চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উত্সাহিত করতে ‘বঙ্গ চিকিত্সা সম্মান’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আজ, শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুরস্কার দেবেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে এই সম্মান পাচ্ছেন দু’জন চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম প্রতিহার এবং বিনপুরের বিএমওএইচ মনোজ মুর্মু।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, “মোট ১৪০ জনকে এই সম্মান প্রদান করা হবে। এদের মধ্যে সুপার, বিএমওএইচ, জিডিএমও এবং বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক সমেত চিকিত্সক রয়েছেন ৪০ জন। বাকিরা বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ৩০ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। বাকিরাও দিনই পুরস্কার পাবেন।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “পুরস্কার প্রাপক হিসেবে জেলার দু’জন চিকিত্সকের নাম এসেছে। তবে কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর নাম আসেনি।”
পুরস্কার পাওয়ার খবরে দুই চিকিত্সকই খুশি। গৌতমবাবু ক’দিন আগে পুরস্কারের কথা জেনেছেন। তিনি বলেন, “তালিকায় আমার নাম থাকায় গর্ব অনুভব করছি। দায়িত্ব বেড়ে গেল। সরকারে দেওয়া সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব তো আমারই।” ভাল কাজের নিরিখে গত বছরই রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিল চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল। পুরস্কারও মিলেছিল। এ বার ওই হাসপাতালেরই চিকিত্সক গৌতমবাবু ‘বঙ্গ চিকিত্সা সম্মান’ পাওয়ায় খুশি হাসপাতালের সুপার থেকে সংশ্লিষ্ট সকলেই। |
হাসপাতালের সুপার গোপাল দে বলেন, “আমার হাসপাতালের এক চিকিত্সক এই সম্মান পাচ্ছেন, ভাল লাগছে।” চন্দ্রকোনা হাসপাতাল সূত্রে খবর, আউটডোরে গৌতমবাবু দিনে দু’শো-আড়াইশো রোগী দেখেন। গত দু’-তিন মাসে সাধারণ প্রসব এবং সিজার মিলে ৫০ জন প্রসূতি তাঁর অধীনে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে গড়ে ২০ জন গৌতমবাবুর তত্ত্বাবধানে থাকেন। এছাড়াও এইচআইভি, টিবি-সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক সেমিনারেও গৌতমবাবুর নিয়মিত উপস্থিতি ছিল।
আর এক জন সম্মান প্রাপক বিনপুর ১-এর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মনোজ মুর্মু। মনোজবাবুর আদিবাড়ি বেলপাহাড়ির ভেলাইডিহা গ্রামে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি বিনপুরের বিএমওএইচ হয়ে আসেন। সেই থেকে বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালই তাঁর কর্মক্ষেত্র। মনোজবাবু মনে করেন, “হাসপাতালে পরিকাঠামো নেই বলে চেঁচিয়ে লাভ নেই। যা রয়েছে ইচ্ছে থাকলে তার মধ্যেই মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যায়।” মনোজবাবু জানালেন, ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পদে তিনি উন্নীত হয়েছে। তবে বদলি এখনও হয়নি। ভবিষ্যতে যেখানে যান, মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই কাজ করবেন বলে জানান মনোজবাবু।
এ দিকে, চিকিত্সক সম্মান প্রাপক বাছার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের চিকিত্সক সংগঠনের এক সদস্য বলেন, “কোনও শর্তই মানা হয়নি। আমরা সংগঠনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছি। যোগ্য লোক সম্মান না পাওয়ায় উত্সাহের বদলে কাজ করার মানসিকতা নষ্ট হবে বলেই আশঙ্কা।” এক স্বাস্থ্যকর্মীও বলেন, “উত্সাহ দেওয়ার জন্য পুরস্কার খুব ভাল ব্যাপার। কিন্তু তাতেও যদি রাজনীতি ঢুকে পড়ে তাহলে এই সম্মানের মানে কী?” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। |