ডেঙ্গির তথ্য পেতে ডাক্তারদের পুর-চিঠি
ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের মোকাবিলায় এ বার শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাহায্য চাইবে পুর-প্রশাসন। চিঠি পাঠিয়ে ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় তাঁদের পরামর্শ চাওয়ার পাশাপাশি সেই চিঠিতে বলা হবে, ওই দুই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার সঙ্গে আক্রান্তদের নামধাম পুরসভাকে জানানোটাও চিকিৎসকদের সামাজিক কর্তব্য। ওই সব তথ্য পেলে পুরসভার পক্ষে শহরের আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা বলেন, আক্রান্ত এলাকার নাম জানা গেলে সেখানে মশা-নিধন কর্মসূচি এবং সচেতনতা শিবির কার্যকর করা সম্ভব হবে।
ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে কলকাতা পুরসভা। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থার সুফল মিলতে শুরু করেছে। এ বছর ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা যে কম, তার জন্য পুরসভার আগাম ব্যবস্থাকেই চিহ্নিত করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। তাঁরা মনে করছেন, যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওই সব সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করেন, তাঁরা এ ব্যাপারে পুরসভাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। ওই সব চিকিৎসকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেই ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তৈরি করতে চলেছে পুরসভা।
এ বিষয়ে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “এ বার শহরের প্রত্যেক চিকিৎসকের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। ওই দুই রোগ নিয়ে তাঁদের কাছে যাঁরা আসছেন, তাঁদের নামধাম জানা না-গেলে রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজ অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে। কাউকে অসম্মান নয়, পুর-প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বলাই হবে ওই চিঠির মূল লক্ষ্য।” তিনি জানান, আগামী ১১ এবং ১২ জানুয়ারি টাউন হলে পুরসভার সব কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক এবং শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বৈঠক হবে। সেখানেই তৈরি হবে আগামী বছরের মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিকল্পনা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা সব সময়েই আমাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। তথ্য আদানপ্রদান করতে চাই। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে কখনও কোনও উৎসাহ দেখিনি। পুরসভার প্রতিটি বরো অফিসে একটি করে স্বাস্থ্য বিভাগ রয়েছে। সেখানকার কর্মীরা আমাদের কাছে এসে তথ্য সংগ্রহ করতে এলে আমরা সব তথ্য তাঁদের দিতে পারি।”
বিভিন্ন আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে সচেতনতা শিবিরে তাঁরাও অংশগ্রহণ করতে চান বলে আর এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগী দেখি। আমরা জানি, ঠিক সময়ে রোগ ধরা না পড়লে কী ভাবে ম্যালেরিয়া কিংবা ডেঙ্গি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। আমাদের কাছে যাঁরা চিকিৎসার জন্য আসেন, তাঁদের এই ধরনের পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি। আমরা চাই সবাই এটা জানুক। তাতে পুরসভারই ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে।”
২০১২ সালে কলকাতা ও সল্টলেক জুড়ে ডেঙ্গির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতিটি ওয়ার্ডই ডেঙ্গিপ্রবণ হয়ে পড়ে। শুধু কলকাতায় আক্রান্ত হন ১৮৫২ জন। মৃত্যু হয় দু’জনের। দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় ওই রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। বছরের শুরু থেকেই মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প হাতে নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এ বছরের শুরু থেকেই শহরে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় পুর-প্রশাসন। এ বছর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরের ২১০ জন বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। কিন্তু ওই সংখ্যাটার বাইরেও কেউ কেউ সরাসরি চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পুরসভারই এক কর্তা। সে ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তথ্য তাঁদের কাছে আসছে না। এর ফলে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকৃত চিত্রটা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। তাই তাঁরা সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
পুরসভার পতঙ্গ-বিশেষজ্ঞ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, “শুধু আক্রান্ত রোগীকে সারিয়ে তুললেই সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। ওই রোগী যে এলাকায় থাকেন, সেই জায়গায় মশা দমনের সব ব্যবস্থা করাও দরকার। অন্যথায় আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে নেওয়া জীবাণু ওই মশার মাধ্যমে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।” তিনি জানান, এডিস ইজিপ্টাই মশা ওই জীবাণু বহন করে। এক জন আক্রান্ত রোগীকে কামড়ে ওই জীবাণু আরও আট থেকে বারো দিন নিজের শরীরে বহন করে রাখে ওই মশা। ওই সময়ের মধ্যে ওই মশা যাঁকে কামড়াবে, তাঁর শরীরেই ঢুকে যাবে ডেঙ্গির ভাইরাস। তাই ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁর বসবাসের এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ করাটাও অত্যন্ত জরুরি।
মশা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে শহরের বাসিন্দাদেরও সাহায্য চায় পুরসভা। অতীনবাবু জানান, জমা জলে মশা হয়, তা নিয়ে নানা ভাবে বাসিন্দাদের সজাগ করা হচ্ছে। তাতেও বেশ কিছু এলাকায় জল জমানোর প্রবণতা রয়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন, “এমন কিছু প্রভাশালী ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা ছাদের উপরে নানা ভাবে জল জমাচ্ছেন। পুরসভার স্বাস্থ্য-কর্মীদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ বার তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া হবে পুর-প্রশাসন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.