সম্পাদকীয় ১...
কঠিন প্রশ্ন
ত্মসম্মানের প্রশ্নটির গুরুত্ব বিভিন্ন অবস্থানে বিভিন্ন প্রকার। কোনও সাধারণ মানুষের আত্মসম্মানের যে প্রাসঙ্গিকতা, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সনের আত্মসম্মান নিশ্চয়ই তাহার অপেক্ষা বেশি, কেননা এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্মানের সহিত গুণিত হয় তাঁহার পদের সম্মানও। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষে পদত্যাগই সম্মানজনক পদক্ষেপ। তাঁহার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঠিক বা ভুল যাহাই হউক, বিতর্কের দুষ্টচক্রে তাঁহার পিতৃদত্ত নামটির সঙ্গে তাঁহার সম্মানিত পদটির নামও সমানেই জড়াইয়া যাইতেছে। কোনও প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই ইহা সুসংবাদ হইতে পারে না, বিশেষত অধিকার-রক্ষায় নিয়োজিত কোনও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তো নয়ই। অভিযোগ এখনও প্রমাণিত নহে। সুপ্রিম কোর্টে প্রাথমিক প্যানেল অভিযোগের সত্যতার দিকে নির্দেশ করিলেও কিছু পক্ষ হইতে সেই প্যানেলের ‘অ-নিরপেক্ষতা’র পাল্টা অভিযোগ আসিয়াছে। প্রতিষ্ঠানের দিক হইতে চেয়ারপার্সনের পদত্যাগ আবশ্যিক নয়, কিন্তু আবশ্যিকতার সঙ্গে সম্মানের খুব নিকট সম্পর্ক নাই। পদত্যাগের প্রশ্নটি তাই ‘নীতি’র প্রশ্ন নহে, ‘রীতি’র প্রশ্ন। একটি উচ্চ মানের সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাঞ্ছিত ব্যবহার-রীতির প্রশ্ন।
পদত্যাগ করার অর্থ অবশ্যই অভিযোগ মানিয়া লওয়া নয়। অবাঞ্ছিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেহ ‘ডিগনিটি’ বা আত্মমর্যাদার কথা ভাবিয়া পদ হইতে সরিয়া যাইতেই পারেন, কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের সহিত অভিযোগের সারবত্তার যোগ থাকে না। অভিযোগের ভিত্তিতে যথারীতি তদন্ত ও বিচার হইবে, যথাসময়ে রায় জানা যাইবে। এখানেই সংকটের অবকাশ রহিয়া যায়। যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে পদত্যাগকারীর ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ দাঁড়াইয়া যায়, অকারণে পদ ছাড়িবার ক্ষতিটি ভিত্তিহীন অভিযোগের ক্ষতির সহিত যুক্ত হয়। এই প্রচ্ছন্ন হিসাবটি আপাতত কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র হিসাবে প্রিয় হইয়া উঠিতেছে। কাশ্মীরের নেতা ফারুক আবদুল্লা যে ভীতির কথা বলিয়াছেন, তাহা অমূলক নহে। এ দেশে পুরুষ নির্যাতনকারীর যেমন সীমা নাই, তেমনই কর্তৃত্বের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী (কিংবা কারিণী) সংখ্যায় অনেক। সামাজিক মনোবৃত্তি এবং আইনি কাঠামো যদি যৌন হিংসা রুখিতে গিয়া উল্টাইয়া নারী-পুরুষ দ্বিত্ব-ধাঁচায় বিভক্ত হইয়া যায়, সামাজিক বিদ্বেষকে নিয়ন্ত্রণ করিবার বদলে ফেনাইয়া তুলিয়া যদি শত্রুভাব তৈরি হয়, লাভের বদলে ক্ষতি হইবে। ইতিমধ্যেই প্রকট, যৌন অভিযোগের ক্ষেত্রে সাধারণ অভিযুক্ত অপেক্ষা উচ্চ শ্রেণিভুক্ত কর্তৃস্থানীয় অভিযুক্ত পাইলে প্রচারমাধ্যম হইতে ঘরোয়া আড্ডা, সর্বত্র আবেগ উত্তাল হইয়া উঠে। ভয় হয়, বিচারের দিকে না তাকাইয়া যৌন হেনস্থার অভিযোগ ক্রমে শ্রেণি-হিংসার অস্ত্র হইয়া না উঠে।
বিচারের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। গত এক বৎসরে বার বার দাবি উঠিয়াছে, সেই পদ্ধতি ত্বরান্বিত হউক। বিচারের দ্রুততার জন্য অভিযোগের দ্রুততাও জরুরি। অভিযোগকারিণী কেন এ ক্ষেত্রে এক বৎসর পর অভিযোগ আনিলেন, সেই প্রশ্ন উঠিতেছে। প্রশ্নটি অভিযোগকারিণীর বক্তব্যের সত্যতার সহিত যুক্ত কি না, তাহা তদন্ত বলিবে, কিন্তু প্রশ্নটি একটি অন্য সামাজিক দৃষ্টিকোণ হইতে গুরুতর। অভিযোগকারিণী কীসের ভয়ে অভিযোগ আনিতে পারেন নাই, সেই কথাটি এ প্রসঙ্গে বিচার্য। যে সামাজিক কাঠামো অভিযোগকারিণীকে উপযুক্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সেই কাঠামোয় দ্রুত সুবিচারের আশা কি করা যায়? সুবিচারের প্রশ্নটির সঙ্গে সুশাসনের প্রশ্নটিও ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত। যৌন হিংসার মতো পরিব্যাপ্ত ও স্পর্শকাতর বিষয়ে হঠকারী হইহল্লা দিয়া অগ্রসর হওয়া যাইবে না। ধীর, সুচিন্তিত পদক্ষেপ চাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.