তাঁর শৈশব দেখেছে এই গ্রাম। এ বার দেখবে শেষকৃত্য। বা বলা ভাল, শেষকৃত্য উপলক্ষে বিশ্বের তাবড় নেতাদের মহাসম্মেলন। আন্তর্জাতিক মহলে তাই চাপা গুঞ্জন, নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্য যেন বিশ্ব কূটনীতির আসর না হয়ে ওঠে।
আগামী ১৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম কুনুতে শেষকৃত্য হওয়ার কথা ‘মাদিবা’র। এখানেই সমাহিত করা হয়েছিল তাঁর আত্মীয়, পরিজনদের। সেই ‘ট্র্যাডিশন’ মেনেই ম্যান্ডেলাকেও এখানে সমাহিত করা হবে। তবে নিরিবিলিতে নয়, রীতিমতো তারকা-সমাহারে। কে নেই অভ্যাগতের তালিকায়? মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, আসবেন আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। হাজির থাকবেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও। ব্রিটেন থেকে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের। শোনা যাচ্ছে আসতে পারেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুবরাজ চার্লস এবং উইলিয়াম। তা ছাড়া চিন, ইরান, কিউবা, প্যালেস্তাইন, ইজরায়েল প্রভৃতি দেশের গণমান্য নেতাদেরও আসার কথা ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যে। এবং আশঙ্কাটা এখানেই।
আসলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এ দেশগুলির অনেকেই একে অপরের চিরশত্রু বলে পরিচিত। কেউ কেউ বা আবার অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় সমাধান বার করতে গিয়ে নিজেই কোণঠাসা। এই পরিস্থিতিতে ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যে বিশ্বের তাবড় শক্তিশালী দেশগুলির রাষ্ট্রনায়কদের উপস্থিতি এবং মুখোমুখি সাক্ষাৎ কূটনীতির ছায়া কতটা এড়াতে পারবে, তা নিয়েই ছড়াচ্ছে আশঙ্কা। |
দুই শ্বেতাঙ্গ খুদের শ্রদ্ধা। শনিবার কেপ টাউনে। ছবি: রয়টার্স। |
তবে আশার কথাও রয়েছে। আর তা হল, শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসা মানুষদের কুনুতে রাত্রিযাপনের কোনও ব্যবস্থা থাকছে না। ফলে সে দিনই রাষ্ট্রনায়কদের দেশে ফিরতে হবে। সে ক্ষেত্রে সময়ের অভাবে তাঁদের পক্ষে কূটনীতির দীর্ঘ আলাপচারিতা চালানো সম্ভব হবে না।
কিন্তু রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা না থাকলেও ‘হেভিওয়েট’ অতিথিদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কুনুর কাছাকাছি কোনও পাকাপোক্ত বিমানবন্দর নেই। তবে বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা রয়েছে এমটাটাতে। সেখানেই অতিথিদের পৌঁছে দেওয়া-ফেরত পাঠানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এমটাটা থেকেই কুনুতে আসবেন তাবড় রাজনীতিকরা।
ম্যান্ডেলা-অনুরাগীদের মধ্যে অবশ্য অ-রাজনীতিক মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাঁদেরও অনেকের সে দিন কুনুতে হাজির থাকার কথা। যেমন হলিউডের বিখ্যাত উপস্থাপিকা তথা অভিনেত্রী ওপরা উইনফ্রে যে আসবেনই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত প্রশাসন। শুধু খোঁজ নেই ম্যান্ডেলার দ্বিতীয়া স্ত্রী উইনির। মাদিবার মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়াও মেলেনি তাঁর।
তাতে অবশ্য তোড়জোড় থামছে না। কিন্তু থেমে গিয়েছে কুনু। অল্প কথায় কাজ সারছেন সেখানকার বাসিন্দারা। আর যা বলছেন, তার বেশিরভাগটা জুড়েই ম্যান্ডেলা। পেশায় মেষপালক অ্যালবার্ট জোকওয়েনি যেমন বললেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরাই ওঁকে পাঠিয়েছিলেন। সেই তাঁদের কাছেই ফিরলেন মাদিবা।” .সম্পর্কে ম্যান্ডেলারই ভাইপো, ফুন্ডো টিরারার বয়ানে, “আমরা শোকার্ত। আমাদের শেষ শ্রদ্ধাটুকু ওঁর প্রাপ্য তো বটেই।” তিনিই জানালেন, কুনু থেকে একটি প্রতিনিধিদল জোহানেসবার্গ যাবে। শেষকৃত্যের কাজ কী ভাবে হবে, সে নিয়ে ম্যান্ডেলার পরিবারের সঙ্গে আলাচনা করতেই জোহানেসবার্গ যাওয়ার কথা ওই দলের।
ম্যান্ডেলা-স্মরণে পিছিয়ে নেই জোহানেসবার্গও। মঙ্গলবার সেখানকার স্টেডিয়ামে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ বাসিন্দারা। ১৯৯০ সালে জেল থেকে বেরোনোর পর এই স্টেডিয়ামেই প্রথম বড় বক্তৃতা দিয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। এখানেই ২০১০-এ ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল। মঙ্গলবার সেই স্টেডিয়ামেই থাকবে নীরবতা।
সেখান থেকেই কফিনবন্দি ম্যান্ডেলা ফিরবেন গ্রামের মাটিতে। চিরদিনের মতো। |