বিনোদন সম্পর্কটা শেষ, জানিয়ে দিলেন হৃতিক-সুজান
কোই মিল গ্যয়া?
এটাই প্রশ্ন সব্বার মনে। কারণ হৃতিক রোশন আজ বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছেন, সুজানের সঙ্গে তাঁর বিয়েটা ভাঙছে।
বেশ কিছু দিন ধরেই আলাদা থাকছিলেন। ‘কৃষ থ্রি’-র পার্টিতে সুজানের অনুপস্থিতি অনেকেরই চোখে পড়েছিল। কিন্তু তখনও হৃতিক বলেননি যে, সম্পর্কটা আর জোড়া লাগার জায়গায় নেই। যেটা বললেন এ দিন। “সুজান ১৭ বছরের সম্পর্ক শেষ করে আমার থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে”, শুক্রবার হৃতিক রোশনের বিবৃতি। তার পরেই এল সুজানের বিবৃতি “আমরা দু’জনে দু’জনের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে এ সময় ব্যক্তিগত থাকতে দিন।”
১৭ বছরের সম্পর্ক, ১৩ বছরের বিবাহিত জীবন। ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর বিয়ে হয়েছিল হৃতিক আর সুজানের। আর সাতটা দিন গড়ালে আর একটা বিবাহবার্ষিকীর পার্টি হতে পারত। হল না।
অনেকটা ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ সিনেমার মতোই সুজানকে হৃতিক প্রথম দেখেছিলেন এক ট্র্যাফিক সিগনালে। দেখেই নাকি ঠিক করে ফেলেছিলেন, এই মেয়েটিকেই বিয়ে করবেন তিনি। এ বার সেই মেয়েটির সঙ্গেই ছাড়াছাড়ির কথা প্রকাশ্যে তিনিই আনলেন। যদিও সকলেরই একটা ব্যাপার চোখে পড়েছে। হৃতিক কিন্তু বলেছেন সিদ্ধান্তটা তাঁর নয়, বিয়েটা ভাঙতে চেয়েছেন সুজানই। হৃতিকের আরও বক্তব্য, “আমি চাই না এই খবরটা আমার ভক্তদের মনে এবং সার্বিক ভাবে মানুষের মনে বিয়ের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিক। আমি এখনও বিয়েতে একান্ত ভাবে বিশ্বাস করি, অত্যন্ত সম্মান করি এই বন্ধনকে।”
তা হলে কেন এমন করলেন সুজান? কোই মিল গ্যয়া-র প্রশ্নটা উঠছে এই সূত্রেই। যদিও দম্পতির কাছের মানুষদের অনেকেই জোর গলায় বলছেন, এই প্রশ্নটা হৃতিকের জন্য প্রযোজ্য নয়। এই বারে অন্তত অন্য নারীকে ঘিরে তৈরি হয়নি দূরত্ব।
তা হলে? কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, সুজানই বিয়েটা টেনে নিয়ে যেতে চাইছেন না। কারণ, দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে শ্বশুর-শাশুড়ির ‘অতি হস্তক্ষেপ’ তিনি আর মানতে পারছেন না। “রাকেশরাই নাক গলিয়ে গলিয়ে বিয়েটা ডোবালেন”, বললেন এক ঘনিষ্ঠ। সেই জন্যই নাকি সুজানকে এ বছর রোশন পরিবারের গণেশ ভাসানের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। ৬ সেপ্টেম্বর রাকেশ রোশনের জন্মদিনের পার্টিতেও খুব অল্প ক্ষণের জন্য এসেছিলেন সুজান। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, সুজানের বাবা সঞ্জয় খান অসুস্থ। সুজান তাই থাকতে পারলেন না। আবার অন্য দিকে সুজানের নতুন ইন্টিরিয়র ডেকর-এর দোকান উদ্বোধনের সময় হৃতিকের থাকার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে দেখা যায়নি।
কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সমস্যার জেরে ১৩ বছর পরে বিয়ে ভাঙতে হল? রাকেশ কিন্তু নস্যাৎ করে দিচ্ছেন এই অভিযোগ। হৃতিকের বাবা, সুজানের শ্বশুরমশাই আনন্দবাজারকে বলেন, “বাবা-মায়ের কারণে কেউ স্বামীকে ছাড়ে না। এটা বিয়ে ভাঙার কোনও কারণ হতে পারে না। যা বলার হৃতিক... নিজেই বলবে। এটা খুব স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার।”
অবশ্যই। হৃতিকের বিবৃতি বলছে, “আমাদের পরিবারের জন্য এটা খুব কঠিন সময়। মিডিয়া এবং ভক্তদের কাছে অনুরোধ, আমাদের একটু একলা ছেড়ে দিন।” হৃতিকের পরিবারের জন্য ‘কঠিন সময়’, আর সুজানের পরিবার? সুজানের বাবা সঞ্জয় খানের সুর কিন্তু একটু আশাবাদী। সঞ্জয় দাবি করছেন, “এখনই কোনও চূড়ান্ত পরিণতির কথা বলা ঠিক হবে না। ওরা আলাদা হয়ে একটু দূরত্ব চাইছে। আর কিছু না।”
বলিউডের অন্য একটি গোষ্ঠী আবার অন্য গল্প বলছেন। তাঁদের মতে, এই বিয়ে ভাঙার পিছনে নারী নয়, রয়েছে একটি পুরুষের উপস্থিতি। সুজানই নাকি এক বিবাহিত অভিনেতার সঙ্গে ইদানীং ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন। অভিনেতাটি এক সময় চুটিয়ে মডেলিং করতেন। এখন কমার্শিয়াল-প্যারালাল দু’ধরনের ছবিতেই কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে সুজানের সম্পর্ক নিয়ে রটনা বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। গত ২০ সেপ্টেম্বরই একটি ফিল্মি ব্লগে হৃতিক-সুজানের সম্ভাব্য ভাঙনের কথা ফলাও করে লেখা হয়েছিল। কিন্তু সুজানের বোন ফারহা আলি খান তখন টুইটারে লিখেছিলেন, সব মিথ্যে কথা। মিডিয়াকে তোপ দেগে বলেছিলেন, “সেলিব্রিটিদের নিয়ে গসিপ করাই মিডিয়ার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা লেখা হচ্ছে, সব বিশ্বাস করবেন না।”
এখন? কওন কিসকো মিল গ্যয়া, সেটাই কি তবে প্রশ্ন?
এ ভাবে কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়, বলছেন বলিউডে সেলিব্রিটিদের অন্যতম আইনজীবী বিভাব কৃষ্ণ। তাঁর মতে, “কীসের জন্য কে দায়ী, সেটা জানতে গেলে আরও তথ্য পাওয়া দরকার। আজ যদি সুজানের সঙ্গে অর্জুন রামপালের নাম জড়িয়ে থাকে, হৃতিকের সঙ্গেও তো কখনও করিনা, কখনও প্রিয়ঙ্কা, কখনও বারবারা মোরির নাম জড়িয়েই চলেছে!”
‘কাইটস’-এর শ্যুটিংয়ে বারবারা-র সঙ্গে হৃতিকের ঘনিষ্ঠতার কথা সংবাদমাধ্যমে খুবই লেখালেখি হয়েছিল। শোনা গিয়েছিল, এই নিয়ে রাগারাগি করে নাকি সুজান বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন! পরে আবার হৃতিক-সুজান দু’জনেই দাবি করেন, সব গুজব! বাড়ির সিলিং-এ অ্যান্টি টেরামাইট ট্রিটমেন্ট চলছিল বলেই সুজান কিছু দিন আলাদা ছিলেন!
‘কাইটস’-এর পরিচালক অনুরাগ বসু কী বলছেন এ সব শুনে? “আমি স্তম্ভিত। ভাবতেই পারছি না! ওরা তো আদর্শ দম্পতি ছিল!” অনুরাগের ‘কাইটস’-এর অভিজ্ঞতা কী বলে? রাকেশরা কি খুব নাক গলাতেন দু’জনের মধ্যে? নাকি বারবারা-ঝড়ের রেশটাই থিতু হয়ে গেল? অনুরাগ কিন্তু কোনওটাই মানছেন না। ওঁর কথায়, চিত্রনাট্য পড়ার সময় রাকেশজি সব সময় চাইতেন সুজান থাকুক! ওর মতামতের যথেষ্ট দাম দেওয়া হতো! বারবারাকে নিয়ে যখন অত কিছু লেখা হচ্ছে, হৃতিক-সুজান একসঙ্গে সেটা সামলেছেন! “ওরা দু’জনেই খুব প্রাইভেট মানুষ। ঠিক কী হয়েছে, সেটা ওরা ছাড়া আর কেউ জানবে না। এই তো দিওয়ালির পার্টিতে ডুগ্গুর (হৃতিক) সঙ্গে দেখা হল! সুজানের সঙ্গে দেখা না হলেও ওর বোনের সঙ্গে হয়েছিল!”
কেউ কেউ যে বলেন, নিজের চেহারা-নিজের ছবি-নিজের কাজ নিয়ে হৃতিক সব সময় অবসেসড থাকতেন! সেটাই নাকি সুজানের পক্ষে ক্লান্তিকর হয়ে গিয়েছিল! অনুরাগের মন তাতেও সায় দিচ্ছে না। “অবসেসড শব্দটা কিছুতেই ব্যবহার করব না। হৃতিক যে কতটা দায়িত্ববান, তা সবাই জানে!”
কারণ যাই হোক, ঘটনা হল, গত দু’মাস সুজান জুহু-ভারসোভা এলাকায় একটা বাড়িতে উঠে গিয়েছেন। সাত আর পাঁচ বছরের দুই ছেলেকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। হৃতিক মাঝেমধ্যেই সেখানে গিয়েছেন, দেখা করেছেন। এই মুহূর্তে তিনি বিদেশে রয়েছেন চিকিৎসার জন্য। ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ-এর বিবৃতি সেখান থেকেই এল। হৃতিক জানিয়েছেন, তাঁর চিকিৎসা ভালই এগোচ্ছে। খুব শীঘ্রই তিনি সর্বতো ভাবে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবেন। শুভানুধ্যায়ীরা দাবি করছেন, হৃতিক খুব চেয়েছিলেন বিয়েটা টিকুক। কিন্তু সুজান চাইলেন না। ডুগ্গু অগত্যা মেনে নিলেন। সুজান লিখেছেন, তাঁরা এখনও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, শুভাকাঙ্খী। নিজেদের দুই সন্তানের প্রতি যৌথ কর্তব্যও তাঁরা দু’জনে মিলেই পালন করবেন।
আপাতত এটাই খবর, প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী যুক্তা মুখী, বাংলার নায়িকা শ্রাবন্তীর পরে এ বার সুজান রোশন খান সেলিব্রিটি জগতেও মেয়েরা ক্রমশ নিজে থেকে বিয়ে ভাঙার সাহস দেখাচ্ছেন। বিভাব কৃষ্ণ বলছেন, ট্রেন্ডটা নতুন। যেনতেন প্রকারেণ ইমেজ বাঁচানোর দায়ে বিয়ে টেকানোর তত্ত্ব অচল হয়ে যাচ্ছে। হাইপ্রোফাইল বিয়ে নিজে হাতে ভেঙে সুজানরা সেটাই প্রমাণ করছেন!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.