মাথাভাঙার বাইশগুড়ির বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সোমা বর্মনের আধার কার্ডে নাম লেখা হয়েছে ‘মোমা’ বর্মন। মাথাভাঙার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ঐশ্বর্যঅধিকারীর আধার কার্ডে ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা সোনালি সাহার ছবি ছাপা হয়েছে। সিতাই মোড়ের বাসিন্দা সুখেশ্বরী বর্মনের স্বামীর নামের জায়গায় ছেলের নাম লেখা রয়েছে। এমন নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে কোচবিহারের নানা এলাকায়।
এ তো গেল ভুলের কথা। মাথাভাঙার বাসিন্দা যতীন রায়, ঘুঘুমারির বাসিন্দা বরুণ পালের অভিযোগ, তাঁরা এখনও আধার কার্ড পাননি। ডাকঘরের ছোট ছোট শাখাতে ২০০-৩০০ করে কার্ড পড়ে রয়েছে। বড় শাখাগুলিতে পরিমাণ আরও বেশি। সেগুলি বিলির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ঘুঘুমারি পোস্ট অফিসে এখনও প্রায় ৫০টি কার্ড পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ।
এমন অব্যবস্থার মধ্যে রান্নার গ্যাসের জন্য আধার কার্ড পরিষেবা কোচবিহারে চালু হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। গ্যাসের দোকান থেকে ওই কার্ডের নম্বর চেয়ে চাপ দেওয়া শুরু হয়েছে। গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর রাজীব সিংহ জানান, “জানুয়ারি মাসের মধ্যে সমস্ত গ্রাহককে আধার কার্ড করতে হবে। কারণ, ওই সময় পর্যন্ত তাঁদের ছাড় দিতে বলা হয়েছে। যাঁদের কার্ড নেই, তাঁদের গ্যাস কাউন্টার থেকে ছবি তুলে কার্ড বানানোর কাজও শুরু হয়েছে।” কোচবিহার জেলায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার গ্যাস গ্রাহক রয়েছেন। অধিকাংশেরই আধার কার্ডের নম্বর এখনও জমা পড়েনি, জানাচ্ছেন ডিস্ট্রিবিউটররা।
জেলার প্রায় সর্বত্র বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, আধার কার্ড বিলির কাজকে পোস্ট অফিস থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। পিয়নরা আধার কাডর্র্ নিয়ে বেরিয়ে কোথাও বসে একজনের হাতে দশ-পনেরোটি করে কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছেন। সেগুলি ঠিক ব্যক্তির হাতে পৌঁছল কিনা, দেখার কোনও ব্যবস্থা নেই। ডাক বিভাগের জেলা সুপারিন্টেডেন্ট সোমনাথ পাল বলেন, “বেঙ্গালুরু থেকে সাধারণ ডাকে পাঠানো হয়, রেজিস্ট্রি করে বা স্পিড পোস্টে আধার কার্ড পাঠানো হয় না। তার ফলে কত কার্ড এল, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য থাকে না।” তাঁর দাবি, কার্ড পৌঁছনোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী জানান, আধার কার্ডের ছবি তুলে প্রয়োজনীয় তথ্য বেঙ্গালুরুতে পাঠিয়ে দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের আধার কার্ডের জন্য ছবি, প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কার্ড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিলি করা হয়। কত কার্ড পাঠানো হচ্ছে, সে সংক্রান্ত কোনও তথ্য জেলা প্রশাসনকে জানানো হয় না। তিনি বলেন, “পোস্ট অফিসের জেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। যে সমস্ত কার্ড এসেছে তা ঠিকঠাক বিলি করা হচ্ছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। বিষয়টি দেখা হবে। পাশাপাশি আধার কার্ডের ভুল ঠিক করার জন্য প্রশাসনিক অফিসগুলিতে স্থায়ী ক্যাম্প করা হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলাতে এক বছর আগে থেকে আধার কাডের জন্য ছবি তোলার কাজ শুরু হয় কয়েক লক্ষ মানুষ ওই ছবি তোলেন। মাস তিনেক ধরে ওই কার্ড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কার্ড হাতে পাওয়ার পরই তা নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, ঠিক ঠিকানা না থাকার জন্য পিওন ওই কার্ড বাড়িতে বাড়িতে পৌছতে পারছেন না। পাশাপাশি আরও অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি কোচবিহার জেলা হাসপাতালের পিছনে দুটি আধার কার্ড পড়ে থাকতে দেখা যায়। ডিওয়াইএফআই-এর মাথাভাঙার নেতা কাজল রায় বলেন, “আধার কার্ড নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে। পোস্ট অফিসগুলিতে গেলেই আধার কার্ডের বাণ্ডিল দেখা যাচ্ছে। অনেকে সেগুলি ঘেঁটে কার্ড সংগ্রহ করছেন।” |