কিছু স্কুলে ঠাসাঠাসি, কিছু উঠে যাওয়ার মুখে
রকারি নীতি বলছে, হাইস্কুলের সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিকের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা সেই হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক-শিক্ষকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, সরকারি নিয়মের জেরে এক দিকে পড়ুয়া মিলছে না একাধিক স্কুলে। অন্য দিকে, পড়ুয়া উপচে হিমসিম খাচ্ছে একাধিক প্রাথমিক স্কুল।
পাশাপাশি দুই স্কুলের এই ভিন্ন ছবির দেখা মিলবে মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। বহু চেষ্টাতেও এক জনও পড়ুয়া জোগাড় করা যায়নি কুতুবপুর নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কারণ, কুতুবপুরের স্কুলটি কোনও হাইস্কুলের সঙ্গে যুক্ত নয়। অন্য দিকে, মাত্র ৩০০ মিটার দূরে পড়ুয়া সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন অক্রুরমণি করোনেশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। কারণ, এই স্কুলটি করোনেশন ইনস্টিটিউশনেরই (হাইস্কুল) প্রাথমিক বিভাগ। এ অবস্থায় ফাঁপরে মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।
এক জনও পড়ুয়া নেই নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
জেলা প্রাথমিক সংসদ চেয়ারম্যান স্বপনকুমার মিশ্র বলেন, “হাইস্কুল-সংযুক্ত প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির সমস্ত ছাত্রছাত্রী সেই হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। বছর তিনেক আগে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো জেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে এক জনও পড়ুয়া নেই। আর অক্রুরমণি করোনেশন-এ ছাত্র উপচে পড়ছে।”
কুতুবপুর নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, দোতলা স্কুল ভবনের চারটি ক্লাসরুমেই তালা। সব ক্লাস, ডেস্ক-বেঞ্চে ধুলোর আস্তরণ। ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা সবিতা সোরেন বললেন, “দু’বছর এখানে এক জনও পড়ুয়া নেই। স্থানীয় কাউন্সিলরকে নিয়ে এলাকায় ঘুরেও পড়ুয়া জোগাড় করতে পারিনি। ১১টার সময় এসে সারাদিন বসে থেকে বাড়ি ফিরে যাই।” তিনি জানান, পড়ুয়া নেই বলে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এক বছর থেকে অনুদানও বন্ধ করে দিয়েছে। স্কুল সাফাই করার তাই উপায় নেই। পুরপিতা তৃণমূলে সঞ্জয়কুমার দে বলেন, “পড়ুয়া না মিললে শিক্ষিকাদের দোষ কী? আবার এলাকার অভিভাবকেরা যদি সরাসরি হাইস্কুলে ভর্তির সুবিধা কাজে লাগাতে চান, তাঁদেরও দোষ দেওয়া যায় না।”
উল্টো ছবি অক্রুরমণি করোনেশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানকার প্রধানশিক্ষক মনোজ মিত্র বলেন, “বছর দু’য়েক আগে আমার স্কুলেও ১০০-র বেশি ছাত্র ছিল না। তারপরে ছাত্র ভর্তি এত বেড়েছে যে সামাল দিতে পারছি না। তৃতীয় শ্রেণিতে ৩১৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩০৬ জন। ৩৮ জন শিক্ষক নিয়ে ১,২০০ ছাত্রের ক্লাস নিতে হিমসিম খাচ্ছি।” তিনি বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ যদি আমাদের মতো হাইস্কুল-সংযুক্ত প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রভর্তির উপরে লাগাম না টানে ক্লাস চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
মালদহ শহরেই অন্তত ১৫টি হাইস্কুলের সঙ্গে প্রাথমিক স্কুল যুক্ত। আবার শহরাঞ্চলে হাইস্কুলের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন প্রাথমিকের সংখ্যা ৫০। অন্তত ২০টি প্রাথমিক স্কুল গত দু’বছর ধরে ছাত্রাভাবে ধুঁকছে। কোথাও পাঁচ, কোথাও ২৫-৩০ জন পড়ুয়া রয়েছে। কোথাও পড়ুয়ার চেয়ে শিক্ষক বেশি। মালদহ শহরে আরও তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়াই নেই। শহরাঞ্চলে হাইস্কুল সংযুক্ত প্রাথমিকে ভর্তি করার প্রবণতা বেশি, গ্রামের দিকে কম।
শহরের অক্রুরমণি করোনেশন থেকে শুরু করে ললিতমোহন শ্যামমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়, চিন্তামণি চমত্‌কার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, টাউন হাইস্কুল-সহ একাধিক হাইস্কুলের প্রাথমিক বিভাগে এক হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী। অন্য দিকে, কুতুবপুর নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষিকার সারাদিন কোনও কাজ নেই।
পড়ুয়া না পাওয়া স্কুলগুলির হাল ফেরাতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ চেয়ারম্যান জেলার দুই মন্ত্রীসাবিত্রী মিত্র এবং কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং ইংরেজবাজারের প্রতিটি ওয়ার্ডের পুরপিতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা সংসদ চেয়ারম্যান বলেন, “বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কোনও হাইস্কুল পঞ্চম শ্রেণিতে যে পরিমাণ পড়ুয়া নিতে পারবে, তাদের সংযুক্ত প্রাথমিক স্কুলে সেই সংখ্যক পড়ুয়াই ভর্তি নেওয়া হবে। এ নিয়ম চালু করা গেলে পড়ুয়ার অভাবে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি ধুঁকছে, সে গুলি বাঁচবে।” সংসদ সূত্রের খবর, কুতুবপুর নয়াগ্রামের শিক্ষিকাদের অন্য স্কুলে বদলি করা হবে। শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, “ওই দু’জন শিক্ষিকাকে পাশের কোনও বিদ্যালয়ে বদলি করে ডিসেম্বরের মধ্যেই কুতুবপুর নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় তুলে দেওয়া হবে। পরে ওই ভবনে সরকারি কোনও প্রকল্পের কাজ করা যেতে পারে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.