কেন্দ্রের নির্দেশেও বরাতের
নিলামে গড়িমসি হলদিয়ায়
নিলাম করে পণ্য-খালাসকারী সংস্থা নির্বাচনের জন্য হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিল জাহাজ মন্ত্রক। মাস ছয়েক আগে আসা সেই নির্দেশ কার্যকর করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি নিলাম-নীতির খসড়া তৈরি করে তা পাঠিয়েও দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু এখনও নিলাম শুরু করা যায়নি। কর্তাদের কারও কারও দাবি, বন্দরেরই একটি অংশ পণ্য খালাসে প্রতিযোগিতা না চাওয়ায় এই পরিস্থিতি।
বন্দর সূত্রের খবর, হলদিয়া থেকে এবিজি-র প্রস্থানের পর পণ্য খালাস নিয়ে চরম অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছিল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জাহাজ মন্ত্রকের বন্দর সংক্রান্ত ডিরেক্টর সম্বিত ত্রিপাঠির নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্তকারী দল এ বছরের গোড়ায় হলদিয়ায় আসে। জুনে মন্ত্রক জানিয়ে দেয়, পণ্য খালাসে একচেটিয়া কারবার আর চলবে না। নিলামের মাধ্যমে এই কাজ কী ভাবে করা যাবে, তা ঠিক করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ুন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তৈরি করে তা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয় কমিটি।
সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিলামের ক্ষেত্রে পণ্য খালাসের একটি সর্বোচ্চ দর ঠিক করে দেওয়া যেতে পারে। এই দরের উপরে যে সংস্থা বন্দরকে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিতে রাজি হবে, তাকেই পণ্য খালাসের লাইসেন্স দেওয়া হোক। কমিটির এক সদস্য বলেন, “হলদিয়া বন্দরের ক্ষেত্রে পণ্য খালাসের দর টন-পিছু ১১০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। নিলাম নীতি চালু হলে ‘হ্যান্ডলিং এজেন্ট’-দের (অর্থাৎ যাঁরা বার্থ থেকে বন্দরের বাইরে পণ্য বার করে আনবেন) এই দরের উপর দাঁড়িয়েই বন্দরকে লভ্যাংশের অংশ দিতে হবে। এই নিয়ম চালু হলে হলদিয়ায় পণ্য খালাসের খরচ প্রতি টনে ৩০-৪০ টাকা কমে যাবে।”
কিন্তু নিলাম ডাকার দীর্ঘসূত্রতায় সেই সম্ভাবনাও ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্দরের কেউ কেউ জানালেন, পারাদ্বীপে জাহাজ থেকে পণ্য নামিয়ে তা রেলের রেকে তুলতে প্রতি টনে ৮০ টাকা খরচ হয় বিভিন্ন সংস্থার। হলদিয়ায় সেই কাজের জন্যই ১৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন আমদানি-রফতানি সংস্থার কর্তারা মনে করেন, নিলামের মাধ্যমে সংস্থা ঠিক করে পণ্য খালাস চালু হলে কারও একাধিপত্য থাকবে না। এতে খরচ কমবে। লাভ হবে বন্দর ব্যবহারকারীদের।
তা হলে কেন নিলাম-নীতি চালু হচ্ছে না?
কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁর বক্তব্য, “দেশের ১১টি বড় বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর জন্য অভিন্ন নীতি তৈরি করতে জাহাজ মন্ত্রকের উপদেষ্টা (উন্নয়ন) পোইয়ামোজির নেতৃত্বে অন্য একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটির সুপারিশ আসার আগে হলদিয়ার জন্য আলাদা ভাবে কিছু করা যাচ্ছে না।” যদিও বন্দর কর্তাদের অন্য একটি অংশের মতে, ‘স্টিভেডরিং’ (শুধু জাহাজ থেকে পণ্য নামানো) নিয়ে অভিন্ন নীতি তৈরির সঙ্গে হ্যান্ডলিং এজেন্ট ঠিক করার কোনও সম্পর্কই নেই। ফলে নিলামের ভবিতব্য কী হবে, সেটাই প্রশ্ন।
তবে এবিজি-বিদায় নিয়ে তোলপাড় এবং তার জেরে কেন্দ্র নড়ে বসায় ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে পণ্য খালাস নিয়ে আশা দেখছেন অনেকেই। যে বার্থগুলিতে নিলামের নির্দেশ দিয়েছে জাহাজ মন্ত্রক, সেগুলি যন্ত্রচালিত নয়। তবে ২ ও ৮ নম্বর বার্থ দু’টি যন্ত্রচালিত। এই দুই বার্থের জন্য দু’বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, কিন্তু তেমন সাড়া মেলেনি। তাই এ বার তৃতীয় বারের জন্য দরপত্র চাওয়া হয়। মোবাইল হারবার ক্রেনের মাধ্যমে পণ্য খালাসে আগ্রহী ৮টি সংস্থা গত শুক্রবার বন্দর কর্তাদের সঙ্গে একপ্রস্ত (প্রি-বিড) আলোচনা করে গিয়েছে। এদের মধ্যে আদানি গোষ্ঠীও আছে। তারাই হলদিয়ার সব চেয়ে কাছে ওড়িশার ধামরা বন্দর হাতে নিচ্ছে। এ ছাড়াও সঞ্জয় সুরেখার কনকাস্ট, ইউনির্ভাসাল সিপোর্টস, আইএসএইচপিএল, ওড়িশা স্টিভেডরস, টিএমআইএলএল, সৃঞ্জয় বসুর রিল্পে এবং জেএম বক্সি ওই দুটি বার্থে যন্ত্রনির্ভর পণ্য খালাস করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যান কাহালোঁ বলেন, “প্রি-বিড আলোচনা ভাল সাড়া মিলেছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত ক’জন আসে।” ২৩ ডিসেম্বর সংস্থাগুলি দরপত্র জমা দেবে। সব ঠিক থাকলে জানুয়ারির মধ্যেই ওই দু’টি বার্থে ফের যন্ত্রের মাধ্যমে পণ্য খালাস শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্দরের কর্তারা জানাচ্ছেন, তিন নম্বর অয়েল জেটি দিয়ে বছরে ৩০ লক্ষ টন এলপিজি আমদানির জন্যও ছ’টি সংস্থা এগিয়ে এসেছে। ভারত পেট্রোলিয়ামের পাশাপাশি এজিস লজিস্টিক্স, কেআইএস অয়েল, গণেশ বেঞ্জোপ্লাস্ট, জেভিএল রিফাইনারি এবং ইন্ডিয়া মোলাসেস হলদিয়া দিয়ে এলপিজি আমদানিতে বিশেষ আগ্রহী।
ইতিমধ্যে রবিবার ফের হলদিয়া বন্দরের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার তিনি বলেন, “আমরা চাই হলদিয়া পোর্ট ট্রাস্ট গড়া হোক। হলদিয়া বন্দরের কিছু আধিকারিক কাজ করছেন না। ফলে বন্দর নানা অসুবিধায় পড়ছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.