|
|
|
|
নতুনত্বে জোরালো সংলাপে দুর্বল
কিন্তু চরিত্রগুলো দাগ কাটে। লিখছেন আবির মুখোপাধ্যায় |
প্রেগনেন্ট-প্রেগ টেস্ট কার্ড-অ্যাবর্শন শব্দগুলো এখন আর গোপনে বলতে শোনা যায় না কাউকে!
কলেজ-ক্যাম্পাসে জেন-ওয়াইয়ের মুখেও দিব্যি শোনা যায় কথাগুলো।
ব্রেক-আপের মতোই এটাও স্রেফ একটা দুর্ঘটনা! ‘অন্তরাল’ ছবির মৃন্ময়ীর কাছেও ঠিক তাই। কলেজবেলার এমন ‘আনপ্রোটেক্টেড সেক্স’ নিয়েই পরিচালক বিনয় মিত্রের প্রথম ছবি ‘অন্তরাল’।
বক্স অফিস যাই বলুক, সমকালকে ছুঁতে বাংলা ছবির বিষয় যখন ক্লিশে হয়ে পড়ছে, তখন সময়ের দাবী মেনেই এসেছে এই ছবি।
এমন একটি জরুরি বিষয় নিয়ে ছবি, তাই নিঃসন্দেহে পরিচালক সাধুবাদযোগ্য।
কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাসের ফর্ম ছিল ডাইরির। পরিচালকও ডাউন মেমরি লেন-য়ে হেঁটে গল্প বলেছেন। কোথাও কোথাও ক্লান্তিকর মনে হলেও ছবিতে সে গল্প যেন শেষ পাতায় এসে ফিরে পড়া। বারবার কাফকা ‘মেটামরফোসিস’কে মনে করিয়ে গল্প বলেছে ছবির প্রধান পুরুষ চরিত্র সুতীর্থ (হর্ষ ছায়া)।
গল্পের যেখানে শুরু, শেষ সেই লাটাগুড়ির উজাড় প্রকৃতিতে। ছবিতে দুটি চরিত্রের যে রূপান্তর ঘটে, তা কাফকার ভাবনাকে ছুঁয়ে। অথচ ঈষৎ অন্য ভাবে। ছবির চরিত্র দু’টির রূপান্তর ঘটে শরীরের নয়, মনের। এবং শেষমেশ সামাজিক ভাবেও। তাই রূপান্তরের ভাবনাতেও নতুনত্ব আছে।
চেনা শহরের জানা গল্পের এ ছবিতে দর্শক দেখে, সম্মান রক্ষায় ব্যস্ত প্রতাপশালী নেতা প্রবীর দাশগুপ্ত তাঁর অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে মৃন্ময়ীকে গর্ভপাত করাতে পাঠায় গায়নকোলজিস্ট অন্তরা রায়চৌধুরী (দেবশ্রী রায়)-র কাছে। অন্তরা আন্টি যাকে বলে ‘মিশন’। ছবিতে মৃন্ময়ী ভুল স্বীকার করে, কিন্তু ভেঙে পড়ে না। বরং বলে, “আমার জীবনে একটা অ্যাকসিডেন্ট ঘটে গিয়েছে। অ্যান্ড আই নিড হেল্প।” মৃন্ময়ীর চরিত্রের এই দৃঢ়তা অন্তরার স্বামী সুতীর্থকে তার পাশে এনে দেয়। পরে অন্তরাকেও। এভাবে গল্পের শরীর ভিড় করে থাকা চরিত্রদের রূপান্তর ঘটে ফ্রেম থেকে ফ্রেমে। |
|
অন্তরা চরিত্রের দ্বন্দ্ব হুবহু উঠে এসেছে দেবশ্রীর অভিনয়ে। কোথাও অতি নাটকীয় মনে হয় না তাঁর অভিনয়। পর্দায় অবাঙালি হর্ষের অভিনয়ও স্বাভাবিক। হর্ষ এ ছবির জন্য বাংলা শিখে ডাবিং করেছেন। কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃন্ময়ীর ভূমিকায় পরিণত সায়নী। ‘অলীক সুখ’-য়ের পর এটাই তাঁর বড় রিলিজ। গর্ভপাত নিয়ে তাঁর স্বপ্ন-যন্ত্রণা ধরা পড়েছে ছবিতে।
চরিত্রের ভিতর ঢুকে পড়েছেন সুতীর্থর বন্ধু পুলকের চরিত্রে চন্দন সেন, অনুপমার চরিত্রে শ্রীলা মজুমদার, প্রিয়ার চরিত্রে অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ও। মৃন্ময়ীর মায়ের চরিত্রে মন্দ লাগে না মমতাশঙ্করকেও।
অভিনয় ও সঙ্গীত প্রত্যাশা জাগালেও, গল্প বলার বাঁকে কয়েকটি জায়গায় সংলাপ বেশ দুর্বল। মনে হয় বিচ্যুতি এখানেই। |
|
|
|
|
|