সম্পাদকীয় ১...
তর্ক নহে, তরজা
র্কশীল তকমাটিতে ভারতীয়দের বিলক্ষণ আগ্রহ আছে, কিন্তু তর্কে অনীহা ততোধিক। অতএব, নরেন্দ্র মোদী সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিষয়ে তর্কের প্রস্তাব করিলে সাম্প্রতিক কালে তাঁহার কঠোর সমালোচক নীতীশ কুমার যখন বলেন, এই প্রসঙ্গে বিতর্কের কোনও প্রয়োজনই নাই, তখন অবাক হইবার কারণ থাকে না। নরেন্দ্র মোদী নিঃসন্দেহে তর্কের মাহাত্ম্যের কথা ভাবিয়া এই তর্কটি তোলেন নাই। তাঁহার উদ্দেশ্য রাজনীতি। নীতীশ কুমার অথবা কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি অথবা জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার প্রতিক্রিয়াও নিকশ রাজনীতিসঞ্জাত। হাতে, অতঃপর, পড়িয়া থাকিল সেই রাজনীতিই। একটি জরুরি প্রশ্নে একটি জরুরি বিতর্ক সেই রাজনীতির ঘোলা জলে তলাইয়া গেল। একটি প্রশ্ন উঠিতে পারে। ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ হইতে যে বিতর্কের সূত্রপাত, তাহাকে কি সত্যই বৃহৎ আলোচনায় উত্তীর্ণ করা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। ৩৭০ ধারা বিষয়ে তর্কের কথা কে বলিতেছেন, কেন বলিতেছেন— এই প্রশ্নগুলিতে আবদ্ধ থাকিবার প্রয়োজন নাই। আলোচনাটি জরুরি। কোনও বিষয়ই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নহে, আলোচনার অতীত নহে। তর্কের শেষে হয়তো দেখা যাইবে, ৩৭০ ধারা অতি জরুরি, অথবা হয়তো সত্যই এই ধারাটি কাশ্মীরের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। কিন্তু যে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হইবার জন্য বিতর্কের পথটি অতিক্রম করা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র রাজনীতিকে হারাইতে হইলে সৎ বিতর্কের বিকল্প নাই।
‘বিতর্ক’ মানে যে কোনও প্রকারে প্রতিপক্ষের মত খণ্ডন করা নহে, নিজের মত প্রতিষ্ঠা করা নহে। বিতর্ক মানে, সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা লইয়া বিরুদ্ধ মতটি শোনা, তাহাকে নিজের মরমে প্রবেশ করিতে দেওয়া, সেই মতটি বিচার করিয়া দেখা। গণতন্ত্রে এই বিতর্কের মাহাত্ম্য অসীম। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সেই বিতর্কের কোনও স্থান নাই। প্রকৃত বিতর্ক সম্ভব ছিল, অথচ ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ সেই বিতর্কের জমি দখল করিয়া লইয়াছে— ভারতে এমন উদাহরণ প্রচুর। ১৯৮০-র দশকে শাহবানু মামলা তাহার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যে বিতর্কের সূত্রপাত হইয়াছিল, তাহাকে চলিতে দিলে হয়তো ভারতীয় মুসলিম নারীর জীবন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হইতে পারিত। কিন্তু ক্ষুদ্র হিন্দুত্ববাদী স্বার্থের দাপটে সেই নারীবাদী বিতর্কটি সম্পূর্ণ মরিয়া গেল। তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’-পরবর্তী বিতর্ক আরও একটি উদাহরণ, যেখানে বিজেপি আসিয়া বিতর্কটিকে দখল করিয়াছিল। অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের নীতিকে কেন্দ্র করিয়া যে বিতর্কটি ছিল, তাহাও উচ্চস্বর রাজনীতির নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছিল। এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি মিলিবে। ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রধান কুশীলবরা প্রায়শই বিতর্কের ধর্ম জানেন না, চলন বুঝেন না। তথ্যসমৃদ্ধ যুক্তিতে তাঁহাদের রুচি নাই। বিতর্কের নামে ভারতে যাহা চলে, তাহা সচরাচর তরজামাত্র। তাহার মান নাই, অর্থও নাই। কেন ভারতীয় রাজনীতির মূল স্রোতে বিতর্কের ঠাঁই নাই? তাহার প্রধান কারণ সম্ভবত দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলির সাংগঠনিক চরিত্রে লুকাইয়া আছে। কংগ্রেস, অন্তত চল্লিশ বৎসরে, দলের অভ্যন্তরে বিতর্ককে স্থান দেয় নাই। নেহরু-যুগের খোলা হাওয়ার সংস্কৃতি আকবর রোডে ঢুকিতে পায় নাই। যে সঙ্ঘ পরিবারে বিজেপি-র জন্ম, তাহাতে বিতর্ক আরও বর্জনীয়। সেখানে জ্ঞানের ধারা উপর হইতে নীচে নামে, বিপরীতমুখী প্রশ্নের অবকাশ নাই। আর, বামপন্থীদের কথা না বলাই ভাল, তাঁহাদের তত্ত্ব যাহাই বলুক, তাঁহাদের আচরণবিধিতে বিতর্ক নিষিদ্ধ। আঞ্চলিক দলগুলিতেও প্রধান (এবং সম্ভবত একমাত্র) নেতার (বা নেত্রীর) ইচ্ছাই সব। কোনও দলের সংস্কৃতিতেই বিতর্ক নাই, প্রশ্ন নাই। হয় মানিয়া লওয়া আছে, নচেৎ কাদা-ছোড়াছুড়ি। গণতন্ত্রের বিতর্কে তাহারা ভাগ লইবে কোন শিক্ষার বলে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.