জামা খুলে ওড়ালেই হয় না
...সেঞ্চুরি করে মাঝেমধ্যেই বিরাট কোহলিকে দেখা যায় বেশ গনগনে বডি ল্যাঙ্গোয়েজে। অনেকে বলেন ‘অ্যারোগ্যান্স’। প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও কেউ কেউ বিরাটের মধ্যে বদমেজাজি একটা চরিত্রকে দেখে ফেলেন। আমি কিন্তু এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখি না। মানুষ হিসেবে বিরাট যে রকম পজিটিভ, ক্রিকেটার হিসেবেও ওকে আমার তেমনই মনে হয়। মাঠের বাইরে বিরাটের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার কোনও তুলনা টানতে চাই না। তবে মাঠে স্কোর কার্ড দেখায়, ও একজন রিয়েল ম্যাচ উইনার। ম্যাচ জেতানো এই জন্যই, কারণ ও খেলাটা ফিনিশ করে আসতে জানে। অন্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে আসে না। বিশেষত ওয়ান ডে-তে যে কোনও ম্যাচের মোড় একাই ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বিরাট।
অনেকে আমাদের দু’জনের আক্রমণাত্মক মেজাজের মিল পাচ্ছেন। সাংবাদিকরাও কেউ কেউ বলছেন, দাদা, ও তোমার মতোই অ্যাগ্রেসিভ আর পপুলার হবে। আমি সবিনয়ে একটা কথাই বলতে চাই, লোকে অ্যাগ্রেশন নিয়ে তখনই ধন্য ধন্য করে যদি তার ফলটা পজিটিভ হয়। যদি ম্যাচের শেষে দেখা যায় টিম জিতেছে।
লর্ডসের ব্যালকনিতে আমার জামা ওড়ানো নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়েছে। স্টিভ ওয়-কে টস-এর সময় মাঠে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম। আমিই প্রথম বাঘা বাঘা সব অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখিয়েছি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। এগুলো লোকে মনে রেখেছে, এখনও চর্চা করছে। তার কারণ কিন্তু একটাই। ঘটনাগুলো যে সব ম্যাচে ঘটেছিল, সেই প্রতিটা ম্যাচ আমরা জিতেছিলাম। হেরে গেলে নিশ্চয়ই এগুলো নিয়ে চর্চা হত না! বিরাটের বেলাতেও তাই। মাঠের ভেতরে ওর পারফরম্যান্সই ঠিক করে দেবে ওকে লোকে কী ভাবে দেখবে।
যুবরাজ আর বিরাট দু’জনেই আমার খুব প্রিয়। ওদের কোনও তুলনা আমি টানতে চাই না। তফাত একটাই, যুবরাজ আমার ক্যাপ্টেন্সিতে খেলেছে। বিরাটকে এখন দূর থেকে দেখে শুধু মনে হচ্ছে, ভাল ক্রিকেট খেলার জন্য একজন ক্রিকেটারকে যে মোড়কে নিজেকে প্রেজেন্ট করা উচিত, ও ঠিক সেটাই করছে। আগের তুলনায় এখন অনেক শান্ত। অনেক ধীরস্থির।
সে দিন একজন জিজ্ঞেস করলেন, আইপিএল-য়ে যখন পুণের ক্যাপ্টেন ছিলাম তখন আরসিজি-র বিরাটকে সামলাতে যে গেমপ্ল্যান নিতাম, এখন হলে সেই স্ট্র্যাটেজি কতটা বদলাতাম?
সত্যি বলতে অধিনায়ক থাকার সময় ওর বিরুদ্ধে নানা রকম প্ল্যান করেছি। সেগুলো কাজও করেছে। তবে এখন হলে বিরাটের বিরুদ্ধে ঠিক স্ট্র্যাটেজি বাছাটা মোটেও সহজ হত না। এখন ও প্রায় নিখুঁত ক্রিকেট খেলছে। তাই ওর এগেনস্টে ফিল্ড সেট করতে হলে ব্যাপক অসুবিধে হত। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে বিরাট জীবনের সেরা ফর্মে রয়েছে। আইসিসি বিশ্ব একাদশে ওকে রাখুক না-রাখুক, ২০০৩-য়ে আমার যে ইন্ডিয়ান টিম বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিল, সেই দলে বিরাটকে পেলে অবশ্যই এগারোয় রাখতাম। সন্দেহ নেই এ ব্যাপারে।
অতিরিক্ত আগ্রাসনের যে সমালোচনা শুনি, তাতে আমি একমত নই, সে তো শুরুতেই বলেছি। লোকে একটা কথা ভুলে যায়, একজন একুশ বছরের তরুণ মাঠ বা মাঠের বাইরে যে ভাবে নিজেকে ‘ক্যারি’ করবে, সেটা তিরিশ বছরের যুবকের চেয়ে অবশ্যই আলাদা হবে। আগে বিরাট যে রকম ছিল, তা থেকে নিজেকে অনেক বদলে ফেলেছে। বয়স বাড়লে আরও শান্ত হবে। আরও শিখবে।
শুনছি, অনেকেই বলছেন, ভিভিয়ান রিচার্ডস ও সচিন তেন্ডুলকরের উচ্চতায় পৌঁছনোর ক্ষমতা রয়েছে ওর। আমি একমত। তবে কোনও ক্রিকেটারের ওই মাপের প্রতিভা থাকলেও ভিভ বা সচিনের শুধু অর্ধেক উচ্চতায় তাকে নিয়ে যেতে পারে প্রতিভা। বাকি অর্ধেক অর্জন করতে হয় পরিশ্রম, সংকল্প আর নিয়মিত সাফল্যের মধ্যে দিয়ে। সেই পরীক্ষা এখনও অনেক বাকি। তাই মনে হয় কথা বলার সময়ও আসেনি।
ওয়ান ডে-তে সচিনের ঊনপঞ্চাশটা সেঞ্চুরির রেকর্ডও অনেক-অনেক দূরে। বিরাট সবে সতেরোটা করেছে। তবে আমি বলব, ছেলেটা লড়ুয়ে মানসিকতার। সাফল্যের জন্য খুব জেদি। যে কোনও একটা লক্ষ্যের পিছনে দিনের পর দিন পড়ে থেকে সেটাকে ছোঁয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। এটা মুগ্ধ করার মতো।
আমার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে মাঝে মধ্যেই ওর কথা হয়। ওর ব্যাটিং নিয়ে কিছু চোখে পড়লে, সেটা বিরাটকে বলে দিই। ক্রিকেটের খুব ভাল ছাত্র ও। এমন একজন যে রোজই উন্নতি করতে চায়। তবে গত কয়েক মাসে শুধু আমার নয়, কারও কাছেই বোধহয় কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি ওর। এমনই দুরন্ত ফর্মে রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়বে ভারতের এই তরুণ স্টার। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি পিচে এর আগে বিরাটের বড় ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি আশা করব, সেই অভিজ্ঞতা এ বার কাজে লাগাবে ডারবান বা জোহানেসবার্গে ব্যাট করার সময়। এর পরেও অনেক বড়-বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বিরাট। এই তো সবে শুরু। ভারতীয় ক্রিকেটকে তো এ বার বিরাট, রোহিত, শিখরদের মতো ব্যাটসম্যানদেরই টানতে হবে। ওর কভার ড্রাইভ আর অন ড্রাইভ দেখতে আমার সব থেকে ভাল লাগে। অন সাইডে অবিশ্বাস্য সব স্ট্রোক খেলে বিরাট।
আগামী দিনে অধিনায়ক হওয়ার সব মশলাই মজুত রয়েছে ওর মধ্যে। তবে এখনই ধোনি ছাড়া কারও কথা ভাবতে পারছি না। রেকর্ডই ধোনির হয়ে কথা বলছে। একটা দিকে শুধু ধোনির উন্নতি দরকার বিদেশের মাঠে গিয়ে বেশি করে টেস্ট ম্যাচ জিততে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট ও একদিনের সিরিজ প্রচণ্ড কঠিন পরীক্ষা হলেও, আমার বিশ্বাস ভারত অন্তত কিছু ম্যাচ জিতে ফিরবে। বিরাটের ভূমিকাটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ আফ্রিকা আমার খুব পছন্দের জায়গা। অধিনায়ক হিসেবে এখানে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলাম। বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছি ওখানে। জীবনের সব চেয়ে বড় কামব্যাক সিরিজও সেই দক্ষিণ আফ্রিকাতে। এখন বিরাটের সাফল্য দেখতে চাই ‘প্রোটিয়া’দের বিরুদ্ধে। ওর নিজেকে বদলানোর কোনও দরকার নেই। বাইশ গজে তো বটেই, মাঠের বাইরেও নিজের মতোই থাকুক বিরাট কোহলি...

টুইটস
বিরাট কোহলি... কী অসাধারণ ইনিংস! আর কী অ্যাটিটিউড... এটাই ভারতের নতুন প্রজন্ম। অ্যাগ্রেসিভ আর ফোকাসড...
অমিতাভ বচ্চন @SrBachchan

এক ভারতীয় সুপারস্টারের জন্ম! টেক আ বাও, বিরাট কোহলি, নাকি বলব ‘চিকো’ কোহলি...
কেভিন পিটারসেন @KP24



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.