উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বিবেকানন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠান করেছিল ‘আস্থায়ী’। কবিতাপাঠ ও শ্রুতিনাটকে প্রতিষ্ঠানের শিশুশিল্পীরা শুরুতেই শ্রোতাদের নজর কাড়ে। পরে মূল্যবোধেরই অবক্ষয়ের গল্প সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়ের ‘নিম্নগামী’ পাঠ করলেন আস্থায়ীর শিল্পীগণ। |
অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণে অমলেন্দু ভট্টাচার্য ও সুদর্শনা ভট্টাচার্যের অসাধারণ বাচন ভঙ্গিমায় স্বামীজির প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সব স্বপ্ন’, ‘কেউ কথা রাখেনি’ ইত্যাদি প্রাণবন্ত ও সাবলীল কবিতা পাঠে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়। অনুষ্ঠান সংযোজনায় চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালনায় অমলেন্দু ভট্টাচার্য, অনসূয়া ভট্টাচার্য ও সুদর্শনা ভট্টাচার্য। |
মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান
সুপর্ণা মুখোপাধ্যায় |
আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একক শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান। প্রথম অধিবেশনে তিনি পরিবেশন করেন মেঘ রাগে বিলম্বিত ‘আকুল বিরহিনী’। জোড় অংশে গমক ও হলকের ব্যবহার সাবলীল। ঝাঁপতালে মধ্যলয় ‘গরজে ঘটা ঘন’ বোল, বাটের কাজ ও লয়কারী প্রশংসনীয়। এর পরে দ্রুত একতাল ‘গরজন কে বদরয়া’ দিয়ে মেঘ রাগ শেষ করেন। ‘জাগে কৌন মহলমে সোওয়া রে’ সুন্দর আলাপ দিয়ে শুরু করেন কেদার রাগে মধ্যলয়ে ঝাঁপতাল। দ্রুত তিনতাল ‘আব আ মিল কান্ত হামারি’ দিয়ে শেষ করেন রাগ কেদার। দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি জয়জয়ন্তীর ওপর ‘আমি তোমারি গাহি জয়’ শোনালেন। ‘নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি’ গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন অশোক রায়চৌধুরী এবং হারমোনিয়মে তমাল মিত্র। আয়োজনে ‘মিলনী’। |
পরিমিত রসবোধ
শতরূপা চক্রবর্তী |
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানে বিষ্ণুদেব চক্রবর্তীর প্রথম নিবেদন ছিল রাগ ইমন। বিলম্বিত একতালে নিবদ্ধ বন্দিশে ‘কাহে সখী ক্যায়সে’ খেয়ালটি তাঁর গায়কি ও গোছানো বোলবিস্তারের গুণে মূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর জোয়ারী কণ্ঠের পরিমিত রসবোধে রাগের মেজাজ হয় উন্মীলিত। বিভিন্ন ছন্দযুক্ত তান, বোলতান, নিখুঁত লয়বোধ এবং সর্বোপরি সঠিক রাগদারিতে শিল্পী তাঁর রেওয়াজ ও তালিমের নিদর্শন রাখেন। শেষে সৎতালে নিবদ্ধ ‘দেশ মল্লার’ রাগে সম্পূর্ণ বেনারসী ঢংয়ে একটি ঠুমরী ‘যোবন বরষণ লাগি’ পরিবেশন করে অনুষ্ঠানে একটি অন্য মাত্রা এনে দেন। তাঁর গায়নশৈলীতে পূরব এবং পাঞ্জাব এই দুই অঙ্গই স্পষ্ট অনুভূত হয়। জ্যোতির্ময় রায়চৌধুরীর ঝাঁপতালে বিন্যস্ত তবলা লহরায় আদ্যন্ত মুন্সিয়ানার ছাপ আছে। ফারুকাবাদ ঘরানার কিছু ভালো বাদনশৈলী তাঁর বলিষ্ঠ হাতে শুনতে ভাল লাগে। এ দিনের শেষ শিল্পী ছিলেন মধুমিতা রায়। আয়োজক প্রাচীন কলাকেন্দ্র। |
সম্প্রতি রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচারের আয়োজনে ভক্তিসঙ্গীত শোনালেন জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়। ‘মন চল নিজ নিকেতনে’, ‘হে গোবিন্দ’, ‘অরুণকান্তি কে গো’ যেন ভক্তিরসে পরিপূর্ণ করে দেয় প্রেক্ষাগৃহকে। শিল্পীর দেশমল্লারে ‘আশীর্বাদের আঝোর ধারায়’ এবং বসন্তবাহারে ‘মা তোর এমন রূপ দেখিনি’ গান দুটি মায়াময় পরিবেশ গড়ে তোলে। গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘যোগাসনে মহাধ্যানে’ এবং ‘দুখিনী ব্রাহ্মণী কোলে’ (ঝাঁপতাল) গান দু’টিও শুনতে মন্দ লাগেনি। নজরুলের ‘হারামনি’ পর্যায়ের গান সুঘরাই কানাড়ার আশ্রয়ে গড়ে ওঠা ‘ভারতলক্ষ্মী মা আয় ফিরে’ এ দিনের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন। |
সম্প্রতি ‘টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুনন্দা ঘোষের একক গানের বিষয় ছিল ‘অহিংসা ও স্বদেশপ্রেমে রবীন্দ্রনাথ’। দেশ রাগের উপর রচিত ‘বন্দেমাতরম’ দিয়ে শুরু। পরের গান ভৈরবী রাগে ‘অয়ি ভুবন মনমোহিনী’ বহু দিন পরে শোনা গেল। গানটির মধ্যে দিয়ে মাতৃবন্দনা ও স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে। এর পর ‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি’, ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক’, ‘আমাদের যাত্রা হল শুরু’ প্রভৃতি গানগুলিতে ধরা পড়ে শিল্পীর নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ছোঁয়া। তবে এ দিনের শ্রেষ্ঠ নিবেদন ‘সার্থক জনম আমার’ বেশ মনোগ্রাহী। |