পানাগড়ের শিল্পতালুকের ভিতরের রাস্তা নিয়ে জট সম্ভবত কাটতে চলেছে।
বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় ১৪৫৭ একর জমিতে তৈরি হওয়া ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ইতিমধ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল এবং মারুতি। ইতিমধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসন এবং সার উৎপাদন সংস্থা ম্যাটিকস ফার্টিলাইজার সেখানে কারখানা তৈরির কাজ শুরু করেছে। প্রশাসনের দাবি, সব মিলিয়ে প্রায় ১০টি ছোট-বড় শিল্পসংস্থা এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে বিনিয়োগে আগ্রহী।
গত আড়াই বছর ধরে ওই ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছিল। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) উৎপল বিশ্বাস জানান, এর জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ৪২০০ বাসিন্দাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। একর পিছু প্রায় দশ লক্ষ টাকা হিসেবে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম ওই টাকা দিয়েছে।
জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হলেও ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় বাধা ছিল। কেননা অনেকে ক্ষতিপূরনের টাকা নিতে চাননি। এলাকায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের ঝুপড়ি ছিল, ছিল ছোট জোত মালিকদের জমিও। তাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা না নিয়ে নানা দাবি-দাওয়া তোলেন। শিল্পোন্নয়ন নিগম একর পিছু ১০ লক্ষ টাকা হিসেবে দিতে রাজি হলেও সমস্যা পুরোপুরি কাটেনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভিতরে একটি ১০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কথা ছিল। তা দিয়েই কারখানা তৈরির মালপত্র যাওয়ার কথা। কারখানা তৈরি হলে উৎপাদিত সামগ্রীও ওই রাস্তা দিয়েই জি টি রোডে নিয়ে আসার কথা। কিন্তু ওই রাস্তা তৈরি নিয়েও সমস্যা দেখা দেয়। মূলত খেতমজুরদের কাছ থেকে বাধা আসে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় খেতমজুরদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল না। ফলে তাঁদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। বেশ কিছু বসবাসকারী আদিবাসীও নিজেদের ঝুপড়ি যেতে চাননি। ফলে ওই রাস্তা তৈরির কাজও শুরু করা সম্ভব হয়নি।
উৎপলবাবু জানান, শিল্পোন্নয়ন নিগম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, খেতমজুরদের ১৫০ দিনের মজুরি হিসেবে মাথাপিছু প্রায় ৩৭ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ওই ঘোষণার পরে দেখা যায়, এলাকার জনসংখ্যার চেয়ে খেতমজুরের সংখ্যা বেশি হয়ে গিয়েছে। প্রচুর মানুষ নিজেকে ‘খেতমজুর’ হিসেবে দাবি করে ক্ষতিপূরণ চাইছেন।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভিতরে ১০ কিলোমিটার জমির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায় ছ’মাস আগেই। কিন্তু রাস্তা তৈরিতে নিযুক্ত ঠিকাদারি সংস্থা কাজ শুরু করতেই স্থানীয় কোটা-চণ্ডীপুর, কাঁকসা মৌজা-সহ প্রায় সাত-আটটি এলাকায় কাজ বন্ধ করিয়ে দেন এলাকার কিছু মানুষ। জনসন অ্যান্ড জনসন সংস্থার অ্যাপ্রোচ রোড ও কালভার্ট তৈরিতেও বাধা আসে। ফলে জরুরি রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
কী করে কাটল সেই জট?
উৎপলবাবু বলেছেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে নতুন পঞ্চায়েত সদস্যেরা খেতমজুরদের চিহ্নিত করতে নামেন। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। এঁদেরই ১৫০ দিনের মজুরি বাবদ ৩৭ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আপাতত ওই রাস্তা তৈরিতে আর কোনও সমস্যা নেই। যে জায়গাগুলিতে বাধা এসেছিল, ঠিকেদার সংস্থা সেখানে খুঁটি পুঁতে রাস্তার জমি চিহ্নিতও করে ফেলছেন।” এ বার রাস্তা তৈরির কাজ দ্রুত শুরু হয়ে যাবে বলেই তাঁদের আশা। |