আশ্রমে চড়াও হয়ে এক সন্ন্যাসীকে খুন করল দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে বর্ধমানে গলসির চান্না গ্রামে খাটের সঙ্গে পা বাঁধা ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই সন্ন্যাসীর দেহ মেলে। কেন খুন করা হল তাঁকে, ধন্দে পুলিশ।
গত কয়েক মাস ধরেই বর্ধমানের নানা এলাকায় একের পর এক মন্দির ও আশ্রমে লুঠপাট-হামলার ঘটনা ঘটেছে। চান্না মহাকালী আশ্রমেও দেবীর গয়না রয়েছে। সে সব কোথায় আছে তা একমাত্র জানতেন সন্ন্যাসী কালীপ্রণব ব্রহ্মচারী (৬১)। গয়না হাতানোর জন্য এই হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে গ্রামবাসী ও পুলিশের একাংশের ধারণা। যদিও আশ্রম লাগোয়া মন্দিরের তালা ভাঙা হলেও মঙ্গলবার রাতে দেবীর গায়ের কোনও গয়না খোয়া যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। তদন্ত চলছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই সন্ন্যাসীর বাড়ি ভাতারের কুলনগরে। তবে প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি সাধক কমলাকান্তের স্মৃতি বিজড়িত এই আশ্রমেই ছিলেন। গত ১২ বছর ধরে মৌনব্রত পালন করছিলেন। সম্প্রতি তাঁর চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। মাঝে-মধ্যে আশ্রমে এসে থাকেন কলকাতার বাঁশদ্রোনীর বাসিন্দা, বছর পঁয়ষট্টির স্বপ্না মজুমদার। কালীপুজোর পর থেকে তিনি আশ্রমে সন্ন্যাসীর পাশের ঘরে রয়েছেন। স্বপ্নাদেবী জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ একটি শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখেন, কপালে সিঁদুরের ফোঁটা লাগানো তিন যুবক বারান্দায় দাঁড়িয়ে। |
স্বপ্নাদেবীর অভিযোগ, “আমায় দেখে ওরা পিস্তল উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে, চাবি কোথায়। আমি জানাই, আমার কাছে কোনও চাবি নেই। তা শুনে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় তারা। সন্ন্যাসীর ঘরে গিয়ে দেখি, খাটের পায়ার সঙ্গে দড়ি বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে সন্ন্যাসী। বুকের দু’টি জায়গা ও মুখ থেকে রক্ত বেরোচ্ছে।” স্বপ্নাদেবীর চিৎকারে জড়ো হন আশপাশের বাসিন্দারা। সন্ন্যাসীকে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানানো হয়।
গ্রামের ব্রাহ্মণ পাড়ার বাসিন্দা সুজন চক্রবর্তী, বিল্টু ডাক্তারেরা জানান, আশ্রমে ডাকাত পড়েছে খবর পেয়ে তাঁরা ছুটে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় সন্ন্যাসী পড়ে রয়েছেন। রাতেই গ্রামের মানুষ টর্চ হাতে দুষ্কৃৃতীদের খোঁজাখুজি করে। কিন্তু সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পাননি বলে জানান তাঁরা। গ্রামের আর এক বাসিন্দা চন্দ্রচূড় হালদার বলেন, “ওই সন্ন্যাসীর অনেক ভক্ত রয়েছেন। আশ্রমে দু’বার উৎসব হয়, কালীপুজো ও মাঘ মাসে সন্ন্যাসীর জন্মদিনে। প্রচুর মানুষ আসেন। কেন এখানে এমন ঘটনা ঘটল। বুঝতে পারছি না।”
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, অনেক ভক্ত মন্দিরে গয়না দান করতেন। তার একাংশ আবার সন্ন্যাসী গরিব মানুষজন সমস্যায় পড়লে তাঁদের দিতেন। সেই গয়নার লোভেই দুষ্কৃতীরা আশ্রমে হানা দিয়েছিল বলে গ্রামবাসীদের একাংশের সন্দেহ। কিন্তু মন্দিরের তালা ভাঙা হলেও দেবীমূর্তির কোনও গয়না খোয়া না যাওয়ায় পুরো ঘটনাটি নিয়ে ধন্দে পুলিশ।
বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া চিহ্নের খোঁজ করে পুলিশ। তবে ডিসিপি (ক্রাইম) কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “এখনও আমরা খুনের ঘটনার কোনও সূত্র পাইনি। খোঁজ চলছে।” পুলিশ জানায়, স্বপ্নাদেবীর কাছ থেকে বর্ণনা শুনে সিআইডি-র সাহায্যে আততায়ীদের ছবি আঁকানো হবে। |
|
|
দেবস্থানে দুষ্কর্ম |
|
তারিখ |
স্থান |
ঘটনা |
তদন্তের হাল |
২২ জুন |
কেতুগ্রামের নিরোল |
গুপ্ত পরিবারের কামাখ্যা মন্দিরে মূর্তি চুরি। |
নেই কিনারা |
৪ জুলাই |
কেতুগ্রামের অট্টহাস |
গর্ভগৃহ থেকে চুরি অষ্টধাতুর মূর্তি। |
নেই কিনারা |
১ ডিসেম্বর |
কেতুগ্রামের অট্টহাস |
সন্ন্যাসীকে মারধর করে লুঠ নানা জিনিস। |
ধৃত ২, জিনিস উদ্ধার |
৭ ডিসেম্বর |
জামালপুরের জৌগ্রাম |
পরপর আট মন্দিরে গয়না ও বাসনপত্র চুরি। |
নেই কিনারা |
১০ ডিসেম্বর |
গলসির চান্না |
আশ্রমে গুলি করে খুন সন্ন্যাসীকে। |
নেই কিনারা |
|