গঙ্গাসাগর মেলায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা নিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।
বাম আমলে গঙ্গাসাগর মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের থেকে মাথাপিছু পাঁচ টাকা ‘পুণ্যার্থী কর’ নেওয়া হত। প্রতি বছর সাত থেকে আট লক্ষ টাকা এই বাবদ আয় হত। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কর মকুব করে দেন। এই অবস্থায় গঙ্গাসাগর মেলায় যাওয়ার পথে বিভিন্ন জেটিঘাটে, লঞ্চ ও ভেসেলের টিকিটের পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত হোর্ডিং, ব্যানার ঝুলিয়ে কী ভাবে আয় বাড়ানো যায় তার ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, তিনটি বিজ্ঞাপন সংস্থা ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে। একটি সংস্থা দর-দামও দিয়েছে। বাকিরা কয়েক দিনের মধ্যেই দর দেবে বলে জানিয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অশোক বিশ্বাস বলেন, “আপাতত ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা বিজ্ঞাপন বাবদ আয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।”
প্রতি বছর সরকারি খরচেই গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়। এ বছর মেলার বাজেট প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। রাস্তা সংস্কার, জেটিঘাট মেরামত থেকে শুরু করে মেলার সমস্ত খরচই বহন করবে রাজ্য সরকার। তা ছাড়া এ বছর থেকে মেলায় হেলিকপ্টারে যাতায়াতের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। আপাতত একটি হেলিপ্যাড রয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন জেলার পুলিশকর্তারা। তাই মেলা প্রাঙ্গণ থেকে কিছুটা দূরে আর একটি হেলিপ্যাড তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। এর জন্য জমি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হলে হেলিপ্যাড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তাতেও হোর্ডিং ও ব্যানারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। এ বছর থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ গড়া হবে। মেলার দিনগুলিতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে মঞ্চে। ওই মঞ্চ এবং অনুষ্ঠানের জন্যও বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা হবে।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, এ বছর বিজ্ঞাপনের বিষয়টি পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ হিসেবে ধরা হয়েছে। কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ-নামখানা পর্যন্ত ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে ব্যানার, হোর্ডিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন। ফলে ভাষাগত সমস্যা থাকে। তাই বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে নানা ভাষায় বিজ্ঞাপন সংগ্রহের বিষয়েও জানানো হয়েছে। হিন্দি ভাষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই বছর ফল আশাপ্রদ হলে, আগামী বছর থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা হবে।”
রাজ্য অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, মেলার খরচের তুলনায় হয়তো এখন সে ভাবে কোনও আয় হবে না। কিন্তু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর একটি রাস্তা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই খাতে মোটা অঙ্কের টাকা আয় হতে পারে। তা ছাড়া সাগরে এখন পর্যটন ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হচ্ছে। সারা বছরই পর্যটকরা আসছেন। সে ক্ষেত্রে শুধু গঙ্গাসাগর মেলাতেই আবদ্ধ না থেকে সারা বছরই বিজ্ঞাপন বাবদ আয় হতে পারে। অর্থ দফতরের ওই কর্তার কথায়, বর্তমানে রাজকোষের যা হাল, তাতে এটাই বা কম কি! |