ছিয়াশি বছরের এক বৃদ্ধার হাত-মুখ বেঁধে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ও সোনার গহনা লুঠ করে পালাল দুষ্কৃতীরা। বুধবার সকালে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের ফাঁসিতলাপল্লির ঘটনা। সাতসকালে খোদ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, মহকুমাশাসকের অফিস থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে চলা এ রকম ডাকাতির ঘটনার পর শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেবযানী দাস নামে ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, “বছর ত্রিশের এক যুবক আমার হাত, মুখ বেঁধে গলা থেকে সোনার হার খুলে নেয়। চাবি কেড়ে নিয়ে একের পর এক আলমারি খুলে টাকাপয়সা ও সোনার গয়না বের করতে থাকে।” এই মহিলার অভিযোগ, সব মিলিয়ে নগদ আট লক্ষ টাকা টাকা ও ত্রিশ ভরি সোনার গহনা নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতী। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পরিচিত কেউ এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত বলে মনে হচ্ছে। তা না হলে ওই বৃদ্ধার কোথায় কী আছে এত নিখুঁত ভাবে জানা সম্ভব নয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” |
ফাঁসিতলাপল্লির বাড়ির দোতলায় একাই থাকতেন দেবযানীদেবী। স্বামী ও একমাত্র ছেলে থাকেন ফরাক্কার অর্জুনপুরে। চার মেয়ের দু’জন ওই শহরেই আলাদা বাড়িতে থাকেন। তাঁরাই ওই বৃদ্ধার দেখভাল করেন। বড় মেয়ে সান্ত্বনা দাস বলেন, “দোতলায় মায়ের পাশের ঘরে আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে রাতে থাকি। এদিনও ছিলাম। সকালে মায়ের জন্য জলখাবার তৈরি করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর দুপুরে এসে আবার স্নান করিয়ে খাইয়ে দিয়ে যাই। এটাই ফি দিনের রুটিন। এ দিনও আমরা সকালে মায়ের জলখাবার করে দিয়ে বেরিয়ে যাই। তারপরেই প্রতিবেশীদের মুখে ডাকাতির ঘটনা শুনে আমরা আসি মায়ের বাড়িতে।”
এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল? ওই বৃদ্ধা বলেন, “মেয়ে জামাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ আমার ঘরে একটা ছেলে ঢুকে পড়ে। তার মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। হাতে ছিল ছুরি। ভয় পেয়ে চিৎকার করতেই ওই যুবক আমার গলায় ছুরি ধরে। গলা থেকে প্রায় দশ ভরির হার খুলে নেয়। হাত থেকে খুলে নেয় বালা। এরপর হাত ও মুখ বেঁধে চাবি কেড়ে নিয়ে আলমারি খুলে টাকাপয়সা ও সোনার গহনা লুঠ করে পালায় ওই দুষ্কৃতী। চলে যাবার সময়ে সে তার পোশাক পাল্টে আমাকে গুদামে ফেলে রেখে চলে যায়।” তারপর কোনওরকমে হাত ও মুখের বাঁধন খুলে তিনি চিৎকার শুরু করেন। আওয়াজ পেয়েই ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা।
কিন্তু ওই বৃদ্ধার বড় মেয়ে জানাচ্ছেন, তাঁরা সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সদর দরজায় তালা লাগিয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে ওই দুষ্কৃতী ভিতরে ঢুকল কী করে? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, “পুরনো দিনের ওই দোতলা বাড়িতে অসংখ্য ঘর রয়েছে। কিন্তু সদর দরজা ছাড়া বাড়িতে ঢোকার অন্য কোনও রাস্তা নেই। এমনটাও হতে পারে যে, রাতে সুযোগ বুঝে বাড়িতে ঢুকে ওই দুষ্কৃতী লুকিয়ে ছিল। তারপর সকালে সবাই বেরিয়ে যেতেই ‘অপারেশন’ শুরু করে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার ঘণ্টা দু’য়েক পরেও ওই বৃদ্ধার আতঙ্কের ঘোর কাটেনি। আপনমনেই বিড়বিড় করেন, “বারবার মেয়েদের বলেছিলাম আমার জন্য সব সময় থাকবে এমন একজন লোক রেখে দিতে। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। এরপরে আর একা থাকব কী করে?”
স্থানীয় কাউন্সিলর বিকাশ নন্দ বলেন, “শহরের মধ্যে গত কয়েক মাসে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। বুধবার সাতসকালে যেভাবে ডাকাতির ঘটনা ঘটল সেটা রীতিমত আতঙ্কের। আমরা উদ্বিগ্ন।” |