নীলোৎপল রায়চৌধুরী • রানিগঞ্জ |
শহরে অপরাধ দমনের জন্য এলাকার বণিক সংগঠন-সহ কিছু সংস্থার সহযোগিতায় আসানসোল মহকুমার সমস্ত থানা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়েছিল সিসিটিভি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের খরচ না থাকায় সেই সিসিটিভির বেশির ভাগই অচল হয়ে যাওয়ায় প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সমগ্র পরিকল্পনা।
মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খনি এলাকা আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ব্যবসায়িক কারণে প্রায়ই ভিনরাজ্য থেকে অনেকে আসেন। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ডের সীমানাবর্তী এই খনি ও শিল্প শহরে ঝাড়খণ্ডের অপরাধীরা মাঝে মধ্যেই লুকিয়ে থাকেন। এই শহরের অপরাধ কমানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই উন্নত প্রযুক্তির নজরদারির কথা বলছিলেন শহরের বাসিন্দারা। ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অপরাধ দমনের জন্য তৈরি হওয়া আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের প্রথম কমিশনার অজয় নন্দা শহরকে নিরাপত্তা দিতে আসানসোল মহকুমা জুড়ে সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। |
রানিগঞ্জ বড় বাজারে। —নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া থানাতে ৪টি করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। ওই দুই থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে বসানো হয়েছিল আরও ১৬টি সিসিটিভি। আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের বাইরের দিকেও একটি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে আসানসোল কমিশনারেট, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জ থানায় সিসিটিভিগুলি এখনও ঠিক রয়েছে। কিন্তু রানিগঞ্জের রাস্তার সব কটি সিসিটিভিই বিকল। জামুরিয়ার রাস্তায় চালু রয়েছে মাত্র দু’টি সিসিটিভি ক্যামেরা। জামুড়িয়ায় নন্দীমোড়ের সিসিটিভিটি উধাও। স্থানীয় হাটতলা শিবমন্দিরের সামনে এবং হাটতলার ভিতরে যে ক্যামেরাগুলি বসানো হয়েছিল সেগুলি একদিনের জন্যও চালু হয়নি বলে অভিযোগ। এ ছাড়া বড় হাটতলা গলির পাশে, জামুড়িয়া মসজিদের কাছে, জামুড়িয়া থানার পুলিশ হেফাজত ও দরজার বাইরে বসানো ক্যামেরাগুলিও দীর্ঘ দিন বিকল। অন্য দিকে, রানিগঞ্জ থানার সামনে এতোয়াড়ি মোড়, নেতাজি সুভাষ বসু রাস্তার তারবাংলা মোড়, রানিগঞ্জ বড়বাজার, প্রধান ডাকঘর, রেলস্টেশনের কাছে একটি লজের ছাদের ধারে, রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও প্রধান রাস্তার পাশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে ও রানিগঞ্জ থানার সামনের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি চলার কিছু দিন চলার পরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু বিকল হয়ে যাওয়া সিসিটিভিগুলিকে না সারিয়েই শনিবার আসানসোলের পুরনো জিটি রোডের ভগত সিংহ মোড়ের কাছে নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা চালু করলেন আসানসোল দক্ষিণ থানার ওসি বিকাশ দত্ত। পুরনো ক্যামেরাগুলি না সারিয়েই নতুন ক্যামেরা বসানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) জানান, “এলাকার শুভানুধ্যায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায় সিসিটিভিগুলি শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও তহবিল তৈরি হয়নি। ক্যামেরাগুলি সারানোর খরচ অনেক বেশি। তাই সমস্যা দেখা দিয়েছে।” জামুড়িয়া এবং রানিগ়ঞ্জ বণিক সংগঠনের পক্ষে অজয় খেতান ও রাজু খেতান বলেন, “ব্যস্ত খনি শিল্পাঞ্চলে সিসিটিভি সব সময় চালু রাখার জন্য আমরা বহু বার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। রাস্তা ও অন্যান্য জায়গায় সব সিসিটিভিগুলিকে থানার মূল ক্যামেরার সঙ্গে মেলানো হলেও নানা কারণে সেগুলির তাঁর ছিঁড়ে গিয়েছে।” এর পর বণিক সংগঠনের থেকে উদ্যোগ নিয়ে তারবিহীন (ওয়ারলেস) ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
|