|
|
|
|
নয়া বাসে মঞ্জুরি দিল্লির, ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন
অত্রি মিত্র • কলকাতা |
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি মেনে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে রাজ্যকে আরও ৪৫টি নতুন বাস দিতে রাজি হল কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। প্রকল্পের পিছনে যা আর্থিক দায়, তার সিংহভাগ বহন করতেও কেন্দ্র রাজি। কিন্তু যাত্রী-ভাড়া না বাড়িয়ে স্রেফ কিছু নতুন বাস কিনে গণ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব কি না, রাজ্যের পরিবহণ-কর্তাদের একাংশই সে সম্পর্কে সন্দিহান।
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সম্প্রতি সব রাজ্যকে বার্তা দিয়েছিল, জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম)-এর বর্ধিত প্রকল্পের আওতায় তারা সারা দেশে হাজার দশেক নতুন বাস কেনার জন্য আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করবে। প্রাথমিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৮২৯টি বাস বরাদ্দ হয়েছিল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে ১০০টি, আসানসোল-দুর্গাপুরে ৯৭টি আর কলকাতায় ৬৩২টি। শুক্রবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে মন্ত্রকের কর্তারা ভিডিও কনফারেন্স করেন। ভিডিও-বৈঠকে রাজ্যের তরফে বলা হয়, জেলার চার শহরে আরও বাস দরকার। নবান্ন-সূত্রের খবর: রাজ্যের আর্জি কেন্দ্র মেনে নিয়েছে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে একশোর জায়গায় ১৪০টি বাস নামানোর সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। আসানসোল-দুর্গাপুরে বাসের সংখ্যা ৯৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০২। |
|
অর্থাৎ, সব মিলিয়ে অতিরিক্ত ৪৫টি নতুন বাসের মঞ্জুরি। ৮২৯-এর জায়গায় ৮৭৪। “জেএনএনইউআরএমের বাস নিয়ে রাজ্য সরকার গোড়া থেকে আক্রমণাত্মক ছিল। তার ফল মিলল।” এ দিন মন্তব্য করেন রাজ্য পরিবহণের এক কর্তা। তাঁর আশা, এর সুবাদে আসানসোল-দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চল ও দার্জিলিং-সহ গোটা উত্তরবঙ্গে পরিবহণ ব্যবস্থা মজবুত হবে।
পাশাপাশি নতুন বাসের পিছনে কেন্দ্রীয় ভর্তুকির বহরও বাড়ছে। সরকারি সূত্রের খবর: আসানসোল-দুর্গাপুর ও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে জেএনএনইউআরএমের বাসে কেন্দ্রীয় ভর্তুকির হার এ যাবৎ ছিল ৫০%। এ দিনের বৈঠকের পরে কেন্দ্র তা বাড়িয়ে ৮০% করার ঘোষণা করেছে। এমতাবস্থায় আগামী সাত-দশ দিনের মধ্যে বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। রাজ্যর পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “কেন্দ্রীয় সহায়তার হার
বেড়ে যাওয়ায় কলকাতা ছাড়াও অন্য চারটি শহরে আমরা বাসের সংখ্যা বাড়াতে পারব।”
২০০৯-এ কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, পনেরো বছরের পুরনো সব বাস বসিয়ে দিতে হবে। মহানগরের যান-সঙ্কট সামাল দিতে রাজ্য তখন জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে পাঁচশো নতুন বাস কিনে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু তাতে সমস্যার বিশেষ সুরাহা হয়নি। বছর দুই মাসিক কিস্তি টেনে অধিকাংশ মালিক টাকা মেটানো বন্ধ করে দিয়েছেন। বকেয়ার দায় রাজ্য সরকারেরই ঘাড়ে চেপেছে।
আর এই কারণেই নতুন করে পেতে চলা ৮৭৪টি বাস এ বার বেসরকারি মালিকদের হাতে না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নবান্নের খবর, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি), আসানসোল-দুর্গাপুরে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি) ও কলকাতায় কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)-কে নতুন বাসগুলো চালানোর ভার দেওয়া হবে।
তাতেও কী পরিষেবার হাল ফিরবে?
পরিবহণ-কর্তাদের অনেকেই তেমন আশাবাদী হতে পারছেন না। ওঁদের সংশয়ের মূলে যা, তা হল গণ পরিবহণের মাসুলবৃদ্ধির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অনীহা। বাস্তব পরিস্থিতিও সে দিকে আঙুল তুলছে। জ্বালানি-যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া না-বাড়ায় লোকসানের চাপে বহু রুটে বহু বেসরকারি বাস উঠে গিয়েছে। সরকারি পরিবহণ পরিষেবাও তথৈবচ।
এক পরিবহণ-কর্তা বলেন, “বাসের ভাড়া না-বাড়ায় মালিকদের কোনও লাভ হচ্ছে না। তাই তাঁরা কিস্তির টাকা দিচ্ছেন না। সরকারি নিগম বাস চালালেও সেগুলো লজঝড়ে। ইচ্ছে থাকলেও অর্থাভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না।” এবং ভাড়া না-বাড়ালে নতুন বাস রক্ষণাবেক্ষণেরও টাকা জুটবে না বলে ওঁরা মনে করছেন।
ফলে জেএনএনইউআরএমের বাড়তি বাসের দৌলতেও রাজ্য পরিবহণের বেহাল ছবিটা কাটবে কি না, সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। |
|
|
|
|
|