স্কুল-কলেজে পড়ার সময় খুব খেলাধুলো করতেন বিদিশা মুখোপাধ্যায়। নেশা ছিল পাহাড়ে চড়ার। স্কাউট ও গাইডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু বয়স তিরিশ পার হতেই পায়ে সমস্যা শুরু হল। একটু তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে গেলেই পা মুচকে পড়ে যেতেন। রিকশা বা বাসে উঠতে গেলে ব্যথা লাগত। পা তুলতে পারতেন না। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, বিরল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত বিদিশা। যাতে তাঁর শরীরের ভারসাম্য ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, এই রোগ পুরোপুরি সারা সম্ভব নয়। একমাত্র উপযুক্ত পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
বছর ষাটের সুশান্তকুমার দাসের সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছিল চলতি বছর অগস্টে। ডান দিকটা অসাড় হয়ে যায়। আর কোনও দিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না বলেই মনে করেছিলেন। কিন্তু ২২ দিনের পুনর্বাসন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে গিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন সুশান্তবাবু। দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াচ্ছেন, স্পষ্ট কথা বলছেন, কাজকর্ম করছেন।
মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে রোগীদের এই পুনর্বাসন কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার কথাই বারবার উল্লেখ করলেন চিকিৎসকেরা। বিদিশাদেবী কিংবা সুশান্তবাবু সঠিক সময়ে পুনর্বাসন থেরাপি নিয়ে এখন সুস্থ ভাবে জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন? কী ভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন? মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে পার্ক সার্কাসের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের তরফে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মৌলিমাধব ঘটক বলেন, “গ্রামের দিকে বৈজ্ঞানিক ভাবে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালানোর ভাল সংস্থা নেই। যখন রোগীরা আমাদের কাছে আসছেন, তখন এত দেরি হয়ে যাচ্ছে যে পুনর্বাসন কার্যক্রম চালিয়েও তাঁদের পুরো সুস্থ করা যাচ্ছে না।” তাঁর প্রস্তাব, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিবন্ধীদের যে টাকা দরকার, সেটা সরকার দিলে অনেকে উপকৃত হবেন।
কোনও রোগ বা দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়লে দীর্ঘ সময় রোগীকে হাসপাতালে রেখে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালানোর পরিকাঠামো এ রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রেও নেই বললেই চলে। এ কথা স্বীকার করে নিয়েই স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস বলেন, “এসএসকেএম হাসপাতালে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অন্য সরকারি হাসপাতালে অদূর ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে ব্যবস্থা হবে নিশ্চয়ই।” |