জামাত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির জেরে বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির ধাক্কা এসে লাগল এ রাজ্যের সীমান্তেও। শুক্রবার এ রাজ্যে চ্যাংরাবান্ধা এবং হিলি সীমান্ত দিয়ে সামান্য আমদানি-রফতানি হয়েছে। বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায় উত্তর ২৪ পরগনার ঘোজাডাঙা এবং মালদহের মহদিপুরে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে বহু পণ্য বোঝাই ট্রাক। নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ, ফল। কমেছে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াতও। প্রশাসন এ রাজ্যের সীমান্ত এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়িয়েছে।
শুক্রবার নবান্নে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বৈঠকে বসেন অসম ও এ রাজ্যের পুলিশ প্রধান। ডাকা হয় গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদেরও। প্রায় দু’ঘণ্টার এই বৈঠকে দুই রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলির পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। প্রতিবেশী দেশে যা ঘটছে দুই রাজ্যে সরাসরি তার প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন পুলিশকর্তারা। রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি বলেন, “প্রতিবেশী দেশে যা হচ্ছে তার উপরে আমাদের নজর রয়েছে। অসমের সঙ্গে গোয়েন্দা-তথ্য আদানপ্রদানে সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে।” অসমের ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দু’পক্ষে কথাবার্তা হয়েছে।” |
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ মালদহের মহদিপুর সীমান্তে গিয়ে দেখা গেল, দেড় হাজারের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে। সীমান্তে কোতোয়ালি দরওয়াজার কাছে বিএসএফ জওয়ানদের টহল চলছে। সীমান্তের এ পার থেকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সোনা মসজিদ সীমান্তে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সঙ্গে সে দেশের সেনা-জওয়ানরাও টহল দিচ্ছেন। সেখানকার দোকানপাট বন্ধ। সকালে রফতানি শুরু হলেও শুল্ক দফতরের ছাড়পত্র নিয়ে ছ’টি পেঁয়াজের ট্রাক সীমান্ত টপকে জিরো পয়েন্টে পৌঁছতেই বিজিবি-র জওয়ানেরা তা আটকে ফেরত পাঠিয়ে দেন। মহদিপুর সীমান্তের ১২৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডান্ট প্রণয় কুমার বলেন, “বাংলাদেশে রাস্তা কাটা হয়েছে। বিজিবি-র জওয়ানেরা আমাদের দেশের পণ্য ভর্তি ট্রাক নিতে অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ট্রাকে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। তারা ওই ট্রাকের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবে না।”
মহদিপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ইনচার্জ অজয় কুণ্ডু বলেন, “এখানে এসেও অনেক বাংলাদেশি ও ভারতীয় ফিরে গিয়েছেন। দুপুর ২টো পর্যন্ত ৬ জন বাংলাদেশি এ পারে এসেছেন।”
চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে এ দেশে আসা বাংলাদেশের ট্রাক-চালকেরা তাঁদের দেশের ‘খারাপ অবস্থা’র জন্য আশঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত পণ্য নামানোর আর্জি জানান। একই আশঙ্কায় বাছাই করে ভারত ও ভুটানের ফল ও প্লাইউডের ট্রাক বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট সূত্রের খবর, এ দিন দু’দেশের মধ্যে ৩০ জন যাতায়াত করেছে। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মূলচাঁদ বুচা বলেন, “সন্ধ্যা পর্যন্ত একশো ফল ও প্লাইউডের ট্রাক বাংলাদেশে গিয়েছে। একই সংখ্যক তুলো ও কাপড়ের ট্রাক এসেছে।”
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল দিয়ে সীমান্ত-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। পেট্রাপোল বন্দরের ‘ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাদেশের যা পরিস্থিতি, তাতে দিন কয়েক বাণিজ্য ব্যাহত হবে। ট্রাক-চালকেরাও আতঙ্কিত।” এ দিন সেখানে বিএসএফের কড়া নজরদারি ছিল। পেট্রাপোলে ঢোকার আগে যশোর রোডের হরিদাসপুরে গাড়ির তল্লাশি নেন জওয়ানেরা। নো-ম্যানস্ ল্যান্ডের ১০০ মিটার আগে যশোর রোডে একটি ‘ড্রপ গেট’ করে বিএসএফ। উদ্দেশ্য, যাতায়াতে নজরদারি। ঘোজাডাঙা সীমান্তে শুক্রবার বাণিজ্য বন্ধ থাকে। প্রশাসনের উদ্যোগে এ দিন বাণিজ্য চালু থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতির জেরে সকাল থেকেই বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। ‘সিল’ করে দেওয়া হয় সীমান্ত। ঘোজাডাঙা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে কান্তি দত্ত বলেন, “বাংলাদেশের ভোমরা থেকে এ দিন জানিয়ে দেওয়া হয়, অশান্ত পরিস্থিতির কারণে বাণিজ্য চালানো সম্ভব নয়। বহু পচনশীল পণ্য এখানে স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।” |