হাসপাতালের তিন তলার শিশুবিভাগ অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে পরিষ্কার না করার ফলে শয্যার নিচে রাখা ডাস্টবিন থেকে উপচে পড়ছে নোংরা-আবর্জনা। ঘরের মেঝে সাফ-সুতরো না করার ছাপ স্পষ্ট। সোমবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগ সরজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখতে হল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদারকে।
শিলাদিত্যবাবু বলেন “জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তাঁরা যাতে ঠিক মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, তা খতিয়ে দেখতেই মেডিক্যাল হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত আরও একটু যত্নবান হওয়া।”
২০১২ সালের জুন মাসে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অনুমোদন পায়। জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত হওয়ায় রোগীদের চাপ বেড়েছে অনেকটাই। কিন্তু হাসপাতালে বেশ কিছু সমস্যা থাকায় ওই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবার দিক থেকে সব ক্ষেত্রে যে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, তা কিন্তু নয়। নার্স নিয়ে একটা সমস্যা থেকেই গিয়েছে। হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা অনুযায়ী নার্স নিয়োগ করে স্বাস্থ্য ভবন। এ দিকে শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেলেও সেই অনুপাতে নার্স নিয়োগ করা হয়নি। সমস্যার কথা স্বাস্থ্য ভবনে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।”
একই ভাবে রয়েছে সাফাই কর্মীর সমস্যাও। সকালের দিকে শিশুবিভাগ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চলে যাওয়ার পরে সারা দিনে আর ধোয়া-মোছা হয় না। ফলে সাফাই কর্মীর অভাবে দুপুরে ও রাতে শিশুবিভাগ অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে। শয্যার নিচে থাকা প্লাস্টিকের ডাস্টবিনও আবর্জনায় ভর্তি থাকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত। সেই সঙ্গে শিশু বিভাগে সাধারণ শিশুদের সঙ্গে ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুদেরও রাখা হয় বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই, সম্প্রতি জেলা সদর হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুবিভাগ সরিয়ে আনা হয়েছে। যেহেতু সদর হাসপাতালে ডায়েরিয়া ওয়ার্ড রয়েছে তাই এখানে এখনও ডায়েরিয়া বিভাগ চালু হয়নি। তবে ডায়েরিয়া আক্রাম্ত কোনও শিশুকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায়। সেই কারণেই চার কিমি দূরের ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে না পাঠিয়ে এখানেই ভর্তি করে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে শিশুবিভাগের ঘরের এক কোনের চারটি বেড ওই রোগীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে।
সভাধিপতি শিলাদিত্যবাবু বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখবে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে বা বাধার মুখে পড়লে বিষয়টি আমাদের জানানোর জন্যও সুপারকে বলেছি। সেই সঙ্গে হাসপাতালের কোনও প্রস্তাব থাকলে তা আমাদের লিখিত ভাবে জানানোর কথাও বলেছি। সেগুলি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা করা হবে।” |