সময়ে জল তো আসে না। পর্যাপ্ত জলও মেলে না। তার উপর গত ৮ ডিসেম্বর থেকে একশোর বেশি বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানীয় জল সংগ্রহ করতে হিমসিম খাচ্ছেন বাড়ির সদস্যরা। সমস্যাটি প্রান্তিক এলাকার।
কেন এই পরিস্থিতি? বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রান্তিক এলাকায় দেড়শোর কিছু বেশি বাড়ি রয়েছে। তাদের মধ্যে পানীয় জলের বৈধ সংযোগ রয়েছে মাত্র ৫০টি বাড়িতে। কিছু বাড়িতে রয়েছে নিজস্ব পাম্প। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে অনেকে জোগানের মুখ্য সংযোগ থেকে জল নিচ্ছেন। কোথাও কোথাও আবার এই পানীয় জল ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়ি তৈরির মতো কাজে। বেআইনি সংযোগ নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন বিডিও শমিক পানিগ্রাহী। শমিকবাবু বলেন, “সব স্তরে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। শীঘ্রই সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি বৈঠকে আমরা বসছি। চেষ্টা করছি জল পরিষেবা স্বাভাবিক করার।”
এ দিকে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই এলকার বাসিন্দার এখন মুল চিন্তা পানীয় জল সংগ্রহ করা। |
সুরাহা মিলবে কোন পথে? প্রান্তিকের প্রতিটি বাড়িতেই এখন এমন দৃশ্য। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী |
শুক্রবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ রাস্তায় দেখা হল সচিনাথ মিত্রের বাড়ির কেয়ারটেকার, পেশায় রিকশা চালক মহাদেব দলুইয়ের সঙ্গে। জলের কী অবস্থা প্রশ্ন করতেই এক প্রকার রেগেই গেলেন তিনি। পাল্টা জিজ্ঞাসা করলেন, “পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে আর কত দিন লাগবে বলতে পারেন? জল ছাড়া থাকা যায় না কি! সপরিবারের খবারের জল সংগ্রহ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।”
একটু এগোতেই চন্দ্র বসুর বাড়ির কেয়ারটেকার সঞ্জিত ঠাকুর উঠোনে বসে রয়েছেন। তিনি বললেন, “জলের খুব সমস্যা। অন্য পাড়ায় গিয়ে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।”
প্রান্তিক এলাকায় জলের এই সমস্যা কি এ বার প্রথম? জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন চিকিৎসক প্রণবকুমার সরকার। তিনি বললেন, “পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে বারে বারে সর্বস্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু নিট ফল শূন্য। টানা ছ’দিন ধরে এলাকায় পানীয় জলের জোগান সম্পূর্ণ বন্ধ। স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ব্লক প্রশাসন, মহকুমা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের সব স্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মিটছে কই!” একটু সামনের দিকে চিকিৎসকের ‘পাঁচ-বন্ধু’র বাড়ি। ওই বাড়ির কেয়ারটেকার বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, “প্রায়ই পানীয় জলের সমস্যা হওয়ায় বাড়ির মালিক দু-দু’টি পাম্প বসিয়েছেন। যাঁদের ক্ষমতা নেই, তাঁদের কি হবে?”
প্রান্তিক পশ্চিম আবাসিকদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় কয়েকশো পরিবার বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ বয়স্ক ও অবসরপ্রাপ্ত। বছরের বেশিরভাগ দিন এলাকায় নানা কারণে, অকারণে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ থাকে। এই নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বোলপুর ব্লকের বিডিও থেকে শুরু করে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন। প্রান্তিক পশ্চিম আবাসিক ফোরামের সভাপতি অর্ধেন্দু শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কখনও যান্ত্রিক গোলযোগ তো, কখনও অন্তর্ঘাত করা হচ্ছে। পানীয় জলের বৈধ সংযোগ আমরা নিয়েছি। অথচ আমরাই জল পাচ্ছি না। বিষয়টি সব মহলে জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যা তো মিটছে না।” |