ক্রিকেটবিশ্বের কাছে তিনি প্রাক্তন হয়ে গেলেও ক্রিকেট মাঠ যে এখনই একেবারে ছাড়বেন না, তার একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন ক্রিকেট কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর। তাঁর গুণমুগ্ধদের সচিন জানিয়ে দিলেন, আন্তর্জাতিক ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে না থাকলেও প্রদর্শনী বা চ্যারিটি ক্রিকেটে নামতে আপত্তি নেই তাঁর।
দু’সপ্তাহ আগেই এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক অক্রিকেটীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি, আশা ভোঁসলে। আন্ধেরির ওয়াটারস্টোন ক্লাবে সচিনের দেওয়া বিদায়ী পার্টিতে আশাজি বলেছিলেন, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না থাকুক, সচিন চ্যারিটি ক্রিকেটে খেলুক। তাতে সমাজেরও ভাল হবে, আমরাও ওর খেলা দেখতে পাব।” প্রিয় গায়িকার সেই প্রস্তাব হয়তো মনে রেখেছেন সচিন। বলছেন, “ক্রিকেট মাঠের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক ত্যাগ করা সম্ভব নয় বোধহয়। তাই প্রদর্শনী ক্রিকেটে খেলতেই পারি।”
নিখাদ ভক্তদের সঙ্গে আড্ডা। সংবাদমাধ্যমের সেখানে জায়গা নেই। এয়ারটেল আয়োজিত লাইভ চ্যাট ‘টক টু মি’। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সচিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁর ভক্তরা। ফোনের ও-পারে সচিন। এ-পারে দফায় দফায় ভাগ্যবান সচিন-ভক্তরা। যে আড্ডার ‘ভয়েস ট্রান্সক্রিপ্ট’ আনন্দবাজারের হাতে আসার পর দেখা যাচ্ছে, কী ভাবে ভক্তদের সঙ্গে মজে গিয়েছিলেন লিটল মাস্টারও। |
কেউ চান, মুম্বইয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, কেউ চান কী ভাবে ব্যাটের মাঝখানে বল লাগিয়ে ড্রাইভ করা যায়, তার টিপস্। কারও আবদার, “আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটা একটু দেবেন?” যার জবাবে সচিন, “আপনিই তো বললেন ব্যক্তিগত নম্বর। তা হলে ব্যক্তিগত নম্বরটা ব্যক্তিগতই থাকতে দিন না।” পটনার এক ব্যাঙ্কের কর্মীরা তাঁদের কাজ শেষে স্পিকারফোন চালিয়ে সচিনকে ফোন করে আশ মিটিয়ে নিলেন। এমন এক প্রাণবন্ত লাইভ চ্যাটে ভক্তদের সামনে নিজেকে মেলে ধরতেও দ্বিধা করেননি সচিন। বললেন এমন কিছু, যা আগে কখনও বলেননি।
২৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনে বিশ্বের বহু ভয়ঙ্কর বা ধূর্ত বোলারকে মোকাবিলা করতে হলেও তাঁকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেছিলেন কে? এর জবাবে সচিন বলেন, “বহু বোলারকেই খেলেছি এই দীর্ঘ সময়ে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন লোকটাকে বেছে নেওয়া বেশ শক্ত কাজ। বহু বোলারের বিরুদ্ধে ব্যাট করা যেমন সহজ হয়নি, তেমন উপভোগও করেছি অনেকের বোলিং। তবে এক জনের কথা বলতে পারি, যে আমাকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছিল। সে হ্যান্সি ক্রোনিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক।” পরিসংখ্যানও বলছে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার সচিনকে আউট করেছেন ক্রোনিয়ে ও অ্যালান ডোনাল্ড। দু’জনেই তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি করে টেস্টে খেলেছিলেন, আউট করেছিলেন পাঁচবার। ওয়ান ডে-তে অবশ্য সচিনকে জব্দ করতে পারেননি ক্রোনিয়ে। ৩২টি ম্যাচে মাত্র তিনবার সচিনকে আউট করেছেন তিনি। টেস্টে সবচেয়ে বেশি বার সচিনকে ফেরানো বোলারদের তালিকায় তিনি সাত নম্বরে।
ভারতীয় পেস বোলারদের প্রসঙ্গ ওঠায় সচিনের মুখেও শোনা গেল বাংলার মহম্মদ শামির নাম। কয়েক দিন আগে জাহির খান তাঁর প্রশংসা করার পর এ বার সচিন বললেন, “জাহির যখন টপ ফর্মে ছিল, তখন প্রায়ই ৮০-৯০ মাইল গতিতে বল করত। শেষ যে দুটো টেস্ট খেললাম, তাতে তো দেখলাম মহম্মদ শামি ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করছে। নব্বই মাইলের কাছাকাছি। ভাল পেসার। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আশা করি ১৪০-এর উপর গতিতে বল করবে। কিন্তু টিমের সবাই ৯০ মাইলে বল করলেই যে দারুণ অ্যাটাক হবে, তার কোনও মানে নেই। বোলিংয়ে বৈচিত্র থাকা দরকার। যেমন ভুবনেশ্বর কুমারের বোলিংয়ে আছে। ও তো সুইংয়ে মাস্টার। ইশান্ত, উমেশরাও ভাল। দক্ষিণ আফ্রিকায় আশা করি ওরা দারুণ বল করবে। এ বার তো আপনাদের মতো আমিও বাড়িতে বসে টিভিতে ইন্ডিয়ার ম্যাচ দেখব।”
অনেক ভক্তই কাতর ভাবে প্রশ্ন করেছেন, কেন ক্রিকেট ছাড়লেন? আপনাকে ছাড়া তো ক্রিকেট ভাবাই যায় না। তাঁদের উদ্দেশে সচিনের বক্তব্য, “ক্রিকেটার আসবে, যাবে। ক্রিকেট কিন্তু চলতেই থাকবে। ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি হয়ে গিয়েছে। তারাও যথেষ্ট ভাল খেলছে। ওদের সমর্থন করুন। তা হলেই তো আপনি সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমী।”
|
সবচেয়ে কঠিন বোলারকে বাছা শক্ত। সবার বিরুদ্ধে ব্যাট করা যেমন সহজ হয়নি, উপভোগও করেছি অনেককে। এক জনের কথা বলতে পারি, যে আমাকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছিল। সে হ্যান্সি ক্রোনিয়ে... |
|