হোমে অব্যবস্থা, তদন্তের নির্দেশ জেলা প্রশাসনের
শিশুদের ঠিকমতো দেখভাল না করায় শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন। খোদ জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জেলা শিশুকল্যাণ সমিতিকে ওই হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিশুদের অবহেলা সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলাশাসক বলেন, “কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে আমি কিছুদিন আগে ওই হোম পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিকে গাফিলতি কাটিয়ে কিছু কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু জানতে পারি তা হয়নি। তাই ওদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”
জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্য শিখা আদিত্য জানান, ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে শহরের বড়নীলপুরের ওই হেম থেকে দু’টি শিশু পালিয়ে এসপি-র বাংলোতে চলে যায়। সেখান থেকে তাদের নিয়ে আসা হয় বর্ধমান থানায়। তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে, তাদের ঠিক মতো খাবার দেওয়া হয় না। শীতের পোশাক, কম্বল এমনকী সাবানও দেওয়া হয় না। এছাড়া কথায় কথায় হোমের লোকেরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলেও তাদের অভিযোগ। এরপরেই শিশু কল্যাণ সমিতিকে ঘটনার তদন্ত করতে বলে পুলিশ। শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যেরা গত ১২ ডিসেম্বর হোমটি পরিদর্শনে যান। দলে ছিলেন জেলাশাসকের সহধর্মিনী তথা বর্ধমান সদর হোম ইন্সপেকশন কমিটির চেয়ারপার্সন শ্বেতা গুপ্তা, চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়, জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অনির্বাণ চক্রবর্তী, শিশু কল্যাণ সমিতির দুই সদস্যা শিখা আদিত্য ও পিয়ালি কর।
হোম পরিদর্শনে প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র।
শিখাদেবীর দাবি, হোম পরিদর্শনের সময় আমরা জানতে পারি, ওখানে শিশুদের কোনও রক্ষনাবেক্ষণকারী বা ‘কেয়ার-গিভার’নেই, যা আইনত দণ্ডনীয়। এছাড়া সরকার থেকে লক্ষাধিক টাকার অনুদান পাওয়া সত্বেও ওই সংস্থা তার কোনও হিসেব দেখাতে পারেনি। তিনি আরও জানান, ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে ওই হোমে ৫১ জন শিশু রয়েছে, তারা প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে শুধু আলুসেদ্ধ দেওয়া হয়। ওই হোমের সঙ্গেই চলছে একটি বেসরকারি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। সেখানে ১২ জন পথশিশু রয়েছে। কিন্তু এদের যে এখানে রাখা হয়েছে, তা জেলাশাসক বা জেলা সমাজকল্যাণন দফতর কাউকেই জানানো হয়নি। শিখাদেবী বলেন, “অনেক শিশুরই পরীক্ষা চলছিল, ফলে আমরা আলাদা করে মাত্র কয়েকজন শিশুর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। তারা প্রত্যেকেই আমাদের কাছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ করেছে। পরে জানতে পারি, যে শিশুদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম, তাদের সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা জেলাশাসকের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে বৈঠক করেছি। তিনিই শিশুরক্ষা আইনের ধারায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় এফআইআর করতে নির্দেশ দিয়েছেন।” শিখাদেবীর আরও অভিযোগ, “ওই বেসকরারি হোমে পাণ্ডবেশ্বরের এক ১৪ বছরের কিশোরী রয়েছে। বাড়ি থেকে পালানোর পরে ওই হোমে ঠাঁই পায় সে। কিন্তু ওই কিশোরীর বাড়ির লোকেদের সন্ধান করার কোনও ব্যবস্থাই হোম কর্তৃপক্ষ করেনি।” বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে, ওই হোম থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আরও দুই কিশোর। একজন পরে ফিরে এলেও অন্যজনের খোঁজ মেলেনি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, হোমের নানা অব্যবস্থার জন্যই শিশুরা এভাবে পালিয়ে যাচ্ছে।
তবে বর্ধমান ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সম্পাদক রাইচাঁদ সুরানা সাফ বলেন, “২০০৬ সালে ৫০ জন বালক-বালিকা নিয়ে ওই হোম চালু হয়। ওই শিশুদের খাওয়াদাওয়া-সহ নানা ব্যবস্থার জন্য মাসে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু ২০০৯ সালে মাত্র একবারই চার লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছি। তারপরে আর এক টাকাও পাইনি। আমাদের প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের কাছে। ভিক্ষে করে হোম চালাতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের উচিত এই টাকা মিটিয়ে তারপরে আমাদের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ তোলা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.