|
|
|
|
বাসে ওঠাই কি ভুল ছিল, আজও ভাবেন বন্ধু
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি
১৬ ডিসেম্বর |
আতঙ্কের চুরাশি মিনিট। পারলে জীবন থেকে মুছে দিতেন সময়টা। কিন্তু তা যে হয় না, সেটাও বিলক্ষণ জানেন। মাঝেমধ্যে তাই নিজের মনে বলে ওঠেন, “কেন যে সে দিন ওই বাসে চড়তে গেলাম? আমিই কি সে ঘটনার জন্য দায়ী?”
বছর গড়ালেও এ প্রশ্নের উত্তর পাননি দিল্লি গণধর্ষণের একমাত্র সাক্ষী, নির্ভয়ার সেই বন্ধু। ২০১২-এর ১৬ ডিসেম্বর তাঁর সঙ্গেই মুনিরকা থেকে বাসে উঠেছিলেন নির্ভয়া। তার পর যা হয়েছিল আজ তা মনে করতে চান না বছর উনত্রিশের যুবক। কিন্তু তিনিই বলছেন, “আমি সে রাতের কথা জানাতেই বেঁচে রয়েছি।” কী হয়েছিল সেই রাতে, তা গোটা দেশ জানে। ‘লাইফ অব পাই’ দেখে ফেরার পথে বেসরকারি বাসে চড়েছিলেন দু’জন। ছয় অভিযুক্তের এক জন প্রথমে টিকিটও চাইতে আসে তাঁদের কাছে। “কিন্তু কেন জানি না মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঝামেলা হতে চলেছে।” ভাবনার ঘোর কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বাসের দরজার ছিটকিনি পড়ে যায়। নিভে যায় আলো। তার পর......
অর্ধচেতন অবস্থায় যুবক দেখতে পেয়েছিলেন, নারকীয় অত্যাচার চলছে নির্ভয়ার উপর। কিন্তু তখন চিৎকারের ক্ষমতা নেই। জ্ঞান ফিরলে দেখেন, দু’জনেই রাস্তায় নগ্ন অবস্থায়। রক্তাক্ত, আহত। “ওই অবস্থায় গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কেউ সাহায্য করেননি।” সে ক্ষোভ আজও তাড়া করে যুবককে। তবে চার অভিযুক্তের ফাঁসির সাজার কথা জেনে যেন কিছুটা হলেও খুশি নির্ভয়ার বন্ধু। এখন একটাই ইচ্ছা, নাবালক অপরাধীটি যেন আরও ভয়ানক সাজা পায়।
কিন্তু কোনও অপরাধ না করেও কীসের সাজা পাচ্ছেন নির্ভয়ার শেষ সময়ের এই সঙ্গী? দিল্লিতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় মিলেছে কাজ। এখন সেই কাজের আড়ালেই কাটছে দিনগুলো। কখনও আবার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রাতের ডিউটিও চেয়ে নেন তিনি। তাঁর যুক্তি, “কাজ করে এতটাই ক্লান্ত হতে চাই যাতে সহজে ঘুমিয়ে পড়তে পারি।” এক বছর আগের স্মৃতি থেকে বাঁচতে এটাই এখন তাঁর মন্ত্র। বন্ধুবান্ধব দূর অস্ত, বাবা-মাকেও জানতে দেন না কেমন আছেন তিনি। এমনকী, ছেলের বর্তমান ঠিকানাটুকুও জানেন না তাঁরা। যোগাযোগের মাধ্যম বলতে মুঠোফোন। যুবকের নিজের বয়ানে, “আমি যা দেখেছি, তার পর নতুন করে জীবন শুরু করাটা খুব সমস্যার। .........তাই সকলের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম।” কিন্তু তাতে লাভ হয়েছে কি?
নির্ভয়ার বন্ধু জানিয়েছেন, এখন আর আগের মতো বিহ্বল হন না তিনি। “বাবা-মা আমাকে বিয়ে করার জন্য জোর দিচ্ছিলেন। কিন্তু মামলা চলছিল বলে তখন না করে দিই। তবে এখন আমার আর আপত্তি নেই।”
তা হলে নির্ভয়ার স্মৃতি কি এ বার ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাবে? মাথা নাড়েন যুবক। বছর পেরিয়েও যাঁর স্মৃতিকে কাজের আড়ালে লুকোতে হয়, তাঁকে ভোলা সম্ভব নয়।
যেমন ভোলেনি দিল্লি, কলকাতা। রাজধানীতে এ দিন নির্ভয়া স্মরণে জ্বলে মোমবাতি, মিছিলে যোগ দেন মানুষ। শীতের জড়তা কাটিয়েও পথনাটিকা এবং গানের মাধ্যমে চলে নির্ভয়া-স্মরণ। মুনিরকার যেখান থেকে বাসে চেপেছিলেন বছর তেইশের ওই যুবতী, সেখানে অনেকে মোমবাতি জ্বালান। কলকাতাতেও সোমবার সম্পূর্ণ দুই ভিন্ন মেরুর রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠন নির্ভয়া-স্মরণে যোগ দেয়। বিজেপি-র মহিলা মোর্চা কলেজ স্ট্রিটে নির্ভয়ার স্মরণসভায় নারী নিগ্রহের প্রতিবাদ করে। এসইউসি-র ছাত্র, যুব এবং মহিলা সংগঠন হেদুয়া থেকে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল করে। ‘নারী নিগ্রহ বিরোধী কমিটির তরফে বিভাস চক্রবর্তী, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, মীরাতুন নাহার-সহ বিশিষ্ট জনেরা ধর্মতলায় সভা করেন। বিভাসবাবু বলেন, “শুধু আইন দিয়ে হবে না। নারী নিগ্রহ বন্ধ করতে হলে সমাজের মনোভঙ্গি বদলানো চাই।”
সে বদল কবে আসবে, কেউ জানে না। বছর গড়ালেও তাই পথে প্রান্তরে, ধর্ষিত হতেই থাকেন নির্ভয়ারা। মোমবাতির আলো আর মিছিলের স্লোগানেই শেষ হয়ে যায় তাঁদের স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ। |
|
|
|
|
|