ডাকে পাঠানো ড্রাফটের হদিশ নেই। এর জেরে মানবাজার ১ ব্লকের ৪৯ জন বিপিএলের ইন্দিরা আবাসে ঘর পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ব্লক প্রশাসন থেকে ডাকবিভাগ দৌড়াদৌড়ি করেও এক বছর আগের সেই ড্রাফটের খোঁজ পাননি ওই উপভোক্তারা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মানবাজার ১ ব্লকের ধানাড়া পঞ্চায়েত এলাকার ৪৭ জন ও বারমেশিয়া-রামনগর পঞ্চায়েতের ২ জনের নামে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে প্রথম কিস্তির জনপ্রতি ২৪ হাজার ২৫০ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। ৯টি ড্রাফটের মাধ্যমে মোট ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার ২৫০ টাকা দু’টি ধাপে পাঠানো হয় পুরুলিয়া মুখ্য ডাকঘরে। প্রথমটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ও দ্বিতীয়টি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ছাড়া হয়। কিন্তু পুরুলিয়া মুখ্য ডাকঘর ওই ড্রাফট সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেনি।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, সাধারণত ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের টাকা উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিন্তু কাছাকাছি ব্যাঙ্ক না থাকায় ওই উপভোক্তাদের পিড়রগড়িয়া ও মানবাজার ডাকঘরের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ওই দুই ডাকঘরের পক্ষে ড্রাফট ভাঙানোর সমস্যা থাকায় মুখ্য ডাকঘরে ড্রাফটগুলি পাঠানো হয়। সেখান থেকে ওই টাকা সংশ্লিষ্ট ডাকঘরগুলিতে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
কিন্তু এক বছর পার হতে চললেও উপভোক্তারা বাড়ি তৈরির টাকা আজও পাননি। কেন? মানবাজার ১ এর বিডিও সায়ক দেব বলেন, “স্থানীয় দুই ডাকঘরে টাকা কেন আসেনি বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও ডাক বিভাগের কাছে মোট ১১টি চিঠি পাঠিয়েছি। বার বার ডাকবিভাগ ড্রাফটের বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠায়। সেই অনুযায়ী আমরা ডাকবিভাগকে বিশদ তথ্যও দিয়েছি। কিন্তু ড্রাফটগুলি কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে ডাকবিভাগ জানাতে পারছে না।’’
অন্য দিকে, ডাক বিভাগও এ ব্যাপারে প্রকাশ্য কিছু জানাতে চাইছেন না। পুরুলিয়ার পোস্টাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট তপন চক্রবর্তী বলেন, “ওই ব্যাপারে ইতিমধ্যে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।” পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “ডাকবিভাগ জানিয়েছে, তাঁদের দফতরে কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে ওই ড্রাফটগুলি কী অবস্থায়, কোথায় রয়েছে তা তিনি জানাতে পারেনি। আমি তাঁদের অবিলম্বে ড্রাফটগুলি ডাকঘরে জমা করতে বলেছি।”
ডাকঘর ও প্রশাসনের এই চাপানউতোরে বিভ্রান্ত উপভোক্তারা। তাঁদের মধ্যে ধানাড়া পঞ্চায়েতের পিড়রগড়িয়া গ্রামের যামিনীকান্ত মণ্ডল, জামদা গ্রামের গগনচন্দ্র মুদি ও কর্পূরা মুদি বলেন, “প্রশাসন আমাদের ঘর তৈরি করে দেব বলে শুনেছিলাম। কিন্তু বছর ঘুরতে চলল, টাকা তো পেলাম না।” টাকার খোঁজে তাঁরাও হয়রান হচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, “ডাকঘরে খোঁজ করতে গেলে ওঁরা বলছেন, আমাদের নামে টাকা আসেনি। আবার ব্লক অফিসের কর্মীরা জানাচ্ছেন, টাকা ডাকঘরে পাঠানো হয়ে গিয়েছে। আমরা তাহলে কবে ঘর তৈরির টাকা পাব?” সম্প্রতি উপভোক্তারা দল বেঁধে মানবাজার ১ ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন।
মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি প্রভাত মাহাতো, বিরোধী দলনেতা প্রবীর মণ্ডলও সমাধান সূত্র বের করতে বিডিও-র সঙ্গে বৈঠক করেন। তাতে জট খোলার থেকে জট আরও পাকিয়েছে। বিডিও বলেন, “সাধারণত ড্রাফটের মেয়াদ তিন মাস। ওই ড্রাফটগুলি পাওয়া গেলেও সেগুলি বাতিল বলে গন্য হবে। আবার ডাকবিভাগ যদি ওগুলি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায়, তাহলে ড্রাফটের নম্বর নিয়ে থানায় জেনারেল ডায়েরি করতে হবে। নতুন করে ড্রাফট তৈরি করা হলে তা প্রাপকদের হাতে পৌঁছতে ফেব্রুয়ারি মাস হয়ে যাবে। সামনেই লোকসভা ভোট থাকায় ওই টাকা বন্টন নিয়ে সমস্যা হতে পারে।” জট আরও পাকিয়েছে, ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বেড়ে যাওয়ায়। ২০১৩-র এপ্রিল মাস থেকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাদ্দ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে।
সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ চৌধুরী বলেন, “ইতিমধ্যে গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেড়েছে। তা হলে ওই ৪৯ জন প্রাপক আগের বরাদ্দের টাকা কেন নেবেন? নতুন হারে বরাদ্দ অনুযায়ী তাঁদের টাকা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।” তাঁর আরও দাবি, ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরের ওই উপভোক্তারা যতদিন না তাঁদের গৃহনির্মাণের টাকা পাচ্ছেন, ততদিন নতুন কাউকে ওই প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। বিডিও বলেন, “২০১২-‘১৩ আর্থিক বর্ষের তালিকায় আনুযায়ী ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে নতুন ৫৭২ জন গৃহনির্মাণের টাকা পাবেন। কিন্তু এই জট না কাটলে তাঁদের প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া যাচ্ছে না।” |