সম্পাদকীয় ১...
পথহারা
রাজধানীতে অন্তত আম আদমির মরসুম চলিতেছে। ভারতীয় রাজধানীতে শব্দটি আমদানি করিয়াছিল কংগ্রেস। অরবিন্দ কেজরিওয়াল শব্দটি দখল করিয়াছেন তো বটেই, ‘আম আদমি’ নামক শ্রেণিটি যে ভঙ্গিমায় কংগ্রেসকে পথে বসাইল, তাহা আকবর রোড এবং বিশেষত ১০ জনপথের পক্ষে মর্মান্তিক। কংগ্রেসের নয় বৎসরের শাসনে আম আদমি কেমন আছেন? তাঁহারা ভাল নাই। অর্থনীতি তাঁহাদের মারিয়া রাখিয়াছে। এক দিকে প্রবল মূল্যস্ফীতি, আর অন্য দিকে অর্থনীতির শ্লথ চলন তাঁহাদের ভাল থাকিতে দেয় নাই। এই টলোমলো বর্তমানের কিনারায় তাঁহাদের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। আম আদমির স্বস্তিতে থাকিবার উপায় নাই। বিশ্বসভায় ভারত যে আসনটি অর্জন করিয়াছিল, তাহাকে স্বখাত সলিলে বিসর্জন দিয়া ফের পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির হারের মাঝারিয়ানায় ফিরিয়া আসিয়াছে। এই ভারত কাহাকেও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারে না।
ভারতকে এই স্তরে নামাইয়া আনিবার দায়টি ইউপিএ সরকারের উপরেই বর্তাইবে। বিশ্ব-অর্থনীতির স্বাস্থ্য খারাপ বটে, কিন্তু সেই বাস্তবে দাঁড়াইয়াও ভারত অনেক ইতিবাচক অবস্থায় থাকিতে পারিত। পারে নাই ইউপিএ সরকারের কল্যাণে। সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব, আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকা লইয়া বিস্তর আলোচনা হইয়াছে। সরকার যে অন্তহীন খয়রাতির ভাণ্ডার খুলিয়া বসিয়াছে, তাহাতেও ক্ষতি কিছু কম হয় নাই। যে সরকারের হাতে টাকা নাই, তাহার পক্ষে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের অন্নের ব্যবস্থা করিবার খোয়াব দেখা কেবল ধৃষ্টতা নহে, তুমুল অপরিণামদর্শিতা। যে সম্পদ ব্যবহার করিয়া জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হার বাড়ানো যাইত, তাহা ব্যয় করা হইল গ্রামীণ কর্মসংস্থানে! যথেষ্ট আয় না বাড়িলে কোনও খয়রাতিই যে ধোপে টেকে না, এই কথাটি শিখিতে সনিয়া গাঁধীরা বড় চড়া মূল্য দিলেন। তাহার পরেও শিখিয়াছেন, বলিবার কোনও উপায় নাই।
সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের ফল বলিতেছে, মানুষ ইউপিএ সরকারের এই হঠকারিতা মাফ করিতে রাজি নহে। নির্বাচনের ফলের সূত্র ধরিয়াই অর্থনীতির পথের যে তর্ক আরম্ভ হইয়াছে, তাহাতে দুই প্রথিতযশা অর্থশাস্ত্রীর নাম এবং (তাঁহাদের মতের ভিন্নতা) জড়াইয়া গিয়াছে তাঁহারা, অবধারিত ভাবেই, অমর্ত্য সেন এবং জগদীশ ভগবতী। সুলক্ষণ। কাদা-ছোড়াছুড়ির বদলে তত্ত্ব আলোচনা গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। ইউপিএ সরকারের (আত্মঘাতী) পুনর্বণ্টন নীতির জনক হিসাবে অনেকেই অমর্ত্য সেনকে চিহ্নিত করিতেছেন। সেন বা তাঁহার সমাদর্শীরা বলিতে পারেন, আর্থিক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁহারা অস্বীকার করেন নাই। বলিয়াছেন, সেই বৃদ্ধিই যথেষ্ট নহে যথার্থ পুনর্বণ্টন না হইলে বৃদ্ধি অর্থহীন। এই কথাটির মধ্যে গুরুত্বের উচ্চাবচতায়, স্পষ্টতই, বৃদ্ধির দিকে পাল্লা ঝুঁকিয়া নাই। এবং, তাঁহার অর্থনীতির তর্কের সূক্ষ্ম যুক্তি, বিচার রাজনীতিকদের বোধগম্য হইবার কথা নহে। তাঁহারা মোটা দাগের বার্তায় অভ্যস্ত। সেনের অবস্থান হইতে একটিই বার্তা পাওয়া যাইতে পারে: ভারতে যে বৃদ্ধি হইতেছে, তাহা নেহাত কম নহে, কিন্তু সেই বৃদ্ধির সুফল আম আদমির নিকট পৌঁছাইতেছে না কাজেই, পুনর্বণ্টনের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি ঠিক এই কথাটিই বলিতেছেন কি না, তাহা রাজনীতির বিবেচ্য নহে রাজনীতিকরা তাঁহার কথার এই অর্থই করিতেছেন কি না, তাহাই বিবেচ্য। সেখানেই ভগবতীর সহিত তাঁহার ফারাক। ভগবতী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বারংবার জানাইয়াছেন, যথেষ্ট বৃদ্ধি না হইলে আর সবই ফাঁকি, সবই মিথ্যা। ইউপিএ যে মতের পথে হাঁটিয়াছে, তাহা হইতে সরিয়া আসিবার মতো সময় আর নাই। আগামী বৎসর নূতন সরকার ক্ষমতায় আসিলে নূতন মত শুনিতে আগ্রহ দেখাইবে কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.