সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল বের করার মিল চালু হচ্ছে বাঁকুড়ায়।
জেলার জঙ্গলমহলের সিমলাপাল ব্লকের বিক্রমপুরে আজ, শুক্রবার এই তেলকল উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপকুমার মজুমদার। উপস্থিত থাকার কথা রাজ্য কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্যের। জেলার উপ-কৃষি আধিকারিক অনন্তনারায়ণ হাজরা বলেন, “রাষ্ট্রীয় কৃষিবিকাশ যোজনার বরাদ্দ অর্থে ও রাজ্য কৃষি দফতরের উদ্যোগে এই ছোট সূর্যমুখী তেল নিষ্কাশন মিলটি গড়া হয়েছে।” তাঁর দাবি, রাজ্যে এটিই প্রথম সরকারি উদ্যোগে হওয়া সূর্যমুখীর তেলকল।
অনন্তনারায়ণবাবু জানান, কয়েক বছর আগেও রবি মরসুমে তেল উত্পাদনের ক্ষেত্রে সর্ষে ও তিল চাষই ছিল বাঁকুড়ার চাষিদের ভরসা। কিন্তু, ব্যয়বহুল হওয়ায় চাষিদের একাংশ সর্ষে চাষে উত্সাহ হারিয়েছেন। পাশাপাশি ফি বছর কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির প্রকোপে তিল চাষেও খুব একটা লাভ করা যায় না বলে জানাচ্ছেন জেলার চাষিরা। তাঁদের কথায়, “সর্ষের ‘শিকড় ফোলা রোগ’ রুখতে অনেক টাকার রাসায়নিক সার দিতে হয়, যা খরচ সাপেক্ষ। এই খরচ করার পরেও যে ফলন ভাল হবে, তা নিশ্চিত নয়। আর তিল চাষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল প্রকৃতি। ফসল তোলার মুখে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে তিল চাষেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।” |
এই অবস্থায় বিকল্প চাষ হিসাবে সূর্যমুখীতে ধীরে হলেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই জেলার চাষিরা। কারণ, এই চাষে তিল বা সর্ষের মতো ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে, সূর্যমুখী চাষের ক্ষেত্রে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলির অন্যতম জেলায় তেলকল না-থাকা ও বিপণনে অব্যবস্থা। এতদিন সর্ষের ঘানিতেই সূর্যমুখী বীজ ভাঙিয়ে তেল বার করতে হত চাষিদের। এর ফলে তেলের গুণগত মান খারাপ হওয়ার পাশাপাশি অনেকটা তেল নষ্টও হচ্ছিল। বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা নিজেদের বাড়ির ব্যবহার্য তেল উত্পাদনের মতো অল্প মাত্রায় এই চাষ করতেন। তবে কৃষি দফতরের তরফ থেকে জেলায় তেলকল গড়া ও সুনির্দিষ্ট বিপণন ব্যবস্থার আশ্বাস পেয়ে গত মরসুম থেকেই সূর্যমুখী চাষে উত্সাহ বেড়েছে। গত মরশুমে বাঁকুড়ায় চার হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রের খবর।
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের চারটি ব্লক সিমলাপাল, রাইপুর, সারেঙ্গা, রানিবাঁধ এবং বড়জোড়া, শালতোড়া, বাঁকুড়া-১, ওন্দা, ইন্দাস, পাত্রসায়র, জয়পুর, সোনামুখী ব্লকে এই চাষের পরিমাণ আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। অনন্তনারায়ণবাবুর কথায়, “সূর্যমুখী চাষের দারুণ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও স্রেফ তেলকল ও বিপণন ব্যবস্থার অভাবের কারণে চাষিরা তেমন উত্সাহ পাচ্ছিলেন না। আমরা চাষিদের সমস্যাগুলি মেটাতে পদক্ষেপ করছি।”
অনন্তনারায়ণবাবু জানান, কৃষি বিপণন দফতর ও সহ-নিয়ামক সমবায় দফতরের (এআরসিএস) মাধ্যমে সূর্যমুখী বীজ থেকে উত্পাদিত তেল প্যাকেজিং করে বিপণনেরও ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে বাঁকুড়া সমবায় বিপণিকেই উত্পাদিত তেলের গ্রাহক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। জেলায় সূর্যমুখীর তেলকল হওয়ায় খুশি চাষিরা। বাঁকুড়ার রামনগর এলাকার চাষি মানিক তারক গত মরসুমে দু’বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তার বছর ১২ কাঠা জমিতে চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, “তেলকলের অভাবে ভাল তেল হত না। তেল বিক্রিরও ব্যবস্থা কিছু ছিল না। তাই বাড়ির ব্যবহারের তেলটুকু পাওয়ার জন্যই সূর্যমুখী চাষ করতাম। কৃষি দফতর বলেছে তেলমিল হচ্ছে। সেখান থেকে বিপণনের ব্যবস্থাও হবে। চাষ আরও বাড়াব।”
মোলবনার চাষি কার্তিক সাঁতরা গত মরসুমে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তাঁর কথায়, “আগে সর্ষে চাষ করতাম। কিন্তু তাতে অনেক খরচ হত। তাই কয়েক বছর হল সর্ষে চাষ বন্ধ করে দিয়েছি। সূর্যমুখীতে খরচ অনেক কম। সমবায়গুলি এই বীজ কিনে নেবে বলেও কৃষি দফতর জানিয়েছে। এ বার বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করব।” কৃষি দফতরেরও আশা, এ বার জেলায় সূর্যমুখী চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে।
|