তিনি যাচ্ছেন প্রশাসনিক বৈঠক করতে। কিন্তু মুর্শিদাবাদে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা তাতেই উৎসাহিত। জেলার একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহার কথায়, “দিদি জেলায় আসা মানেই মানুষের ঢল নামা। দিদির নামেই লোক জমে।” লোকসভা ভোটের আগে এই জনসংযোগের প্রয়াস কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ভিত মজবুত করবে বলেই আশাবাদী সুব্রতবাবুর মতো জেলার অসংখ্য তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
দিদি মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে উন্নয়নের কাজ তরান্বিত করতে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মমতা গত আড়াই বছরে বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। কিন্তু কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে এই প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে যাচ্ছেন তিনি। আজ, মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে প্রশাসনিক বৈঠক হবে। বুধবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে তাঁর প্রশাসনিক বৈঠকের কর্মসূচি আছে। রেজিনগরে যাওয়ার আগে আজ নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সংযোগস্থল পলাশিতে সরকারি অনুষ্ঠান আছে মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে তাঁর জনসভা করার কর্মসূচিও আছে। রেজিনগরে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে রুগ্ণ শিল্প তালুকের পুনরুজ্জীবনের কাজের উদ্বোধনও করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও বহু মানুষ এসে মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে উদ্বুব্ধ হবেন বলে সুব্রতবাবুর আশা। |
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের আড়ালে তৃণমূলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আন্দাজ করেই সভার ২৪ ঘণ্টা আগে রাজ্যের শাসক দলকে তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর মন্তব্য, “নামে প্রশাসনিক সভা হলেও আসলে অধীর চৌধুরীকে কী ভাবে লোকসভা ভোটে হারানো যায়, তার জন্য প্রতিশ্রুতি বিলোনোর সভা ওটি! নইলে জেলাসদর বাদ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে জেলার এক প্রান্তে প্রশসানিক সভা করা হত না!” তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির নির্বাহী সভাপতি হুমায়ুন কবীর পাল্টা বলেছেন, “অধীরবাবু হারার আগেই হেরে গিয়েছেন। ভয় পেয়ে এ সব বলছেন! তাঁকে হারানোর জন্য নীল নকশা তৈরি করতে মুখ্যমন্ত্রী তকিপুরের মাঠে যাবেন কেন? তার জন্য তো নবান্ন আছে, মহাকরণ, কালীঘাট বা তৃণমূল ভবনও রয়েছে!”
রেজিনগরে আজ মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের জন্য ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে তকিপুর হাই মাদ্রাসা নীল-সাদা রঙে রাঙানো হয়েছে। মাদ্রাসার মাঠ সমতল করতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে কাঠের পাটাতন বসানো হয়েছে। তবে জেলার উন্নয়ন নিয়ে ওই প্রশাসনিক বৈঠকে কংগ্রেস পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার, স্থানীয় সাংসদ অধীর বা স্থানীয় বিধায়ক, কংগ্রেসের রবিউল আলম চৌধুরিকে আমন্ত্রণ না-জানানোয় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস। জেলা পরিষদের সভাধিপতি জেলা উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির সভাপতি। তাও তাঁকে আমন্ত্রণ না-জানানোয় অধীরের প্রতিক্রিয়া, “বাম আমলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বহরমপুর সার্কিট হাউসে জেলার উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক করেছিলেন কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদের তৎকালীন সভাধিপতিকে বাদ দিয়ে। তৃণমূলের আমলেও একই কাণ্ড ঘটছে! ওঁদের কাছে সভ্যতা, সৌজন্য, রীতিনীতি, প্রথা এ সব আশা করা বৃথা! আমরা রেলের অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ করি।” |
তৃণমূলের তরফে হুমায়ুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ওই বৈঠকে সাংসদ ও বিধায়কদের থাকার কথা নয়। তবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্যবাবু থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি অধীরের অনুমতি ছাড়া এক পা-ও চলেন না বলে তাঁকে আমন্ত্রণ করা হয়নি! হুমায়ুনের কথায়, “অধীরবাবু মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। তিনি শিলাদিত্যবাবুকে ওই সভায় যাওয়ার অনুমতি দিতেন না, আমরা ভাল করেই জানি। তাই যিনি নিমন্ত্রণ রক্ষা করবেন না, তাঁকে নিমন্ত্রণ করা হবে কেন? তাই আমরা তাঁকে নিমন্ত্রণ করতে নিষেধ করেছি!”
পাশের জেলা নদিয়ায় অবশ্য এত টক্কর নেই। জেলা পরিষদ এবং অধিকাংশ পুরসভাও তৃণমূলের হাতে। কিন্তু অধীরের ঘাঁটি বলেই মুর্শিদাবাদে উত্তেজনা বেশি। পঞ্চায়েত ভোট এবং সদ্যসমাপ্ত বহরমপুরের পুরভোটে স্পষ্ট উপস্থিতি জাহির করে তৃণমূল অধীরের জেলাতে রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়িয়েছে। জেলা তৃণমূলের অনুমান, মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক থেকে উন্নয়নের বার্তা লোকসভা ভোটের আগে মুর্শিদাবাদের মানুষের কাছে ইতিবাচক হবে। মুকুল রায় বলেন, “লোকসভা ভোটের অনেক দেরি আছে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর প্রশাসনিক কর্মসূচির অঙ্গ।” তৃণমূল সূত্রের খবর, দুই জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি ঘিরে নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরী দত্ত ও মুর্শিদাবাদের নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতির দেখভাল করেছেন মুকুলবাবুই। |