পির সেজে প্রতারণা, ধৃত বসিরহাটে
তাদের কাজ ছিল বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সেখানকার কয়েকটি পরিবারের সাংসারিক সমস্যার কথা জেনে নেওয়া। এর পরে পির সেজে সেই সব বাড়িতে গিয়ে গড় গড় করে তাদের সমস্যার কথা বলে দেওয়া। নিজেদের সমস্যার কথা এ ভাবে অচেনা মানুষের কাছে শোনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই ওই ‘পির’-উপর বিশ্বাস জন্মাত পরিবারের লোকদের।
আর তার পরেই ‘অপারেশন’ শুরু হত পিরের। সমস্যার কথা শুনে পির বাতলে দিত প্রতিকারের উপায়। আর সেই ‘প্রতিকারের’ ফাঁদেই কখনও টাকা, কখনও সোনার গয়নায় প্রতারিত হত ওই সব পরিবার। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, বাদুড়িয়া, হাবরা-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এ ধরনের প্রতারণার খবর পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। এর পরেই শনিবার বসিরহাটের খোলাপোতার ময়নালি গ্রাম থেকে ওই প্রতারণা চক্রের পাণ্ডা হেল্লাল সর্দারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বসিরহাট থানায় ধৃত চার প্রতারক। ডানদিক থেকে প্রথম চক্রের পাণ্ডা হেল্লাল সর্দার।—নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত হেল্লালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বারাসতের একটি হোটেল থেকে ওই রাতেই আতিয়ার রহমান, আমির হোসেন ও মোস্তাহার আলি নামে ওই প্রতারণা চক্রের বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। সকলেরই বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার কাতলামারি গ্রামে। হেল্লাল ও তার দলবল জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে টাকা, গয়না নিয়ে চম্পট দিত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খোলাপোতার ময়নালি গ্রামের বাসিন্দা মহিউদ্দিন সর্দার ও তাঁর স্ত্রী মমতাজ বিবির কোনও পুত্রসন্তান নেই। এ জন্য তাঁরা চিকিত্‌সক দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে মানত করেছিলেন। পুত্রসন্তান না হওয়া নিয়ে পরিবারেও অশান্তি ছিল। এ সব খবর সংগ্রহ করে হেল্লাল। গত বুধবার বাড়িতে মহিউদ্দিন না থাকার সুযোগে সেখানে হানা দেয় ‘পির’ হেল্লাল। নিজের পরিচয় দিয়ে পরিবারের সকলের কুশল কামনা করে সন্তান নিয়ে তাদের পরিবারে যে অশান্তি চলছে তা মমতাজ বিবিকে বলে। এমনকী তাদের পুত্রসন্তান না হলে শীঘ্রই মহিউদ্দিনের মৃত্যু ঘটবে বলে জানায়। অচেনা ‘পির’ এসে এ ভাবে তাঁদের পরিবারের সমস্যার কথা সব বলে দেওয়ায় তার কথায় বিশ্বাস করেন মমতাজ। কী করলে তিনি সন্তান পেতে পারেন তার উপায় জানতে চান ‘পির’-এর কাছে। এর পরেই হাত সাফাইয়ের কাজ শুরু করে হেল্লাল। মমতাজ বিবিকে সে বলে, একটা পাত্রে রাখা মন্ত্রপূত জলের মধ্যে সোনার অলঙ্কার রাখলে সব বিপদ কেটে যাবে। একদিন পরে ওই জল খেলে মনের ইচ্ছা পূরণ হবে। ‘পির’-এর নিদান শুনে আর দেরি করেননি মমতাজ। কথামত গলার কয়েক ভরির সোনার হার, কানের দুল ও হাতের বালা খুলে একটি জলভরা ঘটির মধ্যে ফেলে দেন। মমতাজের সামনেই পাত্রটি হাতে নিয়ে এদিক-এদিক ঘুরিয়ে সেটি ফের মমতাজের হাতেই ফিরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে যায় ‘পির’। একদিন পরে ঘটি থেকে জল খেতে গিয়ে মমতাজ দেখেন তার মধ্যে কোনও অলঙ্কারই নেই। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে বসিরহাট থানায় অভিযোগ করেন মমতাজের পরিবার। অভিনব উপায়ে প্রতারণার খবর চাউর হয়ে যায় আশপাশের এলাকায়। ইতিমধ্যে বাদুড়িয়া এবং হাবরাতেও একই ধরনের প্রতারণার খবর পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।
শনিবার বিকেলে হেল্লাল ফের ‘কাজে’ ময়নালি গিয়ে এদিক ওদিক ঘোরার সময় তাকে চিনে ফেলে সহিদুল মণ্ডল ও ইসমাইল মণ্ডল নামে দুই গ্রামবাসী। চিত্‌কার-চোঁচামেচিতে লোকজন জড়ো হয়ে শুরু হয় গণধোলাই। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার ও গ্রেফতার করে। শেষ পর্যন্ত জেরায় এই অভিনব প্রতারণার কথা স্বীকার করে হেল্লাল। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় হেল্লাল জানায়, বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে লোকজনের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে, মিষ্টি কথা বলে সে বিভিন্ন বাড়ির সমস্যার খবর সংগ্রহ করত। এর পর সেই সব বাড়িতে গিয়ে কাজ হাসিল করত সে। তার কাছে খবর পেয়ে ওই রাতেই বসিরহাট থানার এস আই লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ বাহিনী নিয়ে গিয়ে বারাসতের একটি হোটেল থেকে হেল্লালের তিন সঙ্গীকে গ্রেফতার করে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.