পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ‘একুশ’ বানান জিগ্যেস করেছিলেন শিক্ষক। উত্তর দিতে না পারায় তাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে কান ধরে ঝাঁকিয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল শিক্ষককে।
শুক্রবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় তেঘড়িয়া বিবেকানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। নন্দিনী সরকার নামে ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, মারধরের পরে তাঁর মেয়ের দু’কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। সন্ধ্যায় তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে শনিবার সকালে স্কুল থেকেই জ্যোতিপ্রকাশ বসু নামে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি বেয়ারা গ্রামে।
বাগদার কোনিয়ারা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই স্কুলটিতে চতুর্থ শ্রেণি অবধি মোট ২৯ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া দু’জন। স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন ২ জন। ছাত্রীর মা মনিকাদেবীর অভিযোগ, ‘একুশ’ বানান লিখতে না পারায় লাঠি দিয়ে নন্দিনীকে মারধর করেন শিক্ষক। দু’কান ধরে তাকে উপরে তুলে দেন। এর পরেই তার কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। বাড়ি আসার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে সে। কিন্তু শিক্ষক তাকে বাড়ি আসতে দেননি। |
মনিকাদেবী বলেন, “দুপুর আড়াইটে নাগাদ মেয়ে বাড়ি এসে তার কাকিমাকে ঘটনাটি জানায়। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। বাড়ি ফিরে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। সারা রাত ও যন্ত্রণায় ঘুমোতে পারেনি।”
এ দিন থানায় দাঁড়িয়ে শিক্ষক অবশ্য দাবি করেন, “ওর কানে হাত দিয়েছিলাম ঠিকই, তবে মারধর করিনি। পরে ওকে মিড-ডে মিলও খাইয়েছি। তখন কান্নাকাটিও করেনি। ওর কানে আগে থেকেই জখম থেকে থাকতে পারে। তবে স্কুলে রক্ত বেরোয়নি। তা হলে আমি নিজে ওকে বাড়িতে গিয়ে দেখে আসতাম।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র বিশ্বাস শুক্রবার স্কুলে আসেননি। তাঁর বক্তব্য, “শনিবার স্কুলে এসে ঘটনার কথা জানতে পারি। ওই শিক্ষককে বোঝাব, যাতে আর মারধর না করেন।” কোনিয়ারা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বিদ্যুৎ বিশ্বাস বলেন, “খুবই অমানবিক কাজ। এর আগেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের মারধর করার অভিযোগ শুনেছি। দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরাই ওই স্কুলে পড়তে আসে। মারধর করলে তারা হয়তো স্কুলে আসাই বন্ধ করে দেবে।”
মাত্র দুই শিক্ষকের ওই স্কুলে এক জন গ্রেফতার হওয়ায় পঠনপাঠনে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকেরা। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দীপায়ন দাস বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নিশ্চয়ই কোনও ব্যবস্থা নেবেন।” সংসদের চেয়ারম্যান মীনা ঘোষ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনিও খোঁজ নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। |