|
|
|
|
দিঘার রাস্তায় ধুলোর ঝড়ে নাভিশ্বাস |
সুব্রত গুহ • কলকাতা |
ধুলোর ঝড়ে ঝাপসা চতুর্দিক। সঙ্গে পাথরের গুঁড়ো মিশে। কলকাতা থেকে দিঘা যাওয়ার একমাত্র রাস্তার রামনগর থানার দেউলিবাংলো থেকে দিঘা পর্যন্ত (১৭ কিলোমিটার) অংশে তাই নিঃশ্বাস নেওয়াই দায়। রাস্তার দু’পাশের বাসিন্দারাও ধুলোর হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়ির জানলা-দরজা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।
কলকাতা-দিঘা সড়কে প্রতিদিন দু’হাজারের বেশি যান চলাচল করে। রাস্তার যে কোনও গাড়ি গেলেই চারিদিক ধুলোয় ভরে যায়। ধুলোর ঝড়ের সঙ্গে মিশে থাকা পাথরের টুকরো ছিটকে পড়ে পথচারীর গায়ে।
এই অবস্থা কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সম্প্রতি রাস্তা মেরামত হয়েছে। গলদ রয়ে গিয়েছে সেই মেরামতির পদ্ধতিতেই। জলের সঙ্গে পাথর ও পাথরের গুঁড়ো মিশিয়ে দিঘা যাওয়ার ওই রাস্তার খানা-খন্দ ভরাট করা হয়েছে। খন্দ বন্ধ হলেও নতুন বিপত্তি হাজির এখন। খটখটে শুকনো রাস্তায় গাড়ি চলাচল করলেই ধুলোর ঝড় বইছে। আর সেই ধুলোয় পাথরের গুড়ো মিশে থাকায় পরিবেশ দূষণ বাড়ছে এলাকায়। |
|
রামনগর থেকে ঠিকড়া মোড়ের পথে ধুলোয় ধুলোময় চারদিক। —নিজস্ব চিত্র। |
শুধু যাত্রীরাই নন, সমস্যায় পড়েছেন রাস্তার দু’ধারের বাসিন্দারাও। এর জেরে স্থানীয় বাসিন্দা বিশেষত বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি জাতীয় রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর দিঘা শাখার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মিশ্র। তাঁর মতে, ওই ধুলো থেকে নিউমোকোনিওসিস এমনকী ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
দিঘার দেবেন্দ্রলাল জগবন্ধু হাইস্কুলের শিক্ষক নন্দগাপাল পাত্র প্রতিদিন রামনগর থানার সটিলাপুর থেকে মোটর সাইকেলে ওই সড়ক ধরেই প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে জগদীশপুরের স্কুলে যাতায়াত করেন। তাঁর কথায়, “রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও গাড়ি গেলেই এমন ধুলোর ঝড় উঠে যে, মোটর বাইক থামিয়ে দিতে হয়। না হলে যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” একই অভিযোগ রামনগর থানার নরিহা গ্রামের স্কুল ছাত্রী মিতালী মাইতির। রামনগর বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী প্রতি দিন নরিহা থেকে সাইকেলে করে স্কুলে যায়। তার কথায়, “মুখ থেকে পা ধুলোয় ভরে যায়। ধুলো মুখে ঢুকে গেলে কাশি আসে। কি ভাবে যাতায়াত করি, আমরাই জানি।”
রাস্তা মেরামতির পদ্ধতিতেই যে সমস্যা, তা মেনে নিচ্ছেন সরকারি আধিকারিকরা। পূর্ত ও সড়ক দফতরের কাঁথির সহকারী বাস্তুকার অর্ধ্বেন্দু মণ্ডল বলেন, “পুজোর সময় অতি বর্ষণে দিঘা-কলকাতা সড়কের ক্ষতি হয়। পূর্ত দফতর নন্দকুমার থেকে দিঘা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার অংশে মেরামতির জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। পুজোর পর ওয়াটার বাউন্ড ম্যাকাডাম পদ্ধতিতে পাথরের কুচি আর পাথরের গুড়ো জলের সঙ্গে মিশিয়ে ওই রাস্তার খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে। বিটুমিন দিয়ে রাস্তার মেরামত না করার ফলেই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”
এখন পরিত্রাণের উপায়?
রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রামনগর-১ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে চিঠি দিয়েছেন তিনি। ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক তমোজিৎ চক্রবর্তী বিষয়টি উধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে ব্লক অফিস সূত্রে খবর। পূর্ত ও সড়ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তা বিটুমিন (পিচ) দিয়ে মেরামত করার জন্য ৭০ লক্ষ টাকার টেন্ডার ডাকা হয়েছে। তবে গত ২৮ নভেম্বর টেন্ডার জমার শেষ দিনে মাত্র দু’টি টেন্ডার জমা পড়েছে। ন্যূনতম তিনটি টেন্ডার ফর্ম জমা পড়া বাধ্যতামূলক। তাই ফের নতুন করে টেন্ডার ডাকার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অধ্বের্র্ন্দুবাবুর আশ্বাস, “আগামী দিনে এই রাস্তা বিটুমিন (পিচ) দিয়ে মেরামতের জন্য টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। সেই কাজ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না।” তবে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে রাস্তায় বিটুমিনের কাজ শুরু হতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। ততদিন ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীদের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। |
|
|
|
|
|