দশ মাসের মেয়েকে নিয়ে বাজার করতে গিয়েছিলেন মা। বাড়ি ফেরার পথে মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেও বেঁচে গেল সেই শিশুকন্যা। শুধু তাই নয়, রাতভর খোলা আকাশের নীচে মায়ের মৃতদেহের সঙ্গেই ছিল সে। সকালে দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করেন গ্রামের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ রায়গঞ্জের কমলাবাড়ি পঞ্চায়েতের কালীবাড়ি এলাকার একটি পুকুরের ধারের প্রায় ১০ ফুট গভীর গর্তে কালীবাড়ি সংলগ্ন ছটপড়ুয়া এলাকার বাসিন্দা রাধিকা বর্মন (৩৫)-এর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন বাসিন্দারা। বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাসিন্দারা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ জানায়, মৃতার বুকের ওপরে মাথা দিয়ে তাঁর মেয়ে সন্ধ্যা শুয়ে ছিল। খবর পেয়ে মৃতার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। |
পুলিশের দাবি, রাধিকাদেবী বাজার থেকে ফেরার সময় কোনভাবে পা পিছলে পড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রায়গঞ্জের আইসি দীনেশ প্রামাণিক বলেন, “মৃতার পরিবারের তরফে এখনও কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। আমরা একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছি। তবে গর্তে পড়েই ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সম্ভবত কোনও কারণে পড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই বধূর মৃত্যু হয়েছে। মৃতার শরীরে অবশ্য কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ভিসেরা রিপোর্টে সব পরিস্কার হবে।”
ওই বধূর স্বামী ঝুপরু বর্মন ছোটপড়ুয়া এলাকার একটি ময়দার কারখানায় দিনমজুরির কাজ করেন। সন্ধ্যা ছাড়াও ওই দম্পতির রোহিত নামে ৩ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ঝুপরুবাবু বলেন, “সোমবার সন্ধ্যায় স্ত্রী ছেলেকে বড় বৌদির কাছে রেখে ১০ মাসের মেয়ে সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে কিলোমিটার দূরের কালীবাড়ি বাজারে বাজার করতে গিয়েছিল। রাত ১০টা নাগাদ কাজ সেরে বাড়ি ফিরে জানতে পারি স্ত্রী ও মেয়ে বাড়ি ফেরেনি। রাতভর স্ত্রী ও মেয়েকে খুঁজেই পাইনি।” তিনি আরও জানান, এ দিন ভোর সাড়ে ৫ টা নাগাদ বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে পারেন বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে একটি গর্তে স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। তাঁর কথায়, “ছুটে গিয়ে দেখতে পাই মেয়ে স্ত্রী’র নিথর দেহে মাথা রেখে শুয়ে আছে।”
ঝুপরুবাবুর বৌদি মীনাদেবী বলেন, “বাচ্চাটি সারারাত খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিল। ঠান্ডায় ওর সারা শরীরের রঙ কালো হয়ে গিয়েছিল। দুধ খাইয়ে, আগুন সেঁক দেওয়া হয়েছে। রাধিকার ছেলেমেয়েকে আমিই মানুষ করব।” প্রতিবেশী দুলাল বর্মন, নীলা বর্মন, সুভাষ হালদার ও বিপ্লব বর্মনরা বলেন, “রাতভর ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে পড়ে থেকে কী ভাবে শিশুটি বেঁচে গেল তা ভেবেই আমরা অবাক হচ্ছি। ঠিক যেন রূপকথার গল্প!”
এ দিন রাধিকাদেবীর মৃতদেহের পাশ থেকে একটি বাজারের ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ব্যাগ থেকে চাল ও বিভিন্ন ধরনের সব্জি রয়েছে। |