‘সাত সমুদ্র’ পার হওয়ার সেই উড়ানে সবাইকে পিছনে ফেলল এক ‘নারী’!
উড়ান শুরু হয়েছিল মঙ্গোলিয়ায়। শেষ হল দক্ষিণ আফ্রিকায়। কয়েক হাজার কিলোমিটার উড়ে সবার আগে সেখানে পৌঁছল ‘পাংতি’ নামের একটি স্ত্রী বাজপাখি। পিঠে সোলার-প্যানেল, অ্যান্টেনা লাগানো থাকলেও, তার উড়ানের গতিতে পিছিয়ে পড়ল পুরুষ পাখি ‘নাগা’। আরও পিছনে রইল ওখা নামের ‘আমুর ফ্যালকন’ প্রজাতির একটি বাজপাখি।
নাগা, ওখা আর পাংতি—এই তিনটি আমুর ফ্যালকনের জন্য, দেশ-বিদেশের পাখি সংরক্ষণ উদ্যোগের শিরোনামে এসেছে নাগাল্যান্ড। মঙ্গোলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে যায় আমুরের দল। যাত্রাপথের মাঝখানে নাগাল্যান্ডের ওখা জেলায় লক্ষাধিক আমুর প্রজাতির বাজপাখি শিকার করা হত। তা রুখতে এগোয় কয়েকটি বন সংরক্ষক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘ডব্লিউটিআই’, ‘ন্যাচরাল নাগাস’ এবং রাজ্য বন দফতর আমুর বাঁচাতে যৌথভাবে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। গ্রামবাসীদের সচেতন করে, তাঁদেরই সংরক্ষণের কাজে নামান পরিবেশপ্রেমীরা। সংস্থাগুলির দাবি, তার জেরে এ বছর একটিও বাজপাখি মারার ঘটনা ঘটেনি। নাগাল্যান্ড বন দফতরের উদ্যোগে, তিনটি আমুর ফ্যালকনের পিঠে বেঁধে দেওয়া হয় সোলার প্যানেল, অ্যান্টেনা। সে গুলির নাম দেওয়া হয় ‘নাগা’, ‘ওখা’ এবং ‘পাংতি’। ৭ নভেম্বর দয়াং উপত্যকা থেকে নাগা ও পাংতি দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে উড়ে যায়। ওখা যাত্রা শুরু করে দু’দিন পর।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল এম লোকেশ্বর রাও জানান, মণিপুরের সেনাপতি, চূড়চাঁদপুর, মিজোরামের আইজল, বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর, অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া, কর্ণাটক হয়ে আরব সাগরের উপর দিয়ে দীর্ঘ উড়ান শেষ করে ২০ নভেম্বর আফ্রিকার সোমালিয়া থেকে কেনিয়া পৌঁছয় নাগা। পাংতির যাত্রাপথ ছিল মোটামুটি একই। সেটি নাগার পরপরই কেনিয়া পৌঁছেছিল। ওখা ছিল কিছুটা পিছনে।
গত কাল পাংতি প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার বতসোয়ানা গিয়ে পৌঁছেছে। নাগা, ওখা শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে উড়ান শুরু করেছে। লোকেশ্বর জানান, প্রতিটি বাজের পিঠে বাঁধা ‘স্যাটেলাইট ট্র্যাকার’-এর দাম ৭ লক্ষ টাকা। তিন জনই সুস্থ ভাবে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই, প্রকল্পের প্রথমার্ধ সফল। হাঙ্গেরি এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় পাখি বিশেষজ্ঞরা নাগা, ওখা, পাংতির উপর নজর রাখছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, নাগার সঙ্গে জুটি বেঁধেছে ওখা। তাই, তার সঙ্গেই কেনিয়ার টাসাভো জাতীয় উদ্যানে দীর্ঘ সময় কাটায়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে প্রথমবার এই প্রজাতির পাখির দীর্ঘ যাত্রাপথে নজরদারি চালানোর জন্য ১০টি আমুরের গায়ে স্যাটেলাইট-ট্র্যাকিং যন্ত্র বাঁধা হয়েছিল। এদের মধ্যে মাত্র ১টি পাখি দক্ষিণ আফ্রিকার নিউ ক্যাসলে ফিরে আসে। বাকিরা পথেই মারা গিয়েছিল।
যে গ্রামের নামে পাংতির নামকরণ, সেই পাংতি-র গ্রাম প্রধান রণচামো শিগিরি বলেন, “পরের বছর পাংতিকে ফের আমাদের গ্রামে দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। এ বছরে গ্রামবাসীরা একটিও আমুর মারেননি। আশা করি, বন বিভাগ আমাদের গ্রামে পর্যটন আবাস তৈরির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পালন করা হবে।” |
পাখি শিকার
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
মণিপুরের লোকটাক সরোবরে প্রকাশ্যেই পরিযায়ী পাখি শিকার করা হচ্ছে। চিন্তিত পক্ষীপ্রেমীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বিষ্ণুপুর জেলার লোকটাক সরোবরের জলে বিষ মেশাচ্ছে স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশ। মরা মাছের ঝাঁক জলে ভেসে উঠলেই অপেক্ষা শুরু শিকারিদের। পরিযায়ী পাখিগুলি মরা মাছগুলি খেয়ে ছটফট করতে করতে জলে বা জলের আশপাশে গিয়ে পড়ছে। ওই পাখিগুলি তুলে নিচ্ছে শিকারিরা। |