জয়ন্ত ঘোষালের (‘ভুলে ভরা নীতিতেই ভরাডুবি কংগ্রেসের’, ৯-১২) বক্তব্য যা বুঝলাম, তার সারাংশ এ রকম: ১) কংগ্রেস দলের তাত্ত্বিক মস্তিষ্ক হচ্ছেন অমর্ত্য সেন (ছবি) এবং জঁ দ্রেজ, ২) তাঁদের বুদ্ধিতে এবং সনিয়া গাঁধীর চাপে সংস্কারমুখী কাজকর্ম শিকেয় তুলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী একশো দিনের কাজ, খাদ্যসুরক্ষাসহ একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন, ৩) তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলিতে এটা-ওটা-সেটা নানা ধরনের দাতব্য প্রকল্প, ৪) সামাজিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে সরকার বার বার সার্বিক বৃদ্ধির উপরে জোর দিলেও সম্পদ তৈরির বিষয়টিকে সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি, ৫) প্রকৃত উন্নয়নের বদলে সরকার সামাজিক প্রকল্পে জোর দেওয়ায় রাজকোষ ফাঁকা হয়েছে দ্রুত।
অমর্ত্য সেন কংগ্রেসের দলীয় উপদেষ্টা, এ খবরটি তিনি নিজে বা কংগ্রেসের কোনও নেতা কখনও ঘোষণা করেছেন বলে জানা নেই। জঁ দ্রেজ ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপে ছিলেন বটে, কিন্তু খাদ্য সুরক্ষা বিলের খসড়া নিয়ে মতানৈক্য হওয়ায় তিনি দু’বছর আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের সাম্প্রতিকতম বই ইন্ডিয়া, অ্যান আনসার্টেন গ্লোরি’তে ভারতের আর্থিক বিনিয়োগের বিন্যাস এবং মানব উন্নয়নে তার প্রভাব নিয়ে যা বলেছেন, খুব টেনেটুনে ব্যাখ্যা করলেও সেগুলিকে ইউ পি এ সরকারের কার্যপদ্ধতির প্রশংসাপত্র হিসাবে গণ্য করা শক্ত।
একশো দিনের কাজের সপক্ষে কেবল অমর্ত্য সেনই নন, এ দেশের আরও অনেক অর্থনীতিবিদ সরব হয়েছিলেন। বস্তুত এই কর্মসূচির অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন অমিত ভাদুড়ী। এ দেশে খাদ্য সুরক্ষার প্রয়োজন নেই, এমন কথা কেউ বলেছেন বলে শুনিনি। কংগ্রেসশাসিত রাজত্বে ‘দাতব্য’ বলতে প্রতিবেদক কোন রাজ্য বা কোন কর্মসূচির কথা বলছেন, স্পষ্ট করেননি। ‘দাতব্য’ বলতে যদি স্বাস্থ্য-শিক্ষা বা খাদ্য নিরাপত্তার মতো মানব উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বোঝায়, সে ক্ষেত্রে সেন-দ্রেজ তাঁদের বইতে প্রশংসা করেছেন ছত্তীসগঢ় আর তামিলনাড়ুর। সেগুলো তো কংগ্রেসশাসিত নয়।
সম্পদ তৈরি না হওয়ার কথা বলা হয়েছে সম্ভবত ১০০ দিনের কাজের প্রেক্ষিতে। সেটা তো মূলত অতিকেন্দ্রীকরণের সমস্যা বিশাল দেশে সব রাজ্যকে একই মাপের জুতো পরানোর চেষ্টার কুফল। এর বিপরীত পথে হাঁটবে বলে ঘটা করে সংবিধান সংশোধন হয়। সেখানেই থমকে আছে সে উদ্যোগ।
সামাজিক প্রকল্পের জন্য রাজকোষ ফাঁকা হওয়ার অভিযোগও অমূলক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য থেকে দেখছি, কেন্দ্র রাজ্য মিলে (’১২-১৩) খরচ (বাজেট বরাদ্দ) ২৮,৩৫,৮৭৩ কোটি টাকা। মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ২৮.২৮%। এর মধ্যে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় ৭,১০,৭৫৯ কোটি টাকা, জিডিপি’র ৭.৯%। তার মধ্যে শিক্ষার জন্য ৩,৩১,৫২৪ কোটি (জিডিপি’র ৩.১%) আর স্বাস্থ্যের জন্য ১,৩৬,২৯৬ কোটি টাকা (১.৩৬%)। আগ্রহীরা খবর নিয়ে দেখতে পারেন, ক’টা উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ সামাজিক ক্ষেত্রে এত কম খরচ করে। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ কিংবা নেপালও অনেক সামাজিক ক্ষেত্রে ভারতের থেকে আনুপাতিক হারে বেশি খরচা করে থাকে। রাজকোষ কেন শূন্য তার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন দ্রেজ-সেন তাঁদের বইয়ের নবম অধ্যায়ে। এ দেশে পেট্রল এবং সারের ভর্তুকি বাবদ খরচ হয় ১,৬৫,০০০ কোটি টাকা। সোনা এবং হিরে জাতীয় মূল্যবান রত্ন আমদানি বাবদ শুল্ক ছাড় দেওয়া হয় ৫৭০০০ কোটি টাকা। আর খাদ্য নিরাপত্তা দিতে খরচ হওয়ার কথা ২৭০০০ কোটি টাকা। ভর্তুকি অনেক বেশি জোটে আমাদের, আমরা যারা শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত এবং জোরালো কণ্ঠস্বরের অধিকারী। অন্য পক্ষ অবলম্বন করে অমর্ত্য সেন, জঁ দ্রেজ অন্তত আমাদের উপকার করছেন না। আমরা চটে যেতেই পারি।
দিলীপ ঘোষ। কলকাতা-৯৮
|
ভাল্লুকের ডায়াবিটিস হলেও সে কিন্তু মধু খেতে পারবে। (‘দশটা’, উপল সেনগুপ্ত, রবিবাসরীয়, ২৪-১১) ডায়াবিটিস রোগীরা মধু খেতে পারেন। মধুতে যে স্তরের শর্করা থাকে তা রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে না।
পল্টু ভট্টাচার্য। রামরাজাতলা, হাওড়া |