বিচারের পরিপন্থী। ইহা পদ্ধতির প্রশ্ন। অনুমান করা অসংগত নয় যে, অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করিবার জন্যই অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হলফনামার অংশবিশেষ প্রকাশ করিয়াছেন। তাঁহার বিভিন্ন মন্তব্য এই অনুমানকে জোরদার করে।
এই অনুমান সত্য হইলে আপত্তি এবং দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ। প্রথমত, অভিযুক্ত ব্যক্তি জনসমক্ষে অপদস্থ হইয়া পশ্চাদপসরণ করিবেন এমন উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্য হিসাবেই অনৈতিক। দ্বিতীয়ত, সেই উদ্দেশ্য চরিতার্থ হইলে তাহার পরিণাম শুভ হইতে পারে না। ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন পরিসরে মেয়েদের সমস্যা বিপুল। তাহা লইয়া অধুনা সমাজের চেতনা বাড়িয়াছে, অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংগঠিত প্রতিবাদ ও দাবি প্রবল হইয়াছে, মেয়েরা অনেক বেশি সাহসী হইয়াছেন, এমনকী সরকারি জগদ্দলও ঈষত্‌ নড়িয়াছে। সুলক্ষণ। কিন্তু সেই ‘অনুকূল পরিবেশ’-এর সুযোগ লইয়া নারীর সম্মানহানির অভিযোগের যথাযথ তদন্ত না করিয়া জনতার আদালতে বিচার সারিয়া ফেলিবার একটি তাগিদও চতুর্দিকে প্রকট। তাহা অস্বাভাবিক নহে, নিদ্রিত সমাজ জাগিয়া উঠিলে কিঞ্চিত্‌ অত্যুত্‌সাহী হইয়াই থাকে। কিন্তু যাঁহারা শাসনতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থা চালনার দায়িত্বে, তাঁহাদের কাজ সেই সামাজিক জাগরণ হইতে সুশাসনের প্রেরণা ও তাগিদ সংগ্রহ করা, তাহার উচ্ছ্বাসে গা ভাসানো নয়। নীতি এবং পদ্ধতির প্রতি সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ থাকা সেই কর্তব্যের এক অলঙ্ঘ্য শর্ত। ইন্দিরা জয়সিংহ সেই শর্ত লঙ্ঘন করিয়াছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.