এক মাস ধরে হরতাল-অবরোধে রেলপথকেই নাশকতার মূল নিশানা করেছে বাংলাদেশের বিএনপি ও তাদের শরিক জামাতে ইসলামি। প্রতিদিনই একটি-দু’টি করে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ছিল, কোনও ক্রমে দুর্ঘটনা এড়িয়ে যেতে পারছিল বেশ কয়েকটি। কিন্তু বুধবার ভোরে দেশের তিন প্রান্তে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ল তিন-তিনটি দূরপাল্লার ট্রেন। তার একটিতে মারা গেলেন ৫ যাত্রী, তিন দুর্ঘটনা মিলিয়ে আহতের সংখ্যা অন্তত ১০০। অবরোধকারীরা কোথাও আস্ত রেললাইনটাই উপড়ে রেখেছিল, তো কোথাও আধ কিলোমিটার রেললাইন জুড়ে খোলা ছিল ফিসপ্লেট। এই নাশকতার পিছনেও সংকীর্ণ রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সাফ কথা ভারতের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা সরকার রেল পরিকাঠামোয় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার কারণেই এই নিরাপদ গণপরিবহণটি বিরোধী দলের নিশানা হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এর পিছনে একটি কারণ যদি সরকারের সাফল্যকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়, অন্যটি অবশ্যই সড়ক পরিবহণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা। এ কাজে বিদেশি শক্তির উস্কানি থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রেলমন্ত্রী। তিনি জানান, এই দু’মাসে অন্তর্ঘাতের কারণে অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে রেলের। বাংলাদেশ রেলের ডিজি আবু তাহের বলেন, হরতাল-অবরোধের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে রেলপথকে নিশানা করার ঘটনা বেনজির। ডিজি জানান, বাংলাদেশের ২৯০০ কিলোমিটার রেলপথে অন্তত ৮৫ জায়গায় বড়সড় অন্তর্ঘাত করা হয়েছে। লাইন ওপড়ানো, ফিসপ্লেট খুলে রাখা, স্লিপারে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা তো রয়েইছে, কোথাও কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা রেলের কামরায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলন্ত ট্রেনে ইট-পাথরও ছোড়া হয়েছে। |
গাইবান্ধার বুরুঙ্গিতে লালমনিরহাট থেকে শান্তাহারগামী পদ্মরাগ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও চারটি বগি মাঠের ওপর গড়িয়ে পড়ে। ভোর রাতের এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৪ জন যাত্রী প্রাণ হারান। পরে হাসপাতালে মারা যান আরও এক জন। খবর পেয়ে আগের স্টেশন বোনারপাড়া জংশন থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। রংপুর ও বগুড়া থেকে তিনটি ক্রেন গিয়ে বগিগুলি সোজা করে। অন্তত ৫০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। বোনারপাড়া রেলওয়ে থানার ওসি বলেন, “দুবৃত্তরা রেললাইনের ফিসপ্লেট ও ক্লিপ খুলে রাখায় এই মারাত্মক দুর্ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তের পর আমরা দুই সন্দেহভাজনকে আটক করেছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আটক দু’জনই জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মী।
গত দু’সপ্তাহে তিন-তিন বার অল্পের জন্য মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়িয়েছিল চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামগামী মেঘনা এক্সপ্রেস। চাঁদপুরের শহরতলিতে রেললাইন উপড়ে রাখায় বুধবার সেটির ইঞ্জিন-সহ পাঁচটি কামরা উল্টে যায়। চাঁদপুরের ওসি সুভাষকান্তি দাস জানান, ভোর পৌনে ছটা নাগাদ প্রায় ৫০০ যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে মেঘনা এক্সপ্রেস। গাড়ির গতি কম থাকায় প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে। তবে অনেক যাত্রী অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পরে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম শাখায় ট্রেন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। খুলনার ফুলতলায় বেজেরডাঙা স্টেশনের কাছে নাশকতায় বেলাইন হয় গোয়ালন্দ থেকে খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস। পুলিশ জানিয়েছে, এখানেও বিস্তীর্ণ রেললাইনের ফিসপ্লেট ও ক্লিপ খুলে রাখা হয়েছিল। অন্তত ৩০ জন যাত্রী এ ঘটনায় জখম হন। বিএনপি-জামাতের লাগাতার অবরোধের পঞ্চম দিনেও বাংলাদেশের জায়গায় জায়গায় সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ দিনও রাজধানী ঢাকা-সহ নানা শহরে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। গণ্ডগোলের জেরে পেট্রাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকাতা থেকে কোনও বাসও আসছে না। তার মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার থেকে তাঁর দলের মন্ত্রীদের ইস্তফা দিতে বলেছেন জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মহম্মদ এরশাদ। বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভির পুলিশি হেফাজত ও জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। শাহবাগে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তাঁকে আসামি করেছে পুলিশ। বিচারক জানান, জেরা করতে চাইলে পুলিশ জেলগেটে গিয়ে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে তা করবেন। |