সম্পাদক সমীপেষু...
সি পি এম সংকটে
অমিতাভ গুপ্তের নিবন্ধের (‘এ যাত্রায় কংগ্রেস ছাড়া গতি নেই’, ১৩-১১) সঙ্গে সহমত হওয়া গেল না। সি পি এম ও সি পি আই এখনও স্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেনি যে, ত্রিশঙ্কু লোকসভা গঠিত হলে অথবা ইউ পি এ যদি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সাংসদ সংখ্যা সংগ্রহ করতে না-পারে, তা হলে তাদের অবস্থান কী হবে? সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কনভেনশনে উপস্থিত কোনও কোনও দলের এন ডি এ-তে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। কংগ্রেস ও বি জে পি থেকে সমদূরত্ব রক্ষা করা হবে, সে কথাও দুই কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়নি। তা হলে কি সাম্প্রদায়িকতাকে প্রধান বিপদ চিহ্নিত করে পুনরায় কংগ্রেসকে সমর্থনের দরজা খোলা রাখা হচ্ছে? বামপন্থীরা সংসদীয় রাজনীতির সুবিধাবাদের গণ্ডিতেই কি পথ হারাচ্ছে না? যত লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে ঘরে-বাইরে এই প্রশ্নগুলি আলোচনা হচ্ছে। বামপন্থীদের বৃহৎ অংশ দুই কমিউনিস্ট পার্টি ঐক্যবদ্ধ ভাবে উত্তর দিতে পারছে না।
দুই কমিউনিস্ট পার্টি যদি বাম ঐক্য উপেক্ষা করে সংসদে কয়েকটি আসনের জন্য উদারবাদী আর্থিক নীতির সমর্থকদের সঙ্গে অনৈতিক জোট গড়ে, তা হলে সেটা তৃতীয় বিকল্প হবে না। হবে সমদূরত্ব বজায় রাখার নীতি বিসর্জন দিয়ে সুবিধাবাধী নির্বাচনী জোট। কংগ্রেসের হাত ধরার অর্থ বাম রাজনীতির আত্মহত্যা। প্রশ্ন উঠেছে, কমিউনিস্টরা কি কংগ্রেসের স্বাভাবিক মিত্র?
জাতীয় স্তরে রাজনৈতিক গুরুত্ব পেতে হলে কংগ্রেসের হাত ধরতে হবে? সি পি আই (এম)-এর বিগত তিনটি পার্টি সম্মেলনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে যে সব দলিল ও প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, সেখানে যে দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমুখের কথা বলা হয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার যে ভাবে সেগুলি কার্যকর করেছে তার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। পার্টি সম্মেলনে গৃহীত তত্ত্ব ও প্রয়োগের মধ্যে পার্থক্য রাজনৈতিক মহলের নজর এড়ায়নি। এখান থেকেই যে বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটাই লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রের ক্ষয়িষ্ণু ইউ পি এ সরকারের প্রতি সি পি আই (এম)-এর নরম দৃষ্টিভঙ্গি। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ২৩তম পার্টি সম্মেলনে শাসক কংগ্রেস ও বি জে পি উভয়র সঙ্গেই সমদূরত্ব রক্ষা করার এবং লাগাতার রাজনৈতিক সংগ্রামের কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল।
কিন্তু শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বভারতীয় সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে একশোআশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আগ বাড়িয়ে সমর্থন করতেও সি পি এম দ্বিধা করেনি। কার্যত সাম্প্রদায়িকতাকে প্রধান বিপদ চিহ্নিত করার ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ রাখার রাস্তা খোলা থাকছে। আসলে দুই কমিউনিস্ট পার্টি আদর্শনৈতিক সংকটে আক্রান্ত এবং নির্বাচন সর্বস্বতায় পথ হারানো।
দেশের বামপন্থী আন্দোলনের সামনে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সি পি আই (এম) ও সি পি আই-এর বর্তমান সংকট প্রকৃত অর্থে আদর্শগত ও রাজনৈতিক।
¶ ২ ¶
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের জোটবাঁধা বা একটা বোঝাপড়ায় আসাটা বামপন্থীদের পক্ষে শুধু নয়, দেশবাসীর পক্ষেও মঙ্গলজনক। তবে যে দল পরিচালিত সরকার দেশবাসীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দেশের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে আমেরিকার সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে, দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষের জীবিকার কথা না-ভেবে এফ ডি আই-এ স্বাক্ষর করে, জতীয় সম্পদকে ব্যক্তি-মালিকানায় পর্যবসিত করে, যারা কমনওয়েলথ গেমস, টু-জি স্পেকট্রাম, ‘কোলগেট’ কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে জনগণের হাজার হাজর কোটি টাকা তছরুপ করে, তাদের সঙ্গে বামপন্থীরা ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য গাটছাড়া বাঁধবে কি না, সেটা তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দুর্নীতিতে জর্জরিত, মূল্যবৃদ্ধি রোধে অক্ষম কংগ্রেস কি ভোটের পালে হাওয়া টানার জন্য কতকটা দায়ে পড়ে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করেছে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.