কৃষি খামারে আলুবীজ তৈরির নির্দেশ, সংশয়ে কৃষিকর্তারাই
লুবীজের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে রাজ্যের কৃষি খামারগুলিতে আলু চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজ্য কৃষি দফতর থেকে বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কৃষি দফতরগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব, তা নিয়ে কৃষিকর্তারাই সংশয়ে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “আমরা এ বার রাজ্যে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টন আলুবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। চলতি বছর থেকেই বিভিন্ন জেলার কৃষি খামার গুলিতে আলু চাষ করে বীজের ঘাটতি মেটানো হবে।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক জেলা বর্ধমানে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে আলু চাষ হবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হবে রোয়ার মরশুম। কিন্তু নভেম্বরের শেষে নির্দেশ পেয়ে তা কতটা সম্ভব, তা প্রায় কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ খামারগুলিতে আলু চাষের পরিকাঠামো কার্যত নেই। আলু চাষের জন্য এক মরসুমে পরপর পাঁচটি সেচ দরকার হয়। সেই সেচের জন্য যে পাম্পসেট দরকার, সেটাই অনেক কৃষি খামারে নেই।
প্রতি বছরই রাজ্যের আলু উৎপাদক জেলাগুলিতে চাষিদের আলুবীজ কিনতে হয় পঞ্জাব থেকে। রাজ্যে ডালশস্য, সর্ষে ইত্যাদির মতই পঞ্জাব থেকে যে আলুবীজ আসত, তার চড়া দাম দিতে হত। অনেক সময়ে চড়া দামের বীজ এনে চাষ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতেন না চাষিরা। এ বছরেও ২৪০০-৩৫০০ টাকা কুইন্ট্যাল দরে তাঁদের পঞ্জাব থেকে আলুবীজ আনাতে হচ্ছে। রাজ্য সরকার মেমারি, জামালপুর, বর্ধমান সদরে ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’ থেকে কিছু আলুবীজ দিলেও চাহিদার তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল।
আলু চাষের জমি কী সত্যি তৈরি? বর্ধমানে উদিত সিংহের তোলা ছবি।
মেমারি-১ ব্লকের কৃষি সহ-অধিকর্তা অনিতা রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা ১৮ টাকা কেজি দরে প্রায় ১০ কুইন্ট্যাল আলুবীজ বিক্রি করছি। তবে তা চাহিদার তুলনায় সমান্যই।” স্টেট এগ্রিকালচার টেকনোলজিস্ট সর্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (সাটসা) প্রাক্তন বর্ধমান জেলা সম্পাদক দেবাশিস দত্তের বক্তব্য, “কয়েক বছর আগে আমরা জেলা জুড়ে কয়েকটি আলুবীজ-গ্রাম তৈরি করেছিলাম। মেমারি-১, বর্ধমান ১ ও ২, আউশগ্রাম-১ ইত্যাদি ছ’টি ব্লকে মোট ৩০ হেক্টরে উন্নতমানের বীজ উৎপাদনও করেছিলাম। কিন্তু সরকারি উদাসীনতায় এই প্রকল্প আর এগোয়নি।”
এ বার তা হলে কোন ম্যাজিকে কৃষি খামারগুলিতে রাতারাতি বীজ আলু উৎপাদন হবে?
বর্ধমান জেলা মুখ্য কৃষি আধিকারিক শ্যামল দত্ত বলেন, “আমাদের জেলার সরকারি খামারগুলিতে আলু চাষ কেন, প্রায় কোনও চাষেরই পরিকাঠামো নেই। কোনও খামারে অ্যাসিস্ট্যান্ট ফার্ম ম্যানেজার নেই। শ্রমিকদের সংখ্যা অপ্রতুল। নেই দরকারি যন্ত্রপাতি। সেচের জলের সমস্যাও তীব্র। তবু সরকারের নির্দেশ মেনে আমরা খামারগুলিতে আলু চাষে উদ্যোগী হচ্ছি।” তিনি জানান, এ বছর জেলার আউশগ্রাম, কাঁকসা, জামালপুর, মেমারি ইত্যাদি ১১টি কৃষি খামারে ২৫ একরে আলু চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন আলুবীজ উৎপাদন হবে। বর্ধমানের চাষিরা কিন্তু বলছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আলুবীজ বপনের সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার পরে আলু চাষ করলে উৎপাদন কমবে। সে ক্ষেত্রে, আর এক সপ্তাহের মধ্যে কী করে ১১টি কৃষি খামারে আলু চাষ হবে তার সদুত্তর দিতে পারছেন না কৃষিকর্তারা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “এই বীজ উৎপাদন করে সেটা কোন হিমঘরে রাখা হবে তা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এই বীজ ‘সার্টিফায়েড’ করে আনতেও সময় লাগবে। ফলে সামনের বছর যে এই জেলারই চাষ করা আলু বীজ হিসেবে চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.