|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
‘আমরা ৯০-এর’ চিত্রকলায় ঐতিহ্য ও স্বদেশপ্রেম |
আইসিসিআর-এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘আমরা ৯০-এর’ সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ২০১৪ সালে। এ উপলক্ষে ইতিমধ্যেই দু’একটি অনুষ্ঠান হয়েছে। আর একটি অভিনব উদ্যোগ রূপায়িত হল সম্প্রতি। এই কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে পাশ করেছেন যে সব শিল্পী তাঁরা একত্রিত হয়ে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘আমরা ৯০-এর’। সকলে মিলে আয়োজন করলেন একটি সম্মেলক প্রদর্শনীর। আইসিসিআর-এর নন্দলাল বসু গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল তা। মোট ৪০ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। এই ঐতিহ্যদীপ্ত শিল্পশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একান্ত ভালবাসা ও আবেগ থেকে সম্মিলিত হয়েছিলেন এই শিল্পীরা। সেই সময়ে যাঁরা তাঁদের শিক্ষক ছিলেন, তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধিত করেছেন সে দিন। আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন শিক্ষকরাও।
অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে কয়েক জন ছিলেন যাঁদের এখন সর্বভারতীয় খ্যাতি। আবার অনেকে ছিলেন, যাঁদের কাজ দেখে মনে হয় তাঁরা হয়তো নিয়মিত অনুশীলন করেন না। কাজের ভিতর দীপ্তি বা প্রত্যয়ের ছাপ নেই। ছবির ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত ভারতীয় চিত্ররীতির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে অন্তত দশ জন শিল্পীর কাজে। বাকিরা পাশ্চাত্যের আধুনিকতাবাদী রূপরীতি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। স্বদেশ ও বিশ্বের সম্মিলন ঘটাতেও চেষ্টা করেছেন। ১৯৯০-এর দশক থেকে বিশ্বায়ন ও উত্তর আধুনিকতার যে সম্মিলিত ঢেউ এসে পড়েছিল আমাদের শিল্পে, তার অভিঘাত এই প্রদর্শনীতে রয়েছে খুবই সামান্য।
|
|
শিল্পী: সুজাতা খাস্তগীর। |
ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ কাজটি সুমিতাভ পালের। অ্যালুমিনিয়ামে করা ‘হাম পাঁচ’ শীর্ষক রচনায় পাঁচটি হাতের অভিব্যক্তির ভিতর দিয়ে বিক্ষুব্ধ এই সময়কে ধরেছেন প্রজ্ঞাদীপ্ত ভাবে। মৃগাঙ্ক পালের ‘টু সিস্টার্স’ শীর্ষক মার্বলটিতেও রূপাবয়বের কিছু অভিনবত্ব রয়েছে। অংশগ্রহণকারী অন্য ভাস্কররা ছিলেন বিশ্বনাথ দে, চন্দ্রশেখর দাস, প্রবীরকুমার দাস ও চিন্ময় কর্মকার।
ছবিতে সৌমিত্র কর দেশীয় লৌকিক থেকে অসামান্য ঋদ্ধতায় আধুনিকতার আঙ্গিক তৈরি করেছেন। প্রাণগোপাল ঘোষ নিসর্গ নিয়ে কাজ করেন। প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনায় না গিয়ে তার ছন্দিত স্পন্দনটিকে তুলে এনেছেন অ্যাক্রিলিকের কয়েকটি ছবিতে। পরেশ মাইতির ‘আ হেরিটেজ সিটি’ শীর্ষক ক্যানভাসের উপর তেলরঙে আঁকা ছবিটিতে ঋজু রেখার জ্যামিতিক বিন্যাসে বর্ণিল এক আঁধারলিপ্ত পরিমণ্ডলের নৈঃশব্দ্য ব্যঞ্জিত হয়েছে। রোমি বন্দ্যোপাধ্যায় মজুমদার মিশ্রমাধ্যমে আঁকা একটি ছবিতে বর্ণিল প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি তরুণীকে রূপায়িত করেছেন। তাঁর অন্য রচনাটিতে রয়েছে উত্তর আধুনিক আবহের অনুকরণ। লিখিত কবিতার বাণীর ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে ছন্দিত বিমূর্ত অলঙ্করণকে মিলিয়ে অসামান্য প্রথাবিরোধী চিত্রীয় পরিমণ্ডল তৈরি করেছেন। সুজাতা খাস্তগীরের ‘লাইফ ইন মার্স’ শীর্ষক অ্যাক্রিলিকের রচনাটি চারটি বর্গাকার ছবির সমাহার। বর্গক্ষেত্রের কালো প্রেক্ষাপটে সংস্থাপিত হয়েছে পূর্ণ বৃত্তীয় পরিসর। তার ভিতর প্রকৃতি ও মানবীর যে ছন্দিত অবয়ব তাতে ঐতিহ্যগত রূপের অনুরণন রয়েছে। ঐতিহ্যগত আঙ্গিকে আরও যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: শুভেন্দু দাস, ইন্দ্রজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্রীতি বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামলী ধর, কবিতা আদক, অমৃতা মজুমদার, চন্দন রায় প্রমুখ। সুব্রত বিশ্বাসের অ্যাক্রিলিকে আঁকা ‘ডিসট্রেস ফ্যামিলি’ অভিব্যক্তিবাদী রূপরীতি ও বর্ণপ্রয়োগের সুন্দর দৃষ্টান্ত। কুমুদরঞ্জন হালদারের ‘লিজার্ড ইন দ্য কিচেন’ শীর্ষক চারটি পটে বিভাজিত ছবিটিতে টিকটিকির সঙ্গে খাদ্যবস্তুর সমাহার ব্যতিক্রমী এক চিত্র পরিমণ্ডল তৈরি করেছে। সুশান্ত মণ্ডলের জলরং ও পেন্সিলে আঁকা তিন পর্বের ‘থ্রি ওল্ড হোয়াইট ক্লথস ওয়াশড রিসেন্টলি’ শীর্ষক রচনাটিও ব্যতিক্রমী রূপরীতির দৃষ্টান্ত। কিশোর রায় জলরঙে আঁকা ‘কমিউনিকেশন থ্রি জি টু’ শীর্ষক রচনায় পাশাপাশি তিনটি পুরুষের মাথা উপস্থাপিত করেছেন। কৃষ্ণাভ ধূসর এই রূপায়ণে ব্যঞ্জিত হয়েছে অস্তিত্বের অন্তর্লীন তমসা। অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিল্পীর মধ্যে ছিলেন শুভেন্দু সরকার, দেবাশিস সামন্ত, লিলি চৌধুরী, প্রদীপ্ত রায়, রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বসু, চন্দন দাস, স্বপন দাস, অজয়কুমার মিত্র, গোবিন্দ নায়ক, জয়ন্ত দেব প্রমুখ। |
|
|
|
|
|